ঢাকা ১২:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ইসলামে পারিবারিক নির্যাতনের কোনো স্থান নেই-শায়খ আব্দুল কাইয়ুম লিবিয়া থেকে ৩১০ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ কেন?

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১১:৪৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
  • / 299
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি বহুবার দিয়েছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে বিএনপি চায়—ন্যূনতম সংস্কার সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক। এ প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে—রাজনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে থাকা বিএনপি কেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় এতটা অনড়? যেখানে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেই দলটির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা প্রবল, সেখানে কেন বিএনপি নেতারা বারবার ষড়যন্ত্রের আশঙ্কার কথা বলছেন? প্রতিবেদনটি করেছেন দীপক দেব

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, “কারণ নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের অস্পষ্টতা আছে, সেকারণেই ষড়যন্ত্রের কথা আসছে।” তিনি আরও বলেন, “এখনও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ নাই। কোনও সময় বলে ডিসেম্বরে, কোনও সময় বলে ফেব্রুয়ারি, আবার বলে জুন মাসে। একটা ফিক্সড ডেট বলবে যে অমুক মাসে নির্বাচন—এমন কোনও রোডম্যাপ তো এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কাজেই একটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “তারা বলেছিল এই সরকার সংস্কার করে এবং বিচার করে নির্বাচন দিয়ে দিবে। তো নয় মাস তো কেটে গেছে—এ নয় মাসে তো সংস্কারের কোন অগ্রগতি দেখি না, বিচারের তেমন অগ্রগতি দেখি না।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫ আগস্টের জুলাই অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপি এখন দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক শক্তি। প্রশাসন থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ে দলটি দ্রুত নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। স্বাভাবিকভাবে মাঠ প্রশাসনের ওপর বিএনপির অঘোষিত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে দখলবাজি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি অভিযোগ সামনে আসছে। কেন্দ্রীয়ভাবে এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও থামানো যাচ্ছে না তৃণমূলের কিছু নেতাকর্মীকে। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, “দলটির অনেকেই দখল, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে অনেক ধরনের অপকর্মের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে। এই অবস্থার কারণে দলের পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচনের ওপর দ্রুত জোর দিচ্ছে। বিএনপির একাংশ মনে করছে, ক্ষমতায় গেলে দলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা অনেক সহজ হবে।”

প্রবীণ সাংবাদিক ও বিশ্লেষক এলাহী নেওয়াজ খান সাজু বলেন, “নির্বাচন যখনই হোক, শেষ পর্যন্ত হয়তো ক্ষমতায় আসবে বিএনপি। কিন্তু কিছু নেতাকর্মীর অপকীর্তির জন্য দলের ভাবমূর্তি কিছুটা ক্ষুণ্ন হয়েছে।” তিনি জানান, বিএনপি ইতোমধ্যে তিন হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে, তবুও সংকট থেকে গেছে। তাঁর মতে, এই সংকটের জন্য যেমন দলীয় অভ্যন্তরীণ অবস্থা দায়ী, তেমনি বাইরের কিছু মহলও লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে।

ডিসেম্বরের পর নির্বাচন: বিএনপির আশঙ্কা

যদিও বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে, তবে অভ্যুত্থানপন্থী ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সংস্কার ও আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের প্রশ্নে অনড়। সংবিধান সংস্কার ও গণপরিষদ গঠনের মতো দীর্ঘমেয়াদি জটিল দাবিগুলোকেও বিএনপি দেখছে নির্বাচন বিলম্বিত করার কৌশল হিসেবে।

বিএনপির নেতারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, যেসব সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলোই কার্যকর হবে। এসব বিষয়ে ঐকমত্য হলে একমাসের মধ্যেই তা চূড়ান্ত করে সনদে স্বাক্ষর সম্ভব। তাই রোডম্যাপ ঘোষণায় বিলম্বের কারণ দেখছেন না তারা।

বিএনপির অভিযোগ, কিছু নতুন দল এবং পুরোনো রাজনৈতিক শক্তির বক্তব্যে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত মিলছে। সরকারের বক্তব্য ও কার্যক্রম বিশ্লেষণ করলেও দেখা যাচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা বিদ্যমান, যা গণতন্ত্রের জন্য উদ্বেগজনক।

