ঢাকা ০৮:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী! কাতারের রাজপরিবারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যেসব অত্যাধুনিক সুবিধা রয়েছে কাকরদিয়া–তেরাদল–আলিপুর এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকের আত্নপ্রকাশ

ভারতের নিষেধাজ্ঞায় বেনাপোলে আটকা শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক, বাংলাদেশ জানেই না স্থগিত সিদ্ধান্তের কথা!

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৩:২৫:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
  • / 237
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভারত স্থলপথে ছয়টি পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারির পর যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে আটকে গেছে শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পাশাপাশি, বিকল্প পথে—নদী বা আকাশপথে—রপ্তানি করতে হলে সময় ও খরচ উভয়ই বেড়ে যাবে কয়েক গুণ।

রোববার (১৮ মে ২০২৫) থেকে এসব পণ্যের রপ্তানি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ভারতে সুতা, তৈরি পোশাক, ফলের স্বাদযুক্ত ও কার্বোনেটেড পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক ও পিভিসি সামগ্রী এবং কাঠ বা প্লাস্টিকের আসবাবপত্র পাঠানো যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ-ভারত চেম্বার অব কমার্সের সাবেক পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, শনিবার ভারতের দিল্লিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আইটিসি অ্যাক্ট ২০২২-এর আওতায় ফরেন ট্রেড পলিসি (এফটিপি) অনুযায়ী এই ছয়টি পণ্যের স্থলপথে রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তিনি বলেন, “বেনাপোল দিয়ে গার্মেন্টস পণ্যের চালান আর যাবে না। তবে সমুদ্র ও আকাশপথে রপ্তানির সুযোগ থাকছে, যদিও এতে খরচ ও সময় দুটোই বাড়বে।” ব্যবসায়ীরা আগের এলসির আওতায় থাকা পণ্য যেন রপ্তানি করতে পারেন, সেই সুযোগ চাচ্ছেন।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, “নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব পণ্য অন্য পথে রপ্তানিতে কয়েকগুণ খরচ বাড়বে। পূর্ববর্তী এলসির পণ্যগুলো বেনাপোল দিয়ে রপ্তানি করার বিষয়ে ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।”

তিনি আরও জানান, “বেনাপোল দিয়ে আগে দিনে দিনে পণ্য পাঠানো যেত। এখন নদীপথে পাঠাতে হলে ১২ থেকে ১৫ দিন সময় লাগবে। এতে সময় ও খরচ বাড়ার পাশাপাশি ডেমারেজও গুনতে হবে ব্যবসায়ীদের।”

আমদানি-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি রউফ হোসেন বলেন, “এই মুহূর্তে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্পষ্ট হবে।”

বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানে না

ভারত স্থলবন্দর ব্যবহার করে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানিনি। জানানো হলে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

তিনি আরও বলেন, “বাণিজ্যে দুই দেশের স্বার্থ জড়িত। ভোক্তা ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, যার প্রভাব দুই দিকেই পড়বে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখে পড়বেন।”

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের প্রসঙ্গ টেনে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “সেখানে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েনি। বরং নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর দিকেই আমরা মনোযোগ দিচ্ছি। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে সরকার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।”

তিনি আরও বলেন, “ভারত স্থলবন্দর ব্যবহার স্থগিত করেছে—এটা এখনো আমরা অফিসিয়ালি জানি না। যদি জানানো হয়, তাহলে দুই দেশ মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বর্তমানে বিষয়টি বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।”

এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে জানা যায় নিষেধাজ্ঞার তথ্য

শনিবার রাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি প্রথম প্রকাশ পায়। প্রতিবেদনে ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বৈদেশিক বাণিজ্য দপ্তর (ডিজিএফটি) জারিকৃত একটি প্রজ্ঞাপনের বরাত দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে তৈরি পোশাক, পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য (যেমন: বেকারি, স্ন্যাকস, চিপস ও কনফেকশনারি), প্লাস্টিক ও পিভিসি সামগ্রী, রং, কেমিক্যাল, তুলা, সুতা এবং কাঠের আসবাবপত্র আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তবে মাছ, ভোজ্যতেল, এলপিজি ও ভাঙা পাথরের মতো কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, তৈরি পোশাক কেবল ভারতের নব সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে। তবে নিষেধাজ্ঞাটি ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটানে গমনকারী বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও মিজোরামের বিভিন্ন স্থল শুল্ক স্টেশন ও সমন্বিত চেকপোস্ট (আইসিপি) এবং পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ি এলসিএস। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ভারতের নিষেধাজ্ঞায় বেনাপোলে আটকা শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক, বাংলাদেশ জানেই না স্থগিত সিদ্ধান্তের কথা!

