নেপালে বিক্ষোভ: হেলিকপ্টারের দড়ি ধরে মন্ত্রীরা পালালেন
ভিডিও ভাইরাল
- আপডেট সময় : ০৩:১৭:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / 150
নেপাল জুড়ে চলমান সহিংস বিক্ষোভে রাজনীতিবিদ ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা সরাসরি হামলার শিকার হচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন ভেসে বেড়াচ্ছে পালিয়ে বাঁচার মরিয়া চেষ্টার নানা ভিডিও ও ছবি। এর মধ্যে একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারের উদ্ধার দড়ি ধরে ঝুলে আছেন কয়েকজন মন্ত্রী ও তাঁদের স্বজন, নিরাপদ স্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন তারা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকেই দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়। সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন নিহত হলে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি পদত্যাগে বাধ্য হন। সরকার পিছু হটলেও জনতা থামছিল না। রাজধানী কাঠমান্ডুসহ একাধিক স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটতে থাকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনা মোতায়েন করা হয়। রাজধানীতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ এবং দেশব্যাপী শুক্রবার পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়।
মঙ্গলবার হাজারো ‘জেন-জি’ বিক্ষোভকারী সরকারি কর্মকর্তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুঙের বাড়িতে আগুন দেয়, উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বিষ্ণু পাউডেলের বাড়ি লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করে, নেপাল রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের বাসায় হামলা চালায় এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখকের বাড়িতেও তাণ্ডব চালায়।
অর্থমন্ত্রীকে রাস্তায় তাড়া করে মারধরের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। আরেক ভিডিওতে দেখা যায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরজু রানা দেউবা ও তাঁর স্বামী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেরবাহাদুর দেউবার কাঠমান্ডুর বাড়িতে হামলা হয়েছে। এক ফুটেজে রক্তাক্ত অবস্থায় দেউবাকে মাটিতে বসে থাকতে দেখা যায়, পরে কর্তৃপক্ষ তাঁকে উদ্ধার করে। আবার অন্য ভিডিওতে দেখা যায়, হেলিকপ্টারের ঝুলন্ত ঝুড়িতে কর্মকর্তাদের নিয়ে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন কাঠমান্ডুর ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে।
অরাজকতার সুযোগ নেয় কারাবন্দিরাও। তারা কারাগারে আগুন লাগিয়ে ফটক ভেঙে বেরিয়ে আসে। তবে সেনারা পালানোর চেষ্টা ব্যর্থ করে বন্দিদের অন্য কারাগারে স্থানান্তর করে।
অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে তরুণদের দাবি
অলির পদত্যাগের পর তরুণ প্রজন্ম অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে দেখতে চায়। নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি সুশীলা ভারতের বারানসি হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন।
মাওবাদী নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল (প্রচণ্ড) জেন-জিদের বিক্ষোভে সমর্থন জানিয়ে অলির সরকারের দমননীতি ও সহিংসতার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন।
নেপালি কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকার ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করার পর থেকেই তরুণরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। এতে ‘জেন-জি বিক্ষোভ’ নামে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। সোমবার কাঠমান্ডুতে সহিংসতায় ১৯ জন নিহত হন। সরকার কারফিউ জারি ও সেনা নামানোর পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবন ও নেতাদের বাসভবনে আগুন দেওয়ার পর ওলি পদত্যাগ করেন।
সেনাবাহিনী, প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পাউডেল ও জেন-জিদের প্রতিনিধিরা বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনায় বসবেন। কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা সুশীলা কার্কিকেই অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছেন।
এক প্রতিনিধি বলেন, “অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য আমাদের একমাত্র পছন্দ সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি।”
প্রথমে সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগডেলের সঙ্গে আলোচনা হবে, পরে প্রেসিডেন্টের দপ্তরে চূড়ান্ত বৈঠক। বিশ্লেষকদের মতে, তরুণদের প্রস্তাবই শেষ পর্যন্ত গৃহীত হতে পারে। কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন শাহও সুশীলা কার্কির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
সুশীলা কার্কির প্রেক্ষাপট
-
জন্ম: ১৯৫২ সালের ৭ জুন, বিরাটনগর
-
শিক্ষা: নেপাল থেকে স্নাতক শেষে ১৯৭০-এর দশকে ভারতের বারানসি হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা
-
১৯৭৫: রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর (এমএ)
-
হোস্টেল জীবনে রাজনৈতিক কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন না; সহপাঠীরা তাঁকে শান্ত ও পরিশ্রমী হিসেবে মনে রেখেছেন।
-
বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে দুর্গা প্রসাদ সুবেদীর সঙ্গে পরিচয়, পরে তাঁকে বিয়ে করেন।
-
সাক্ষাৎকারে বারানসি জীবনের স্মৃতি বর্ণনা করে বলেছেন: “আমার মনে আছে শিক্ষকদের কথা, বন্ধুদের কথা, যাদের অনেকে এখন বেঁচে নেই…গঙ্গার পাশে হোস্টেলের ছাদে গরমকালে আমরা ঘুমাতাম।”
-
পিএইচডি বা শিক্ষকতার সুযোগ পেলেও শেষ পর্যন্ত বিচারক হওয়ার পথ বেছে নেন।
-
প্রধান বিচারপতি হিসেবে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ঠেকাতে দৃঢ় ভূমিকা রাখেন। ২০১৭ সালে তাঁকে অভিশংসনের চেষ্টা হয়েছিল, তবে আদালত ও জনমতের কারণে তা ব্যর্থ হয়।
-
২০১৭ সালে অবসর নেন। বর্তমানে লেখালেখিতে ব্যস্ত, প্রকাশিত বই: আত্মজীবনী ‘নাইয়া’, উপন্যাস ‘কারা’।




















