ঢাকা ০৮:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী! কাতারের রাজপরিবারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যেসব অত্যাধুনিক সুবিধা রয়েছে কাকরদিয়া–তেরাদল–আলিপুর এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকের আত্নপ্রকাশ

বাংলার গান গাওয়া কণ্ঠশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় আর নেই

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৫:১২:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / 324
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

‘বাংলার মায়াভরা পথে’ হাঁটা থামলো জনপ্রিয় গণসংগীত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের। যিনি দুই বাংলার শ্রোতাদের দরাজ কণ্ঠে শুনিয়েছিলেন সেই অমৃতগান- ‘আমি বাংলায় গান গাই’। একই গানে বলেছিলেন, ‘আমি এই বাংলার মায়াভরা পথে হেঁটেছি এতোটা দূর…’। শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) সকালে ৮২ বছর বয়সে তিনি অনন্তের পথে যাত্রা করেন।

অন্ত্রের অস্ত্রোপচারের পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন শিল্পী। গত সোমবার রাতে তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হওয়ায় আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে পশ্চিমবঙ্গের দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন ও আনন্দবাজার।

১৯৪২ সালের ২৫ জুন অবিভক্ত বাংলার বরিশালে নানাবাড়িতে জন্ম প্রতুলের। বাবা প্রভাতচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক। মা বাণী মুখোপাধ্যায় ও প্রতুলকে নিয়ে দেশভাগের পরে পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। থাকতে শুরু করেন চুঁচুড়ায়।

অল্প বয়স থেকেই কবিতায় সুর দিতেন প্রতুল। কবি মঙ্গলচরণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি ধান কাটার গান গাই’ কবিতা দিয়ে শুরু। নিজেও লিখতেন। অথচ প্রথাগত কোনও সংগীতশিক্ষা তিনি নেননি। নিজের হৃদয় নিঃসৃত আবেগকেই সুর ও কথার মেলবন্ধনে বেঁধে ফেলতে শিখেছিলেন। আমৃত্যু প্রতুল নিজের হৃদয়ে জ্বালিয়ে রেখেছিলেন গানের প্রদীপ। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও চিকিৎসকদের ‘আমি বাংলায় গান গাই’ শোনাতেন তিনি। তবে এই একটিই গান নয়, প্রতুল সারা জীবন ধরে অসংখ্য গান সৃষ্টি করে গিয়েছেন। বাংলা আধুনিক গান থেকে জাপানি গান, আবার হিন্দি ছবির গান থেকেও উপাদান সংগ্রহ করেছেন। সৃষ্টি করেছেন একের পর এক গান।

জীবনের প্রথম অ্যালবাম ‘পাথরে পাথরে নাচে আগুন’ (১৯৮৮)। তবে সেটি একক অ্যালবাম নয়। অন্য শিল্পীদের সঙ্গে মিলে কাজ করতে হয়েছিল। এরপর ১৯৯৪ সালে ‘যেতে হবে’ প্রতুলের প্রথম একক অ্যালবাম। শেষ অ্যালবাম ‘ভোর’ (২০২২)। সেখানে সংকলিত হয়েছিল শিল্পীর অপ্রকাশিত গানগুলি।

তুমুল জনপ্রিয়  ‘আমি বাংলায় গান গাই’ ছাড়াও ‘আলু বেচো’, ‘ছোকরা চাঁদ’, ‘তোমার কি কোনও তুলনা হয়’, ‘সেই মেয়েটি’, ‘ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ’-এর মতো গানও শ্রোতার মন জিতেছে বারবার। তবু কিছু সৃষ্টি তার স্রষ্টার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে মিশে যায়। প্রতুলের জীবনের ‘ম্যাগনাম ওপাস’ এই গান। বাংলা ও বাঙালির আত্মা যেন ওই গানে জলছাপের মতোই থেকে গিয়েছে। নিজের গানে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার কখনোই পছন্দ করেননি। কিন্তু অন্যান্য গানের মতোই ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গাওয়ার সময় তার কণ্ঠনিঃসৃত জাদুতে গানের কথার সুরেলা চলন মগ্ন করে রাখে শ্রোতাকে। যতদিন বাঙালি শ্রোতা থাকবে, এই পৃথিবীতে বেজে চলবে গানটি। থেকে যাবে সেই গানের অমোঘ অনুরণন। থাকবেন প্রতুলও; বলেছেন তার ভক্ত অনুরাগীরা।

এই একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরিতেও মনে পড়বে এ অমর শিল্পীকে। যিনি পরম মমতায় গেয়েছেন ‘প্রভাত ফেরির মিছিল যাবে, ছড়াও ফুলের বন্যা’

