ঢাকা ০৮:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী! কাতারের রাজপরিবারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যেসব অত্যাধুনিক সুবিধা রয়েছে কাকরদিয়া–তেরাদল–আলিপুর এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকের আত্নপ্রকাশ

ভারতের সঙ্গে সামরিক সরঞ্জাম চুক্তি বাতিল করল বাংলাদেশ

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৮:১৫:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
  • / 312
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

৫০ কোটি ডলারের লাইন অফ ক্রেডিটের আওতায় কলকাতাভিত্তিক কোম্পানি থেকে টাগবোট কেনার কথা ছিল বাংলাদেশের

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে ভারতের একটি কোম্পানির সঙ্গে ২ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সংক্রান্ত একটি চুক্তি বাতিল করেছে বাংলাদেশ। শুক্রবার (২২ মে ২০২৫) টাইমস অব ইন্ডিয়া-এর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের নৌবাহিনীর জন্য ৮০০ টন ধারণক্ষমতার একটি সমুদ্রগামী টাগবোট নির্মাণের কথা ছিল কলকাতা-ভিত্তিক প্রতিরক্ষা জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স (জিআরএসই)-এর।

গত বছরের জুলাইয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ভারত সরকারের বাংলাদেশকে প্রতিরক্ষা খাতে সহায়তা দিতে ঘোষিত ৫০ কোটি ডলারের লাইন অফ ক্রেডিটের আওতায় এটিই ছিল প্রথম বড় প্রকল্প।

এ সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ভারত বাংলাদেশি পোশাক আমদানিতে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে শুধু কলকাতা ও নাভা শেভা বন্দর দিয়ে এসব পণ্য ভারতে প্রবেশ করতে পারবে। এর ফলে স্থলবন্দরনির্ভর ৯৩ শতাংশ রপ্তানি কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ৭০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক ভারতে রপ্তানি করে।

এর আগে, গত এপ্রিল মাসে ভারত বাংলাদেশি পণ্যের তৃতীয় দেশে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে দেয়। জবাবে বাংলাদেশ ১৩ এপ্রিল থেকে ভারতীয় সুতা স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি স্থগিত করে।

উল্লেখযোগ্য যে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল। এ সময় ভারতের বাংলাদেশে রপ্তানি দাঁড়ায় ১১.৬ বিলিয়ন ডলার এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতের আমদানি ছিল ১.৮ বিলিয়ন ডলার।

চলতি বছর চীন সফরে গিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান মোহাম্মদ ইউনূস ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন এবং সাগরপথে তাদের একমাত্র প্রবেশদ্বার বাংলাদেশ। তিনি ইঙ্গিত দেন, এই ভৌগোলিক সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। তার এই মন্তব্য ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে।

এ প্রসঙ্গে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা একে ‘অত্যন্ত আপত্তিকর’ এবং ‘ভারতের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি’ বলে মন্তব্য করেন।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে লিখেছে, নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক যখন টানাপোড়েনের মধ্যে, তখন চীনকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চিত্রায়িত করায় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠছে।

গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টা ও ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ভারতবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন বলে দাবি করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম। এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গও এসেছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি ভারতে আশ্রয় নেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের বর্তমান সরকার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও হত্যাসহ একাধিক অভিযোগে মামলা দায়ের করে এবং তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করার জন্য ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানায়। বাংলাদেশ সরকার অভিযোগ করেছে, দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনা দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো ‘মিথ্যা ও অপতথ্য’ প্রচার করছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে ভারত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে।

উভয় দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি, সীমান্ত সমস্যা ও শেখ হাসিনার বক্তব্যকে ঘিরে কূটনৈতিক তলবের ঘটনাও ঘটেছে।

গত ৪ এপ্রিল ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান মোহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হয়। অনেকেই ধারণা করেছিলেন, এই বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্কের বরফ গলতে পারে। কিন্তু পরবর্তী পরিস্থিতি বলছে, সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ভারতের সঙ্গে সামরিক সরঞ্জাম চুক্তি বাতিল করল বাংলাদেশ

আপডেট সময় : ০৮:১৫:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

৫০ কোটি ডলারের লাইন অফ ক্রেডিটের আওতায় কলকাতাভিত্তিক কোম্পানি থেকে টাগবোট কেনার কথা ছিল বাংলাদেশের

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে ভারতের একটি কোম্পানির সঙ্গে ২ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সংক্রান্ত একটি চুক্তি বাতিল করেছে বাংলাদেশ। শুক্রবার (২২ মে ২০২৫) টাইমস অব ইন্ডিয়া-এর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের নৌবাহিনীর জন্য ৮০০ টন ধারণক্ষমতার একটি সমুদ্রগামী টাগবোট নির্মাণের কথা ছিল কলকাতা-ভিত্তিক প্রতিরক্ষা জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স (জিআরএসই)-এর।

গত বছরের জুলাইয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ভারত সরকারের বাংলাদেশকে প্রতিরক্ষা খাতে সহায়তা দিতে ঘোষিত ৫০ কোটি ডলারের লাইন অফ ক্রেডিটের আওতায় এটিই ছিল প্রথম বড় প্রকল্প।

এ সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ভারত বাংলাদেশি পোশাক আমদানিতে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে শুধু কলকাতা ও নাভা শেভা বন্দর দিয়ে এসব পণ্য ভারতে প্রবেশ করতে পারবে। এর ফলে স্থলবন্দরনির্ভর ৯৩ শতাংশ রপ্তানি কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ৭০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক ভারতে রপ্তানি করে।

এর আগে, গত এপ্রিল মাসে ভারত বাংলাদেশি পণ্যের তৃতীয় দেশে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে দেয়। জবাবে বাংলাদেশ ১৩ এপ্রিল থেকে ভারতীয় সুতা স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি স্থগিত করে।

উল্লেখযোগ্য যে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল। এ সময় ভারতের বাংলাদেশে রপ্তানি দাঁড়ায় ১১.৬ বিলিয়ন ডলার এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতের আমদানি ছিল ১.৮ বিলিয়ন ডলার।

চলতি বছর চীন সফরে গিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান মোহাম্মদ ইউনূস ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন এবং সাগরপথে তাদের একমাত্র প্রবেশদ্বার বাংলাদেশ। তিনি ইঙ্গিত দেন, এই ভৌগোলিক সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। তার এই মন্তব্য ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে।

এ প্রসঙ্গে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা একে ‘অত্যন্ত আপত্তিকর’ এবং ‘ভারতের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি’ বলে মন্তব্য করেন।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে লিখেছে, নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক যখন টানাপোড়েনের মধ্যে, তখন চীনকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চিত্রায়িত করায় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠছে।

গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টা ও ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ভারতবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন বলে দাবি করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম। এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গও এসেছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি ভারতে আশ্রয় নেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের বর্তমান সরকার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও হত্যাসহ একাধিক অভিযোগে মামলা দায়ের করে এবং তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করার জন্য ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানায়। বাংলাদেশ সরকার অভিযোগ করেছে, দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনা দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো ‘মিথ্যা ও অপতথ্য’ প্রচার করছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে ভারত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে।

উভয় দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি, সীমান্ত সমস্যা ও শেখ হাসিনার বক্তব্যকে ঘিরে কূটনৈতিক তলবের ঘটনাও ঘটেছে।

গত ৪ এপ্রিল ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান মোহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হয়। অনেকেই ধারণা করেছিলেন, এই বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্কের বরফ গলতে পারে। কিন্তু পরবর্তী পরিস্থিতি বলছে, সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।