পুরো গাজা দখলের বড় অভিযানের প্রস্তুতি ইসরায়েলের
- আপডেট সময় : ১১:০২:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫
- / 202
ইসরায়েলে সামরিক প্রশিক্ষণ সবার জন্য বাধ্যতামূলক; প্রয়োজন হলে তাদের ডাকা হয় সেনাবাহিনীতে। এবার সেই প্রয়োজন দেখা দেওয়ায় ৬০ হাজার রিজার্ভিস্টকে তলব করেছে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী।
হামাসের সঙ্গে টানা দুই বছরের যুদ্ধের পর এখন গাজা সম্পূর্ণ দখলের পরিকল্পনা নিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এই অভিযানের অংশ হিসেবেই রিজার্ভ বাহিনীকে ডাকা হচ্ছে।
আইডিএফ কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, রিজার্ভিস্টরা সেপ্টেম্বরে দায়িত্ব নেবে এবং মূলত সক্রিয় সেনারাই অভিযানে অংশ নেবেন। ইতোমধ্যেই ইসরায়েলি সৈন্যরা জেইতুন ও জাবালিয়া এলাকায় কাজ শুরু করেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ মঙ্গলবার পরিকল্পনাটির অনুমোদন দিয়েছেন। সপ্তাহের শেষে এটি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হবে। এর আগেই নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা আগস্টের শুরুতে পুরো গাজা দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছিল।
গাজার বাস্তবতা
-
আয়তন: ৩৬৫ বর্গ কিলোমিটার
-
জনসংখ্যা: ২০ লাখের বেশি
-
মুসলমানের হার: ৯৯%
-
নিয়ন্ত্রণ: পশ্চিম তীর পিএলও’র হাতে, গাজা হামাসের নিয়ন্ত্রণে
দুই বছরের যুদ্ধে গাজার বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। খাদ্যাভাবে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ মানবিক সংকট। গত মাসে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি হওয়ার পর ইসরায়েল পূর্ণ দখলের পথে এগোয়।
ধারণা করা হচ্ছে, অভিযান শুরুর আগে গাজা সিটির অনেক মানুষকে দক্ষিণের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হবে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলের মিত্র অনেক দেশই নেতানিয়াহুর পরিকল্পনার নিন্দা করেছে। জাতিসংঘ ও বেসরকারি সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে—২২ মাসের যুদ্ধের পর নতুন অভিযান পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে তুলবে।
মধ্যস্থতাকারীরা একটি নতুন প্রস্তাব দিয়েছেন:
-
৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি
-
৫০ জিম্মির অর্ধেক মুক্তি
হামাস এই প্রস্তাবে রাজি হলেও ইসরায়েল এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। কর্মকর্তারা বলেছেন, “সব জিম্মি মুক্তি ছাড়া আর কোনো আংশিক চুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়।”
আইডিএফ-এর ঘোষণা
আইডিএফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে—
‘অপারেশন গিদিয়েন চ্যারিটস’-এর পরবর্তী পর্যায়ের অংশ হিসেবে ৬০ হাজার রিজার্ভিস্টকে তলব করা হয়েছে।
এর পাশাপাশি পূর্বে ডাকা ২০ হাজার রিজার্ভিস্টের দায়িত্বের মেয়াদও বাড়ানো হচ্ছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন,
“আমাদের লক্ষ্য সব জিম্মিকে মুক্ত করা এবং হামাসকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করা।”
অভিযানে পাঁচ ডিভিশন সেনা অংশ নেবে বলে সেনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজ সংবাদপত্র হারেৎজকে বলেন,
“একবার অভিযান শেষ হলে গাজার চেহারা বদলে যাবে; আগের মতো আর কখনও থাকবে না।”
তিনি আরও জানান, গাজার বাসিন্দাদের জন্য দক্ষিণের আল-মাওয়াসি এলাকায় আশ্রয়, খাদ্যকেন্দ্র ও ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা হচ্ছে।
হামলার আপডেট
-
আইডিএফ: উত্তর জাবালিয়া ও গাজা সিটির উপকণ্ঠে অভিযান পুনরায় শুরু করেছে।
-
সিভিল ডিফেন্স মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল: জেইতুন ও সাবরা পাড়ায় গোলাবর্ষণে ২১ জন নিহত।
-
ফিলিস্তিনি সংস্থা ওয়াফা: শাতি শরণার্থী শিবিরে এক পরিবারের পাঁচজন নিহত (তিন শিশু, বাবা-মা)।
জাতিসংঘ ও এনজিওগুলো এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে,
“গাজার ক্লান্ত, অপুষ্ট, শোকাহত ও বাস্তুচ্যুত জনগণের ওপর নতুন অভিযান ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে। লক্ষ লক্ষ মানুষকে দক্ষিণে সরে যেতে বাধ্য করা মানে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি।”
দক্ষিণ গাজার হাসপাতালগুলো ইতোমধ্যে তাদের সামর্থ্যের বহু গুণ বেশি রোগী নিয়ে কাজ করছে।
যুদ্ধের প্রেক্ষাপট
-
৭ অক্টোবর ২০২৩: হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়, ২৫০ জনকে বন্দি করে।
-
এরপর ইসরায়েল পাল্টা আক্রমণ শুরু করে।
-
এ পর্যন্ত গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা: ৬২ হাজারের বেশি।


















