প্রধান উপদেষ্টার রোম সফর নিয়ে প্রশ্ন কেন? ১৪ মাসে ১৪ দেশ সফর
- আপডেট সময় : ১১:০১:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
- / 69
ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ইতালির রোম সফর ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনা চলছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।
এ বছরের এই অনুষ্ঠানটি ১০ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত ইতালির রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
গত সেপ্টেম্বরেই জাতিসংঘ অধিবেশনে অংশ নিয়ে দেশে ফেরেন প্রধান উপদেষ্টা। এরপর অক্টোবরে আবার রোম সফরে যান। মাত্র ১৪ মাসে অন্তত ১৪ বার সদলবলে বিদেশ সফর করায় এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ইতালি ও বাংলাদেশের মধ্যে কোনো দ্বিপাক্ষিক সফর নয়। ইতালির সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি।
তাই সরকারি অর্থে এ ধরনের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া কতটা প্রয়োজনীয়, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা।
ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরাম: কী এই আয়োজন?
ফোরামের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, যুবশক্তি, বিজ্ঞান, উদ্ভাবন ও বিনিয়োগের মাধ্যমে কৃষি-খাদ্যব্যবস্থা রূপান্তরে কাজ করে এই ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরাম।
২০২১ সাল থেকে এ আয়োজন শুরু হয়।
এর আগের চারটি ইভেন্টে বিভিন্ন দেশের কৃষিমন্ত্রী বা কৃষি-সংক্রান্ত দপ্তরের কর্মকর্তারা যোগ দিয়েছিলেন।
২০২৪ সালের অনুষ্ঠানে মাত্র একটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান উপস্থিত থেকেছেন—লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসেফ মিয়ুমা বোকাই।
এ ছাড়া ডোমেনিকান রিপাবলিক, পেরু ও কিউবার প্রেসিডেন্টরা ভিডিও বার্তা দিয়েছেন।
১৫ অক্টোবর ফোরামের মিনিস্টেরিয়াল সেশনে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম অংশ নেবেন।
সূচি অনুযায়ী, ওই সেশনে আলবেনিয়া, আলজেরিয়া ও মেক্সিকোর কৃষিমন্ত্রীরাও থাকবেন।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা এ বছর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য দেন এবং গ্লোবাল অ্যালায়েন্স কার্যালয় পরিদর্শনের কথাও রয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভাও এ বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, ইউনূস ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট, জিবুতির প্রধানমন্ত্রী ও রোমের মেয়রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
এছাড়া আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের (IFAD) প্রেসিডেন্ট আলভারো লারিওর সঙ্গেও তার সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে।
রোম সফর নিয়ে বিতর্ক কেন?
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টা রোম সফরে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
তবে এই তথ্য ভুল বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, “রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসস বা কোনও সংবাদপত্র আমার সঙ্গে এই সফর নিয়ে কথা বলেনি। আমি শুধু বলেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টা বিশ্ব খাদ্য ফোরামের সভায় যোগ দিতে রোম যাচ্ছেন এবং সেখানে কিছু উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করবেন।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমি কখনও বলিনি যে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হবে। আসলে এমন কোনো বৈঠকের সময়সূচি ছিল না। আশা করি সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের প্রতিবেদন সংশোধন করবে।”
বিশ্লেষকদের মতামত
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের ঘন ঘন বিদেশ সফর নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।
কখনও কখনও দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট নয় এমন অনুষ্ঠানেও অংশ নিতে দেখা গেছে তাদের। গত ১৪ মাসে অন্তত ১৫ বার বড় প্রতিনিধি দল নিয়ে সফরের অভিযোগ উঠেছে।
এর আগেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এমন বিদেশ সফর নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার গত ডিসেম্বরে উপদেষ্টা ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর সংক্রান্ত ১৩ দফা নির্দেশনা জারি করেছিল, যেখানে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল এমন সফর। কিন্তু বিশ্লেষকদের দাবি, এসব নির্দেশনা মানা হচ্ছে না।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) করের টাকায় বড় প্রতিনিধি দল পাঠানোর যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “তারা রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বিবেচনায় পুরো রাষ্ট্রের স্বার্থ প্রমোট করছে কি না, তাদের সুনির্দিষ্ট ভূমিকা কী—তা পরিষ্কার নয়।”
সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বলেন, “উনি একটি বহুপাক্ষিক অনুষ্ঠানে গিয়েছেন, যা ইতালি ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সফর নয়। ফলে এতে প্রধান উপদেষ্টার অংশ নেওয়া কতটা জরুরি, সেটা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা নানা অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন, কিন্তু দুই দেশের মধ্যে প্রকৃত দ্বিপাক্ষিক কার্যক্রম খুবই কম। রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে তার মনোযোগ বেশি দেওয়া উচিত।”
আরও যোগ করেন, “এ ধরনের অগুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে এবং সরকারের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে।”
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিনিধি দল ছোট হবে, কিন্তু বরং সংখ্যা বেড়েছে। আগে যেমনটা আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেখা গেছে, এখনো সেই ধারাবাহিকতা চলছে।”

















