ঢাকা ০৭:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার বিমান চলাচলে মারাত্মক প্রভাব

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৬:২৬:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
  • / 392
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

চলমান ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচলে। এর ফলে বিভিন্ন বাণিজ্যিক বিমান সংস্থাকে রুট পরিবর্তন করতে হচ্ছে, এমনকি বাতিল করা হচ্ছে বহু ফ্লাইট।

ভারত দাবি করেছে, তারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে নয়টি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে অভিযান চালিয়েছে। পাল্টা বক্তব্যে পাকিস্তান বলছে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। গত মাসে ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়। ওই হামলার পেছনে পাকিস্তানের মদদ রয়েছে বলে ভারতের অভিযোগ, যদিও পাকিস্তান তা অস্বীকার করেছে। এই ঘটনার পর থেকেই পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়।

একাধিক এয়ারলাইনস জানিয়েছে, ভারতের সামরিক অভিযানের ফলে অঞ্চলটিতে তাদের অনেক ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন বা বাতিল করতে হয়েছে। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্যমতে, পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহারকারী অন্তত ডজনখানেক ফ্লাইট বাতিল বা যাত্রাপথ পরিবর্তন করেছে। উত্তর ভারতের একাধিক বিমানবন্দরের কার্যক্রমও সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।

পেহেলগামের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভারত গত মাসেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়, যার মধ্যে রয়েছে সিন্ধু পানি চুক্তি বাতিল। জবাবে পাকিস্তান ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ভারতও পাকিস্তানের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়।

ফ্লাইটরাডার২৪ জানায়, ভারতীয় এয়ারলাইনসগুলো সপ্তাহে প্রায় ৪ হাজার ফ্লাইট পরিচালনা করে, যার মধ্যে ৬১টি আন্তর্জাতিক গন্তব্য রয়েছে। এই ফ্লাইটগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক যাত্রায় ব্যবহৃত প্রায় ২০ শতাংশ ফ্লাইট পাকিস্তানের আকাশসীমা অতিক্রম করে। পূর্বগামী ফ্লাইটের ক্ষেত্রে এ নির্ভরতা আরও বেশি—৩০ শতাংশ পর্যন্ত, বিশেষ করে দিল্লি, অমৃতসর ও লক্ষ্ণৌর মতো উত্তর ভারতের শহরগুলো থেকে।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের ৯৯ শতাংশ ফ্লাইটে ভারতের আকাশসীমার প্রয়োজন পড়ে না। তাই ভারতের নিষেধাজ্ঞায় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের (পিআইএ) মাত্র ৮টি ফ্লাইট—যেগুলো কুয়ালালামপুর ও বেইজিং রুটে পরিচালিত হয়—প্রভাবিত হচ্ছে।

তবে ভারতের সব এয়ারলাইনস সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। কিছু ফ্লাইট কেবল পাকিস্তানের আকাশসীমার একটি ছোট অংশ ব্যবহার করে। যেমন, দিল্লি-নাইরোবি ও লক্ষ্ণৌ-মাস্কাট রুট।

ফ্লাইটের সময় বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে

রয়টার্সের একটি বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, ২৪ এপ্রিলের পর থেকে দিল্লি, অমৃতসর ও লক্ষ্ণৌ থেকে প্রতিদিন যাতায়াতকারী ৭৫টি ফ্লাইটের সময় গড়ে ৪৭ মিনিট বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, দিল্লি থেকে দোহা, জেদ্দা ও দুবাই ফ্লাইটের সময় কিছুটা বাড়লেও, সানফ্রান্সিসকো কিংবা ভ্যাঙ্কুভার রুটে তা বেড়েছে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত।

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দিল্লি থেকে মধ্য এশিয়াগামী ফ্লাইটগুলো। এগুলোকে এখন পাকিস্তান ঘুরে ভারতে প্রবেশ করতে হচ্ছে।

