ঢাকা ১০:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ইসলামে পারিবারিক নির্যাতনের কোনো স্থান নেই-শায়খ আব্দুল কাইয়ুম লিবিয়া থেকে ৩১০ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু

বাংলাদেশি পণ্যে ৪ মাসে চতুর্থবারের মতো ভারতের বিধিনিষেধ

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১২:৩৫:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫
  • / 88
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে ধারাবাহিকভাবে নতুন নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করছে ভারত। এবার দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বৈদেশিক বাণিজ্য দফতর (ডিজিএফটি) বাংলাদেশ থেকে বস্ত্র ও পাটজাত আরও চার ধরনের পণ্যে স্থলবন্দর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

গত চার মাসে এ নিয়ে চতুর্থবার বাংলাদেশি পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল ভারত। এর মধ্যে তিন দফাতেই স্থলবন্দর ব্যবহারের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে।

সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন ডিজিএফটির অতিরিক্ত সচিব অজয় ভাদুর। এটি জারি হয় সোমবার (১১ আগস্ট)। এর আগে গত ৮ এপ্রিল, ১৭ মে ও ২৭ জুনও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছিল।

প্রথম ধাক্কা—ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল

গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সীমান্ত, ভিসা ইত্যাদি ইস্যুতে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে এবং একপর্যায়ে দুই দেশই একে অপরের ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পথে যায়।

প্রথম নিষেধাজ্ঞা আসে ৮ এপ্রিল, যখন ভারত বাংলাদেশের জন্য কলকাতা বিমানবন্দর হয়ে অন্যান্য দেশে পণ্য পাঠানোর (ট্রান্সশিপমেন্ট) সুবিধা বাতিল করে। ২০২০ সালের ২৯ জুন থেকে এই সুবিধা কার্যকর ছিল। ভারতের যুক্তি—দীর্ঘদিনের এ সুবিধায় তাদের বিমানবন্দর ও বন্দরগুলোতে জট তৈরি হচ্ছিল, যা নিজস্ব রপ্তানিতে বিঘ্ন ঘটাচ্ছিল।

স্থলবন্দরে আমদানি নিষেধাজ্ঞা

এরপর ১৭ মে ভারত বাংলাদেশি তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা ও এর উপজাত, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়সহ বেশ কয়েকটি পণ্যে স্থলবন্দর ব্যবহার করে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। ভারতের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব পণ্য কেবল মহারাষ্ট্রের নবসেবা ও পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে।

পরে ২৭ জুন বস্ত্র ও পাটজাত ৯ ধরনের পণ্য স্থলবন্দর হয়ে আমদানি বন্ধ করে ভারত। এর মধ্যে ছিল কাঁচা পাট, পাটের সুতা, পাটের কাপড়সহ বিভিন্ন সামগ্রী।

সবশেষ নিষেধাজ্ঞা—১১ আগস্ট

সোমবারের (১১ আগস্ট) ঘোষণায় চার ধরনের বস্ত্র ও পাটজাত পণ্য—পাট বা অন্যান্য উদ্ভিজ্জ তন্তুর কাপড়, পাটের দড়ি-রশি-সুতলি, অন্যান্য তন্তুর দড়ি-রশি-সুতলি, এবং পাটের বস্তা-ব্যাগ—স্থলবন্দর হয়ে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এসব পণ্য কেবল নবসেবা সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি সম্ভব হবে।

২৭ জুন ও ১১ আগস্টের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে—এই পণ্যগুলো বাংলাদেশ থেকে নেপাল বা ভুটানে রপ্তানিতে বাধা নেই, তবে ওই দেশগুলো হয়ে পুনরায় ভারতে রপ্তানি করা যাবে না।

বাণিজ্যে প্রভাব ও করণীয়

ইপিবি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৩.৭৫%। গত জুনে যেসব পণ্যে স্থলবন্দর ব্যবহার বন্ধ হয়, সেগুলো থেকে আয় ছিল প্রায় ১৫ কোটি ডলার।

ব্যবসায়ীদের মতে, নিষেধাজ্ঞাগ্রস্ত বেশিরভাগ পণ্য স্থলবন্দর দিয়েই রপ্তানি হতো। এখন সমুদ্রপথে পাঠাতে হলে সময় ও খরচ—দুটিই বাড়বে। বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাপস প্রামাণিক বলেছেন, “ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। পাশাপাশি বিকল্প রপ্তানি বাজারও খুঁজে বের করতে হবে।”