আপডেট সময় : ০৩:২৫:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫

ভারত স্থলপথে ছয়টি পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারির পর যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে আটকে গেছে শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পাশাপাশি, বিকল্প পথে—নদী বা আকাশপথে—রপ্তানি করতে হলে সময় ও খরচ উভয়ই বেড়ে যাবে কয়েক গুণ।

রোববার (১৮ মে ২০২৫) থেকে এসব পণ্যের রপ্তানি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ভারতে সুতা, তৈরি পোশাক, ফলের স্বাদযুক্ত ও কার্বোনেটেড পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক ও পিভিসি সামগ্রী এবং কাঠ বা প্লাস্টিকের আসবাবপত্র পাঠানো যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ-ভারত চেম্বার অব কমার্সের সাবেক পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, শনিবার ভারতের দিল্লিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আইটিসি অ্যাক্ট ২০২২-এর আওতায় ফরেন ট্রেড পলিসি (এফটিপি) অনুযায়ী এই ছয়টি পণ্যের স্থলপথে রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তিনি বলেন, “বেনাপোল দিয়ে গার্মেন্টস পণ্যের চালান আর যাবে না। তবে সমুদ্র ও আকাশপথে রপ্তানির সুযোগ থাকছে, যদিও এতে খরচ ও সময় দুটোই বাড়বে।” ব্যবসায়ীরা আগের এলসির আওতায় থাকা পণ্য যেন রপ্তানি করতে পারেন, সেই সুযোগ চাচ্ছেন।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, “নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব পণ্য অন্য পথে রপ্তানিতে কয়েকগুণ খরচ বাড়বে। পূর্ববর্তী এলসির পণ্যগুলো বেনাপোল দিয়ে রপ্তানি করার বিষয়ে ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।”

তিনি আরও জানান, “বেনাপোল দিয়ে আগে দিনে দিনে পণ্য পাঠানো যেত। এখন নদীপথে পাঠাতে হলে ১২ থেকে ১৫ দিন সময় লাগবে। এতে সময় ও খরচ বাড়ার পাশাপাশি ডেমারেজও গুনতে হবে ব্যবসায়ীদের।”

আমদানি-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি রউফ হোসেন বলেন, “এই মুহূর্তে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্পষ্ট হবে।”

বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানে না

ভারত স্থলবন্দর ব্যবহার করে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানিনি। জানানো হলে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

তিনি আরও বলেন, “বাণিজ্যে দুই দেশের স্বার্থ জড়িত। ভোক্তা ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, যার প্রভাব দুই দিকেই পড়বে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখে পড়বেন।”

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের প্রসঙ্গ টেনে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “সেখানে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েনি। বরং নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর দিকেই আমরা মনোযোগ দিচ্ছি। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে সরকার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।”

তিনি আরও বলেন, “ভারত স্থলবন্দর ব্যবহার স্থগিত করেছে—এটা এখনো আমরা অফিসিয়ালি জানি না। যদি জানানো হয়, তাহলে দুই দেশ মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বর্তমানে বিষয়টি বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।”

এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে জানা যায় নিষেধাজ্ঞার তথ্য

শনিবার রাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি প্রথম প্রকাশ পায়। প্রতিবেদনে ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বৈদেশিক বাণিজ্য দপ্তর (ডিজিএফটি) জারিকৃত একটি প্রজ্ঞাপনের বরাত দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে তৈরি পোশাক, পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য (যেমন: বেকারি, স্ন্যাকস, চিপস ও কনফেকশনারি), প্লাস্টিক ও পিভিসি সামগ্রী, রং, কেমিক্যাল, তুলা, সুতা এবং কাঠের আসবাবপত্র আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তবে মাছ, ভোজ্যতেল, এলপিজি ও ভাঙা পাথরের মতো কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, তৈরি পোশাক কেবল ভারতের নব সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে। তবে নিষেধাজ্ঞাটি ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটানে গমনকারী বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও মিজোরামের বিভিন্ন স্থল শুল্ক স্টেশন ও সমন্বিত চেকপোস্ট (আইসিপি) এবং পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ি এলসিএস। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে।