পা দিয়ে লিখেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাতালিকায় মানিক
- আপডেট সময় : ০৮:৫৬:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫
- / 236
জন্ম থেকে দুই হাত নেই। তবুও দমে যাননি মানিক রহমান। পা দিয়ে লেখার মাধ্যমে তিনি আবারও প্রমাণ করলেন—ইচ্ছা, অধ্যবসায় আর মানসিক শক্তি থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ‘বি’ ইউনিটে অংশ নিয়ে তিনি মেধাতালিকায় ১৯২তম স্থান অর্জন করেছেন।
রবিবার (১১ মে ২০২৫) প্রকাশিত ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল থেকে এই তথ্য জানা যায়।
মানিক কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা মিজানুর রহমান একজন ব্যবসায়ী এবং মা মরিয়ম বেগম একজন কলেজের সহকারী অধ্যাপক। দুই ভাইয়ের মধ্যে মানিক বড়। জন্ম থেকেই দুই হাত না থাকলেও অদম্য মনোবল আর পরিবারে সহানুভূতিশীল পরিবেশে বড় হয়ে তিনি পা দিয়েই লেখালেখি করে আসছেন। শুধু তাই নয়, পা ব্যবহার করেই তিনি কম্পিউটার ও স্মার্টফোন চালাতেও পারদর্শী।
মানিক জানান, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায়ও অংশ নিয়েছেন। বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগরের অপেক্ষমাণ তালিকায় আছেন। তবে হাবিপ্রবিতে সরাসরি মেধাতালিকায় জায়গা করে নিতে পেরে তিনি বেশ আনন্দিত।
ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটার নিয়ে আগ্রহী মানিক বলেন, “আমি ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখতাম কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ার এবং একদিন একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। এবার সেই স্বপ্ন পূরণের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলাম মনে হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমার প্রথম অনুপ্রেরণা আমার বাবা-মা। এরপর আমার শিক্ষক এবং বন্ধুরাও আমাকে সবসময় সাহস জুগিয়েছেন। আমি যেন শুধু নিজের নয়, তাদের স্বপ্নও বাস্তবে রূপ দিতে পারি, সেই চেষ্টাই করব।”
মানিক ২০২২ সালে ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০২৪ সালে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। উভয় পরীক্ষাতেই তিনি গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন। এসএসসিতে ফুলবাড়ী উপজেলায় প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন তিনি। পিইসি ও জেএসসিতেও পেয়েছিলেন জিপিএ-৫।
ছেলের এই সাফল্যে গর্বিত বাবা-মা। মা মরিয়ম বেগম বলেন, “সব কিছুই আল্লাহর ইচ্ছায়। দুই হাত না থাকলেও তিনি ওকে বিশেষ এক গুণে গুণান্বিত করেছেন। তার অদম্য মনোবলই আজকের এই সাফল্যের পেছনে মূল শক্তি।”
বাবা মিজানুর রহমান বলেন, “ছেলের ইচ্ছা ছিল বুয়েটে পড়ার, কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে ওকে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করা হয়। তবে হাবিপ্রবিতে সে সুযোগ পেয়েছে। ওর স্বপ্ন একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া—আল্লাহ যেন তা পূরণ করেন।”



