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন সরাসরি বাণিজ্যে প্রভাব ফেলছে। যত দ্রুত সমাধানে পৌঁছানো যাবে, ততই উভয় দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে।”

নিউজটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশি পণ্যে ৪ মাসে চতুর্থবারের মতো ভারতের বিধিনিষেধ

আপডেট সময় : ১২:৩৫:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫

বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে ধারাবাহিকভাবে নতুন নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করছে ভারত। এবার দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বৈদেশিক বাণিজ্য দফতর (ডিজিএফটি) বাংলাদেশ থেকে বস্ত্র ও পাটজাত আরও চার ধরনের পণ্যে স্থলবন্দর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

গত চার মাসে এ নিয়ে চতুর্থবার বাংলাদেশি পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল ভারত। এর মধ্যে তিন দফাতেই স্থলবন্দর ব্যবহারের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে।

সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন ডিজিএফটির অতিরিক্ত সচিব অজয় ভাদুর। এটি জারি হয় সোমবার (১১ আগস্ট)। এর আগে গত ৮ এপ্রিল, ১৭ মে ও ২৭ জুনও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছিল।

প্রথম ধাক্কা—ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল

গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সীমান্ত, ভিসা ইত্যাদি ইস্যুতে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে এবং একপর্যায়ে দুই দেশই একে অপরের ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পথে যায়।

প্রথম নিষেধাজ্ঞা আসে ৮ এপ্রিল, যখন ভারত বাংলাদেশের জন্য কলকাতা বিমানবন্দর হয়ে অন্যান্য দেশে পণ্য পাঠানোর (ট্রান্সশিপমেন্ট) সুবিধা বাতিল করে। ২০২০ সালের ২৯ জুন থেকে এই সুবিধা কার্যকর ছিল। ভারতের যুক্তি—দীর্ঘদিনের এ সুবিধায় তাদের বিমানবন্দর ও বন্দরগুলোতে জট তৈরি হচ্ছিল, যা নিজস্ব রপ্তানিতে বিঘ্ন ঘটাচ্ছিল।

স্থলবন্দরে আমদানি নিষেধাজ্ঞা

এরপর ১৭ মে ভারত বাংলাদেশি তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা ও এর উপজাত, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়সহ বেশ কয়েকটি পণ্যে স্থলবন্দর ব্যবহার করে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। ভারতের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব পণ্য কেবল মহারাষ্ট্রের নবসেবা ও পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে।

পরে ২৭ জুন বস্ত্র ও পাটজাত ৯ ধরনের পণ্য স্থলবন্দর হয়ে আমদানি বন্ধ করে ভারত। এর মধ্যে ছিল কাঁচা পাট, পাটের সুতা, পাটের কাপড়সহ বিভিন্ন সামগ্রী।

সবশেষ নিষেধাজ্ঞা—১১ আগস্ট

সোমবারের (১১ আগস্ট) ঘোষণায় চার ধরনের বস্ত্র ও পাটজাত পণ্য—পাট বা অন্যান্য উদ্ভিজ্জ তন্তুর কাপড়, পাটের দড়ি-রশি-সুতলি, অন্যান্য তন্তুর দড়ি-রশি-সুতলি, এবং পাটের বস্তা-ব্যাগ—স্থলবন্দর হয়ে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এসব পণ্য কেবল নবসেবা সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি সম্ভব হবে।

২৭ জুন ও ১১ আগস্টের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে—এই পণ্যগুলো বাংলাদেশ থেকে নেপাল বা ভুটানে রপ্তানিতে বাধা নেই, তবে ওই দেশগুলো হয়ে পুনরায় ভারতে রপ্তানি করা যাবে না।

বাণিজ্যে প্রভাব ও করণীয়

ইপিবি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৩.৭৫%। গত জুনে যেসব পণ্যে স্থলবন্দর ব্যবহার বন্ধ হয়, সেগুলো থেকে আয় ছিল প্রায় ১৫ কোটি ডলার।

ব্যবসায়ীদের মতে, নিষেধাজ্ঞাগ্রস্ত বেশিরভাগ পণ্য স্থলবন্দর দিয়েই রপ্তানি হতো। এখন সমুদ্রপথে পাঠাতে হলে সময় ও খরচ—দুটিই বাড়বে। বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাপস প্রামাণিক বলেছেন, “ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। পাশাপাশি বিকল্প রপ্তানি বাজারও খুঁজে বের করতে হবে।”

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন সরাসরি বাণিজ্যে প্রভাব ফেলছে। যত দ্রুত সমাধানে পৌঁছানো যাবে, ততই উভয় দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে।”