বাংলাদেশে মার্কিন পণ্যের আমদানি বাড়বে, কমবে শুল্ক
- আপডেট সময় : ০৯:৩৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
- / 246
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্য আনার লক্ষ্যে কিছু মার্কিন পণ্যের আমদানি শুল্ক কমাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের আমদানি বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে। সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।
এক প্রাথমিক খসড়া নথিতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির আরও সম্ভাবনা রয়েছে বেশ কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে।
উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ২ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি করেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ৩৩৬ দশমিক ৫২ মিলিয়ন ডলারের তুলা।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র দ্য ডেইলি স্টার-কে জানায়, বিশ্ববাজারে তুলা রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারিত্ব ছিল ৩৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশে আমদানি করা মার্কিন তুলার ওপর শুল্ক হার শূন্য শতাংশ।
একই বছরে বাংলাদেশ ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) আমদানি করেছে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ৫১ দশমিক ৩২ মিলিয়ন ডলারের এলপিজি। অথচ যুক্তরাষ্ট্র ওই বছর বিশ্ববাজারে ২০ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলারের এলপিজি রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ কিনেছে মাত্র শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ। এই পণ্যের ওপরও বাংলাদেশে শুল্ক নেওয়া হয় না।
প্রাপ্ত তথ্যে আরও জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিনজাত পণ্য, গম, প্রাকৃতিক গ্যাস, সোনা, ভুট্টা, ভ্যাকসিন, গয়না, বোর্ড ও প্যানেলসহ আরও কিছু পণ্য আমদানির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ এমন পণ্য আমদানির প্রস্তাব দেবে, যেগুলো যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপকভাবে রপ্তানি করে থাকে, অথচ বাংলাদেশে এসব পণ্যের আমদানি মাত্রাতিরিক্ত কম। এর মধ্যে রয়েছে তুলা, ফেরোয়াস ধাতব বর্জ্য ও স্ক্র্যাপ, প্রাকৃতিক গ্যাস, গম, তেলজাত পণ্য, দুধ ও ক্রিম।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমরা এখনো প্রস্তাবিত নথিটি হাতে পাইনি। তবে মার্কিন সরকারের জন্য আমরা একটি জবাবপত্র প্রস্তুত করছি, যা দুই-তিন দিনের মধ্যেই মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরে পাঠানো হবে।”
তিনি আরও জানান, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-র মোস্ট ফেভারড নেশন (MFN) নীতিমালা অনুসারে বাংলাদেশ শুল্কহার যৌক্তিক করবে। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র ডব্লিউটিওর সদস্য, তাই যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া শুল্ক সুবিধা অন্যান্য দেশও পাবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ইতোমধ্যে ১০০টি পণ্যের তালিকা তৈরির কাজ করছে, যেগুলোর ওপর বাংলাদেশ শুল্ক ছাড় দিতে পারে।
এ ছাড়া তিনটি মার্কিন কোম্পানির পাওনা বকেয়া পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ সরকার। ওরাকলের পাওনাও পরিশোধের প্রস্তুতি চলছে।
বাংলাদেশ বাণিজ্যে অশুল্ক বাধা কমাতে এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নকল সফটওয়্যার ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতেও প্রতিশ্রুতি দেবে।
গত মাসে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ইউএসটিআর (যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর) বাংলাদেশকে পরামর্শ দিয়েছে—যেসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত হয়, তা যেন সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র থেকেই আমদানি করা হয়। যেমন, বাংলাদেশ জেনারেল মোটরসের গাড়ি আমদানি করে অন্য দেশ থেকে (যেমন দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত), যদিও এগুলো মূলত মার্কিন ব্র্যান্ড।
এ ছাড়া, উড়োজাহাজ কেনার ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব।
এদিকে, গত ৭ মে ইউএসটিআরের দূত জেমিসন গ্রেয়ারের পাঠানো এক চিঠিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা এস কে বশির উদ্দিনকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ যেন শ্রম অধিকারের লঙ্ঘন না করে এবং ডিজিটাল বাণিজ্যে এমন কোনো সীমাবদ্ধতা তৈরি না করে, যা দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতায় বিঘ্ন ঘটায়।
চিঠিতে জেমিসন গ্রেয়ার লেখেন, “আমার দল বাংলাদেশের কৃষি ও শিল্প খাতে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা হ্রাস এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ইস্যুতে সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে প্রস্তুত আছে।”




















