পাকিস্তানকে কাছে টানছেন ট্রাম্প, সতর্ক দৃষ্টি ভরতের
- আপডেট সময় : ০৬:৫১:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫
- / 148
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় পাকিস্তান–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাচ্ছে। গত সপ্তাহে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং সেনাপ্রধান জেনারেল অসীম মুনিরের হোয়াইট হাউস সফর এবং ট্রাম্পের প্রতি তাদের প্রশংসামূলক বক্তব্যে এই ঘনিষ্ঠতার ইঙ্গিত মিলেছে। সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সহযোগিতা বাড়ানো। এ তথ্য জানিয়েছে জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে।
গত জুলাইয়ে পাকিস্তানের জন্য শুল্ক কমানোর বিনিময়ে জ্বালানি, খনিজ ও কৃষি খাতে মার্কিন বিনিয়োগের যে চুক্তি হয়, তার জন্য হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান শরিফ।
ওভাল অফিসের বৈঠকের ছবি প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউস। সেখানে দেখা যায়, সেনাপ্রধান মুনির ট্রাম্পকে বিরল মৃত্তিকা খনিজভর্তি একটি বাক্স উপহার দিচ্ছেন। চলতি বছরে এটি মুনিরের যুক্তরাষ্ট্র সফরের দ্বিতীয় ঘটনা।
যদিও পাকিস্তানে বিশাল তেলের মজুত থাকার ট্রাম্পের দাবি নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে জুলাইয়ের চুক্তি ঘোষণার সময় ট্রাম্প ভারতকে উদ্দেশ করে রসিকতা করে বলেছিলেন, “একদিন ভারত হয়তো পাকিস্তানের তেল কিনবে।”
গত সপ্তাহে শাহবাজ শরিফ ট্রাম্পকে “শান্তির মানুষ” বলে আখ্যা দেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, মে মাসে ভারতশাসিত কাশ্মিরে ভারতীয় পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর ভারত–পাকিস্তান সংঘাত প্রশমনে ট্রাম্প ভূমিকা রেখেছেন। যদিও ভারত এ দাবি অস্বীকার করেছে। অন্যদিকে, সেনাপ্রধান মুনির তো ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য বলে মন্তব্য করেন।
হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের এই উত্থান এমন সময় হচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র–ভারত সম্পর্ক নিম্নমুখী। ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠতার প্রত্যাশা ফিকে হয়ে এসেছে। প্রথম মেয়াদের তুলনায় বর্তমানে দুই নেতার দূরত্ব স্পষ্ট।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখায় ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ৫০ শতাংশ শুল্ক বহাল রেখেছে। এতে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে মার্কিন–পাকিস্তান ঘনিষ্ঠতা ভারতের নীতিনির্ধারক মহলে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
নয়াদিল্লির থিংকট্যাংক অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ)-এর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের প্রধান হর্ষ পন্ত বলেন, “যদি পাকিস্তান মার্কিন কৌশলের কেন্দ্রে আসে, তবে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নতুন করে ভাবতে হবে। ভারত যদি ওয়াশিংটনের অঙ্গীকারে আস্থা না রাখে, তবে ইন্দো–প্যাসিফিকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ধরনও বদলে যাবে।”
এর ফলে কোয়াড অংশীদারিত্বসহ চীনের প্রভাব মোকাবিলায় ভারত–মার্কিন যৌথ উদ্যোগও প্রভাবিত হতে পারে।
এ সময় পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে সৌদি আরব–পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তি। এতে বলা হয়েছে, “যেকোনও একটি দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসনকে উভয়ের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে গণ্য করা হবে।” মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের এই ঘনিষ্ঠতা ভারতের জন্য কৌশলগত চাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে পাকিস্তানে ভারতের সাবেক দূত অজয় বিসারিয়া মনে করেন, ভারত এখনই অতটা চিন্তিত নয়। তাঁর ভাষায়, “পাকিস্তান চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব—এই তিন প্রধান শক্তির কাছে নিজেদের প্রাসঙ্গিক রাখতে সচেষ্ট। তবে এই ভারসাম্য দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয়। যুক্তরাষ্ট্র–পাকিস্তান সম্পর্কও শেষ পর্যন্ত অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে বলে ভারত আত্মবিশ্বাসী।”
যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত মীরা শঙ্কর বলেন, “ট্রাম্প ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই লেনদেনভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেন, যা মূলত অর্থনৈতিক স্বার্থকেই প্রাধান্য দেয়। পাকিস্তান ছোট ছোট সুবিধা দিয়ে নিজেদের ‘প্রয়োজনীয়’ প্রমাণ করতে পারে, তবে মার্কিন–পাকিস্তান সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত অনিশ্চিতই থেকে যাবে।”
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ডিন অমিতাভ মাত্তু বলেন, “ওয়াশিংটন–ইসলামাবাদ সম্পর্ক সবসময় চক্রাকার। স্নায়ুযুদ্ধ থেকে শুরু করে প্রতিবারই যুক্তরাষ্ট্র কার্যকরী কারণে পাকিস্তানকে গুরুত্ব দিয়েছে। তবে বর্তমানে ওয়াশিংটন পাকিস্তানের দ্বৈততা সম্পর্কে বেশি সচেতন এবং ইন্দো–প্যাসিফিকে ভারতের প্রতি আরও নিবেদিত। তাই ইসলামাবাদের প্রতি অনুরাগ মানে নয়াদিল্লিকে উপেক্ষা করা নয়, বরং একটি অস্থির অঞ্চলে কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষা।”

















