ঢাকা ০৮:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী! কাতারের রাজপরিবারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যেসব অত্যাধুনিক সুবিধা রয়েছে কাকরদিয়া–তেরাদল–আলিপুর এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকের আত্নপ্রকাশ

নীতিহীন নীতিশকুমার ও বিহারের নির্বাচনি ফলাফল

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০২:৪৮:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ নভেম্বর ২০২০
  • / 940
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সম্প্রতি বিহারের নির্বাচন ও ফলাফল নিয়ে নানা মুনির নানা মত প্রকাশ পেয়েছে। বিহারে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি এবারও ক্ষমতা থেকে দূরে থাকলেও বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে প্রায় পৌঁছে গিয়েছিল। তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আবারও জনাদেশ পেলেও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধার ফল পেয়েছে করুণভাবে! আরজেডি ৭৫টি আসন দখল করে শীর্ষে অবস্থান করলেও আরজেডির ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি! তারাও আরজেডি থেকে মাত্র একটি আসন কম পেয়েছে। সেখানে এনডিএ জোটের অন্যতম শরিক নীতিশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড) তৃতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন লাভ করেছে। ২৪৩টি আসনের মধ্যে সাকুল্যে ৪৩টি আসন পেয়েও মুখ্যমন্ত্রীর কুরসি অটুট রাখতে সক্ষম হচ্ছেন নীতিশ কুমার।

বিজেপি আগেভাগেই তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী বলে ঘোষণা করেছে। এদিকে, একত্রিশ বছরের তরুণ তুর্কি লালুপ্রসাদ-তনয় তেজস্বী যাদব একক সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে এবারও পিছিয়ে আছেন! কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে ভোট-বৈতরণি পার হতে গিয়ে শেষমেশ গর্তে পড়েছে সেই ভাঙ্গা পা-টি-ই! কংগ্রেসকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ৭০টি আসন দিয়েছিলেন তেজস্বী। কিন্তু কংগ্রেস বিজয় হাসিল করতে পেরেছে সাকুল্যে ১৯টি আসনে! বাকি ৫১টি আসনে মুখ থুবড়ে পড়েছে কংগ্রেস। নির্বাচনি ফলাফল প্রকাশ পেতেই কংগ্রেসিরা তাঁদের পুরনো ক্যাসেট বাজাতে শুরু করে দিয়েছেন। নিজেদের ব্যর্থতার দায় এআইএমআইএম-এর ঘাড়ে চাপাতে মরিয়া হয়ে ওঠেছেন কেউ কেউ তাঁদের অভিযোগ, ওয়েসির দলটি নির্বাচনে প্রার্থী না-দিলে কংগ্রেসের আসন নির্ঘাত বৃদ্ধি পেত। কিন্তু অপর পক্ষ তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে বলছে, কংগ্রেসের কমসংখ্যক আসনপ্রাপ্তির পেছনে ওয়েসির দলের কোনও ভূমিকা নেই। তা ছাড়া, ওয়েসির দল পাঁচটি আসনও পেয়েছে। বরং কংগ্রেস ৭০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না-করে পঁচিশটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বাকি আসনগুলো আরজেডিকে ছেড়ে দিলে আরজেডি নেতৃত্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষ জোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেত বলে অনেকেই বলছেন।

নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্যপাল এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকেই সরকার গঠনের জন্য ডাকার কথা। কিন্তু পরিস্থিতি যে দিকে মোড় নিয়েছে, সেই অনুযায়ী নিয়মের ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা-ই বেশি। এদিকে, নীতিশ কুমারও কিছুটা বেঁকে বসেছেন! তাঁর ঘাড়ের ওপর দু’জনকে উপমুখ্যমন্ত্রী নিয়োগের প্রস্তাবে। নীতিশ কুমার তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হওয়ার দরুন তাঁর মধ্যে একটি হীনণ্মণ্যতাও কাজ করছে। তদুপরি, তাঁর সঙ্গে দু’জন উপমুখ্যমন্ত্রী জুড়ে দেয়া হচ্ছে। সুশীল মোদি ছাড়া দ্বিতীয় কোনও উপমুখ্যমন্ত্রীর কথা তিনি মেনে নিতে এখনও নিমরাজি। গত নির্বাচনে লালুপ্রসাদ যাদব তাঁকে বিশ্বাস করে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসিয়েছিলেন। কিন্তু স্বার্থপর নীতিশকুমার অনৈতিকভাবে বিজেপির হাত ধরে তখনকার মতো উদ্ধার হয়েছিলেন। এবারও তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সরকার গঠনের পর বিজেপি তাঁকে যে ল্যাজে খেলাবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গতবারের লালুপ্রসাদের বিশ্বাসের প্রতি সম্মান জানিয়ে নীতিশের উচিত হবে, লালুপুত্র তেজস্বী যাদবকে নিঃশর্তভাবে সমর্থন করা। তাতে শেষ বয়সে হৃতসম্মান পুনরুদ্ধার করা নীতিশের পক্ষে সম্ভব হবে বৈকি। না-হলে নীতিশকে সারা জীবন এই অপরাধবোধ কুরে কুরে খাবে! দেখা যাক, পাকা খিলাড়ি নীতিশ কুমার ক্ষমতা চান, না হৃতসম্মান পুনরুদ্ধার করতে চান।