নিউজটি শেয়ার করুন

বাংলার গান গাওয়া কণ্ঠশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় আর নেই

আপডেট সময় : ০৫:১২:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

‘বাংলার মায়াভরা পথে’ হাঁটা থামলো জনপ্রিয় গণসংগীত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের। যিনি দুই বাংলার শ্রোতাদের দরাজ কণ্ঠে শুনিয়েছিলেন সেই অমৃতগান- ‘আমি বাংলায় গান গাই’। একই গানে বলেছিলেন, ‘আমি এই বাংলার মায়াভরা পথে হেঁটেছি এতোটা দূর…’। শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) সকালে ৮২ বছর বয়সে তিনি অনন্তের পথে যাত্রা করেন।

অন্ত্রের অস্ত্রোপচারের পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন শিল্পী। গত সোমবার রাতে তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হওয়ায় আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে পশ্চিমবঙ্গের দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন ও আনন্দবাজার।

১৯৪২ সালের ২৫ জুন অবিভক্ত বাংলার বরিশালে নানাবাড়িতে জন্ম প্রতুলের। বাবা প্রভাতচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক। মা বাণী মুখোপাধ্যায় ও প্রতুলকে নিয়ে দেশভাগের পরে পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। থাকতে শুরু করেন চুঁচুড়ায়।

অল্প বয়স থেকেই কবিতায় সুর দিতেন প্রতুল। কবি মঙ্গলচরণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি ধান কাটার গান গাই’ কবিতা দিয়ে শুরু। নিজেও লিখতেন। অথচ প্রথাগত কোনও সংগীতশিক্ষা তিনি নেননি। নিজের হৃদয় নিঃসৃত আবেগকেই সুর ও কথার মেলবন্ধনে বেঁধে ফেলতে শিখেছিলেন। আমৃত্যু প্রতুল নিজের হৃদয়ে জ্বালিয়ে রেখেছিলেন গানের প্রদীপ। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও চিকিৎসকদের ‘আমি বাংলায় গান গাই’ শোনাতেন তিনি। তবে এই একটিই গান নয়, প্রতুল সারা জীবন ধরে অসংখ্য গান সৃষ্টি করে গিয়েছেন। বাংলা আধুনিক গান থেকে জাপানি গান, আবার হিন্দি ছবির গান থেকেও উপাদান সংগ্রহ করেছেন। সৃষ্টি করেছেন একের পর এক গান।

জীবনের প্রথম অ্যালবাম ‘পাথরে পাথরে নাচে আগুন’ (১৯৮৮)। তবে সেটি একক অ্যালবাম নয়। অন্য শিল্পীদের সঙ্গে মিলে কাজ করতে হয়েছিল। এরপর ১৯৯৪ সালে ‘যেতে হবে’ প্রতুলের প্রথম একক অ্যালবাম। শেষ অ্যালবাম ‘ভোর’ (২০২২)। সেখানে সংকলিত হয়েছিল শিল্পীর অপ্রকাশিত গানগুলি।

তুমুল জনপ্রিয়  ‘আমি বাংলায় গান গাই’ ছাড়াও ‘আলু বেচো’, ‘ছোকরা চাঁদ’, ‘তোমার কি কোনও তুলনা হয়’, ‘সেই মেয়েটি’, ‘ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ’-এর মতো গানও শ্রোতার মন জিতেছে বারবার। তবু কিছু সৃষ্টি তার স্রষ্টার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে মিশে যায়। প্রতুলের জীবনের ‘ম্যাগনাম ওপাস’ এই গান। বাংলা ও বাঙালির আত্মা যেন ওই গানে জলছাপের মতোই থেকে গিয়েছে। নিজের গানে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার কখনোই পছন্দ করেননি। কিন্তু অন্যান্য গানের মতোই ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গাওয়ার সময় তার কণ্ঠনিঃসৃত জাদুতে গানের কথার সুরেলা চলন মগ্ন করে রাখে শ্রোতাকে। যতদিন বাঙালি শ্রোতা থাকবে, এই পৃথিবীতে বেজে চলবে গানটি। থেকে যাবে সেই গানের অমোঘ অনুরণন। থাকবেন প্রতুলও; বলেছেন তার ভক্ত অনুরাগীরা।

এই একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরিতেও মনে পড়বে এ অমর শিল্পীকে। যিনি পরম মমতায় গেয়েছেন ‘প্রভাত ফেরির মিছিল যাবে, ছড়াও ফুলের বন্যা’