বিকল্প রুট না থাকায় ভারতের শীর্ষস্থানীয় এয়ারলাইন ইন্ডিগো গত ১০ দিন ধরে তাসখন্দ ও আলমাতি রুটে কোনো ফ্লাইট চালাতে পারেনি। ঘুরপথে আমেরিকা ও কানাডা যাওয়ায় যাত্রার সময় বেড়েছে, ফলে অতিরিক্ত উড়োজাহাজ ও জ্বালানি প্রয়োজন পড়ছে। কিছু ক্ষেত্রে ইউরোপে যাত্রাবিরতিতে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় লাগছে এবং যাত্রীদের সেই সময় বিমানের মধ্যেই থাকতে হচ্ছে।

দীর্ঘ যাত্রা ও স্টপওভারে অতিরিক্ত সময় মানে বাড়তি জ্বালানি ব্যয় এবং ক্রু ও যাত্রীদের জন্য দীর্ঘ সময়ের পরিশ্রম। এ কারণে ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ রুটের জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলট ও ক্রুদের কর্মঘণ্টা সাময়িকভাবে বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে। যদি আগামী এক বছর পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ থাকে, তাহলে শুধুমাত্র এয়ার ইন্ডিয়ারই অতিরিক্ত ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় বিমান সংস্থা পিআইএর ইসলামাবাদ ও লাহোর থেকে কুয়ালালামপুরগামী দুটি ফ্লাইট ভারতের আকাশসীমা নিষেধাজ্ঞার ফলে প্রভাবিত হয়েছে।

ভারতের হামলার আগেই ইউরোপের কিছু এয়ারলাইনস দীর্ঘপথের ফ্লাইটে পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলতে শুরু করেছিল। ফ্লাইটরাডারের তথ্যমতে, এসব এয়ারলাইনসের মধ্যে রয়েছে এয়ার ফ্রান্স, লুফথানজা, সুইস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস এবং ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ।

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যেই এয়ার ফ্রান্স ঘোষণা করেছে, তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার বন্ধ রাখবে। একই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে লুফথানজাও।

আকাশসীমা নিষেধাজ্ঞার আরেক প্রভাব

এই নিষেধাজ্ঞার আরেকটি আর্থিক প্রভাবও রয়েছে। পাকিস্তান বিমান চলাচলের জন্য ওভারফ্লাইট ফি বাবদ যে উল্লেখযোগ্য অর্থ আয় করত, তা থেকেও বঞ্চিত হতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার বিমান চলাচলে মারাত্মক প্রভাব

আপডেট সময় : ০৬:২৬:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫

চলমান ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচলে। এর ফলে বিভিন্ন বাণিজ্যিক বিমান সংস্থাকে রুট পরিবর্তন করতে হচ্ছে, এমনকি বাতিল করা হচ্ছে বহু ফ্লাইট।

ভারত দাবি করেছে, তারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে নয়টি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে অভিযান চালিয়েছে। পাল্টা বক্তব্যে পাকিস্তান বলছে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। গত মাসে ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়। ওই হামলার পেছনে পাকিস্তানের মদদ রয়েছে বলে ভারতের অভিযোগ, যদিও পাকিস্তান তা অস্বীকার করেছে। এই ঘটনার পর থেকেই পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়।

একাধিক এয়ারলাইনস জানিয়েছে, ভারতের সামরিক অভিযানের ফলে অঞ্চলটিতে তাদের অনেক ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন বা বাতিল করতে হয়েছে। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্যমতে, পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহারকারী অন্তত ডজনখানেক ফ্লাইট বাতিল বা যাত্রাপথ পরিবর্তন করেছে। উত্তর ভারতের একাধিক বিমানবন্দরের কার্যক্রমও সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।

পেহেলগামের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভারত গত মাসেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়, যার মধ্যে রয়েছে সিন্ধু পানি চুক্তি বাতিল। জবাবে পাকিস্তান ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ভারতও পাকিস্তানের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়।

ফ্লাইটরাডার২৪ জানায়, ভারতীয় এয়ারলাইনসগুলো সপ্তাহে প্রায় ৪ হাজার ফ্লাইট পরিচালনা করে, যার মধ্যে ৬১টি আন্তর্জাতিক গন্তব্য রয়েছে। এই ফ্লাইটগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক যাত্রায় ব্যবহৃত প্রায় ২০ শতাংশ ফ্লাইট পাকিস্তানের আকাশসীমা অতিক্রম করে। পূর্বগামী ফ্লাইটের ক্ষেত্রে এ নির্ভরতা আরও বেশি—৩০ শতাংশ পর্যন্ত, বিশেষ করে দিল্লি, অমৃতসর ও লক্ষ্ণৌর মতো উত্তর ভারতের শহরগুলো থেকে।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের ৯৯ শতাংশ ফ্লাইটে ভারতের আকাশসীমার প্রয়োজন পড়ে না। তাই ভারতের নিষেধাজ্ঞায় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের (পিআইএ) মাত্র ৮টি ফ্লাইট—যেগুলো কুয়ালালামপুর ও বেইজিং রুটে পরিচালিত হয়—প্রভাবিত হচ্ছে।