লেখক: কবি,গবেষক ও শিক্ষাবিদ । প্রকাশক, দৈনিক নববার্তা প্রসঙ্গ। করিমগঞ্জ। অসম।

আরও পড়ুন:

https://52banglatv.com/2020/11/24075/

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

নীতিহীন নীতিশকুমার ও বিহারের নির্বাচনি ফলাফল

আপডেট সময় : ০২:৪৮:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ নভেম্বর ২০২০

সম্প্রতি বিহারের নির্বাচন ও ফলাফল নিয়ে নানা মুনির নানা মত প্রকাশ পেয়েছে। বিহারে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি এবারও ক্ষমতা থেকে দূরে থাকলেও বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে প্রায় পৌঁছে গিয়েছিল। তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আবারও জনাদেশ পেলেও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধার ফল পেয়েছে করুণভাবে! আরজেডি ৭৫টি আসন দখল করে শীর্ষে অবস্থান করলেও আরজেডির ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি! তারাও আরজেডি থেকে মাত্র একটি আসন কম পেয়েছে। সেখানে এনডিএ জোটের অন্যতম শরিক নীতিশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড) তৃতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন লাভ করেছে। ২৪৩টি আসনের মধ্যে সাকুল্যে ৪৩টি আসন পেয়েও মুখ্যমন্ত্রীর কুরসি অটুট রাখতে সক্ষম হচ্ছেন নীতিশ কুমার।

বিজেপি আগেভাগেই তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী বলে ঘোষণা করেছে। এদিকে, একত্রিশ বছরের তরুণ তুর্কি লালুপ্রসাদ-তনয় তেজস্বী যাদব একক সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে এবারও পিছিয়ে আছেন! কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে ভোট-বৈতরণি পার হতে গিয়ে শেষমেশ গর্তে পড়েছে সেই ভাঙ্গা পা-টি-ই! কংগ্রেসকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ৭০টি আসন দিয়েছিলেন তেজস্বী। কিন্তু কংগ্রেস বিজয় হাসিল করতে পেরেছে সাকুল্যে ১৯টি আসনে! বাকি ৫১টি আসনে মুখ থুবড়ে পড়েছে কংগ্রেস। নির্বাচনি ফলাফল প্রকাশ পেতেই কংগ্রেসিরা তাঁদের পুরনো ক্যাসেট বাজাতে শুরু করে দিয়েছেন। নিজেদের ব্যর্থতার দায় এআইএমআইএম-এর ঘাড়ে চাপাতে মরিয়া হয়ে ওঠেছেন কেউ কেউ তাঁদের অভিযোগ, ওয়েসির দলটি নির্বাচনে প্রার্থী না-দিলে কংগ্রেসের আসন নির্ঘাত বৃদ্ধি পেত। কিন্তু অপর পক্ষ তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে বলছে, কংগ্রেসের কমসংখ্যক আসনপ্রাপ্তির পেছনে ওয়েসির দলের কোনও ভূমিকা নেই। তা ছাড়া, ওয়েসির দল পাঁচটি আসনও পেয়েছে। বরং কংগ্রেস ৭০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না-করে পঁচিশটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বাকি আসনগুলো আরজেডিকে ছেড়ে দিলে আরজেডি নেতৃত্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষ জোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেত বলে অনেকেই বলছেন।

নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্যপাল এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকেই সরকার গঠনের জন্য ডাকার কথা। কিন্তু পরিস্থিতি যে দিকে মোড় নিয়েছে, সেই অনুযায়ী নিয়মের ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা-ই বেশি। এদিকে, নীতিশ কুমারও কিছুটা বেঁকে বসেছেন! তাঁর ঘাড়ের ওপর দু’জনকে উপমুখ্যমন্ত্রী নিয়োগের প্রস্তাবে। নীতিশ কুমার তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হওয়ার দরুন তাঁর মধ্যে একটি হীনণ্মণ্যতাও কাজ করছে। তদুপরি, তাঁর সঙ্গে দু’জন উপমুখ্যমন্ত্রী জুড়ে দেয়া হচ্ছে। সুশীল মোদি ছাড়া দ্বিতীয় কোনও উপমুখ্যমন্ত্রীর কথা তিনি মেনে নিতে এখনও নিমরাজি। গত নির্বাচনে লালুপ্রসাদ যাদব তাঁকে বিশ্বাস করে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসিয়েছিলেন। কিন্তু স্বার্থপর নীতিশকুমার অনৈতিকভাবে বিজেপির হাত ধরে তখনকার মতো উদ্ধার হয়েছিলেন। এবারও তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সরকার গঠনের পর বিজেপি তাঁকে যে ল্যাজে খেলাবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গতবারের লালুপ্রসাদের বিশ্বাসের প্রতি সম্মান জানিয়ে নীতিশের উচিত হবে, লালুপুত্র তেজস্বী যাদবকে নিঃশর্তভাবে সমর্থন করা। তাতে শেষ বয়সে হৃতসম্মান পুনরুদ্ধার করা নীতিশের পক্ষে সম্ভব হবে বৈকি। না-হলে নীতিশকে সারা জীবন এই অপরাধবোধ কুরে কুরে খাবে! দেখা যাক, পাকা খিলাড়ি নীতিশ কুমার ক্ষমতা চান, না হৃতসম্মান পুনরুদ্ধার করতে চান।

লেখক: কবি,গবেষক ও শিক্ষাবিদ । প্রকাশক, দৈনিক নববার্তা প্রসঙ্গ। করিমগঞ্জ। অসম।

আরও পড়ুন:

https://52banglatv.com/2020/11/24075/