তবে ভারতের সব এয়ারলাইনস সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। কিছু ফ্লাইট কেবল পাকিস্তানের আকাশসীমার একটি ছোট অংশ ব্যবহার করে। যেমন, দিল্লি-নাইরোবি ও লক্ষ্ণৌ-মাস্কাট রুট।

ফ্লাইটের সময় বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে

রয়টার্সের একটি বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, ২৪ এপ্রিলের পর থেকে দিল্লি, অমৃতসর ও লক্ষ্ণৌ থেকে প্রতিদিন যাতায়াতকারী ৭৫টি ফ্লাইটের সময় গড়ে ৪৭ মিনিট বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, দিল্লি থেকে দোহা, জেদ্দা ও দুবাই ফ্লাইটের সময় কিছুটা বাড়লেও, সানফ্রান্সিসকো কিংবা ভ্যাঙ্কুভার রুটে তা বেড়েছে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত।

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দিল্লি থেকে মধ্য এশিয়াগামী ফ্লাইটগুলো। এগুলোকে এখন পাকিস্তান ঘুরে ভারতে প্রবেশ করতে হচ্ছে।

বিকল্প রুট না থাকায় ভারতের শীর্ষস্থানীয় এয়ারলাইন ইন্ডিগো গত ১০ দিন ধরে তাসখন্দ ও আলমাতি রুটে কোনো ফ্লাইট চালাতে পারেনি। ঘুরপথে আমেরিকা ও কানাডা যাওয়ায় যাত্রার সময় বেড়েছে, ফলে অতিরিক্ত উড়োজাহাজ ও জ্বালানি প্রয়োজন পড়ছে। কিছু ক্ষেত্রে ইউরোপে যাত্রাবিরতিতে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় লাগছে এবং যাত্রীদের সেই সময় বিমানের মধ্যেই থাকতে হচ্ছে।

দীর্ঘ যাত্রা ও স্টপওভারে অতিরিক্ত সময় মানে বাড়তি জ্বালানি ব্যয় এবং ক্রু ও যাত্রীদের জন্য দীর্ঘ সময়ের পরিশ্রম। এ কারণে ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ রুটের জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলট ও ক্রুদের কর্মঘণ্টা সাময়িকভাবে বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে। যদি আগামী এক বছর পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ থাকে, তাহলে শুধুমাত্র এয়ার ইন্ডিয়ারই অতিরিক্ত ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় বিমান সংস্থা পিআইএর ইসলামাবাদ ও লাহোর থেকে কুয়ালালামপুরগামী দুটি ফ্লাইট ভারতের আকাশসীমা নিষেধাজ্ঞার ফলে প্রভাবিত হয়েছে।

ভারতের হামলার আগেই ইউরোপের কিছু এয়ারলাইনস দীর্ঘপথের ফ্লাইটে পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলতে শুরু করেছিল। ফ্লাইটরাডারের তথ্যমতে, এসব এয়ারলাইনসের মধ্যে রয়েছে এয়ার ফ্রান্স, লুফথানজা, সুইস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস এবং ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ।

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যেই এয়ার ফ্রান্স ঘোষণা করেছে, তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার বন্ধ রাখবে। একই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে লুফথানজাও।

আকাশসীমা নিষেধাজ্ঞার আরেক প্রভাব

এই নিষেধাজ্ঞার আরেকটি আর্থিক প্রভাবও রয়েছে। পাকিস্তান বিমান চলাচলের জন্য ওভারফ্লাইট ফি বাবদ যে উল্লেখযোগ্য অর্থ আয় করত, তা থেকেও বঞ্চিত হতে পারে।