এছাড়া ডিসেম্বর পেরিয়ে গেলে রমজান, ঈদ, এসএসসি পরীক্ষা, কোরবানির ঈদ ও হাটের ব্যস্ততা মিলিয়ে নির্বাচন আয়োজনের সময় বের করাটা কঠিন হয়ে পড়বে। এই প্রেক্ষাপটেই বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যেই ভোট চায়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ১০ মে আহ্বান জানান, “কেউ যেন ভোটের অধিকার কুক্ষিগত করার ষড়যন্ত্র করতে না পারে, সেজন্য জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।” একই সঙ্গে তিনি সরকারের কাছে নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার যে যুক্তিটা আমরা এরই মধ্যে বলে দিয়েছি। আমরা আসলে এখন জানতে চাই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হওয়ার যুক্তিগুলো কী। কেন নির্বাচন করা যাবে না, এটাই আমাদের প্রশ্ন।”

সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মে মাসের মাঝামাঝি বিষয়গুলো চূড়ান্ত করে ফেলবেন—এটা যদি ঠিক হয়, তাহলে কাজটা শেষ করতে কয়দিন লাগবে? তাহলে ডিসেম্বরে নির্বাচন দিতে সমস্যা কোথায়?”

পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে বিএনপির?

নির্বাচনের রোডম্যাপ না এলে বিএনপির করণীয় কী হবে, সে বিষয়ে এখনই স্পষ্ট করে কিছু বলেননি নজরুল ইসলাম খান। তবে জানিয়েছেন, “যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল যৌথভাবে কর্মসূচি পালন করছে। জেলা ও মহানগরে কর্মসূচি হচ্ছে। ভবিষ্যতেও প্রয়োজন হলে দলীয়ভাবে কার্যকর কর্মসূচি নেওয়া হবে।”

যদিও তিনি নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকলেও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ রাজপথে আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তার ভাষায়, “দেশের মানুষ ভোট দিতে উদগ্রীব। তাই আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছি নির্বাচনের একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করতে। কারণ, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে যেমন আন্দোলন হয়েছে, নির্বাচনের রোডম্যাপের জন্যও তা হতে পারে।”

তবে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে এখনই বড় ধরনের কোনো আন্দোলনের সম্ভাবনা দেখছেন না ড. সাব্বির আহমেদ।

বিশ্লেষকদের মতামত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চায়। বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চায়, অন্যদিকে এনসিপি ও জামায়াত সময় নিতে চায় যাতে প্রস্তুতির সুযোগ মেলে। ফলে স্বার্থের সংঘাতে নির্বাচন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।”

অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, “নতুন দল এনসিপি সংবিধান পুনঃলিখনের প্রস্তাব এনেছে। এরকম সাংঘর্ষিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে। আর যদি গণপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হয়, সেটা দেশের জন্য ভালো হবে না।”

ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় বিএনপির মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে।”

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ও নির্বাচন

বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা নিশ্চিত হলেও তারেক রহমান এখনো বিদেশে। আগে বলা হয়েছিল মামলা ও দণ্ড প্রত্যাহার হলেই তিনি ফিরবেন। বর্তমানে বলা হচ্ছে, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলেই তিনি দেশে ফিরবেন।

ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, “যদি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয় এবং নির্বাচন করা যায়, তাহলে তারেক জিয়া দেশে ফিরবেন।”

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ কেন?

আপডেট সময় : ১১:৪৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি বহুবার দিয়েছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে বিএনপি চায়—ন্যূনতম সংস্কার সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক। এ প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে—রাজনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে থাকা বিএনপি কেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় এতটা অনড়? যেখানে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেই দলটির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা প্রবল, সেখানে কেন বিএনপি নেতারা বারবার ষড়যন্ত্রের আশঙ্কার কথা বলছেন? প্রতিবেদনটি করেছেন দীপক দেব

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, “কারণ নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের অস্পষ্টতা আছে, সেকারণেই ষড়যন্ত্রের কথা আসছে।” তিনি আরও বলেন, “এখনও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ নাই। কোনও সময় বলে ডিসেম্বরে, কোনও সময় বলে ফেব্রুয়ারি, আবার বলে জুন মাসে। একটা ফিক্সড ডেট বলবে যে অমুক মাসে নির্বাচন—এমন কোনও রোডম্যাপ তো এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কাজেই একটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “তারা বলেছিল এই সরকার সংস্কার করে এবং বিচার করে নির্বাচন দিয়ে দিবে। তো নয় মাস তো কেটে গেছে—এ নয় মাসে তো সংস্কারের কোন অগ্রগতি দেখি না, বিচারের তেমন অগ্রগতি দেখি না।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫ আগস্টের জুলাই অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপি এখন দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক শক্তি। প্রশাসন থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ে দলটি দ্রুত নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। স্বাভাবিকভাবে মাঠ প্রশাসনের ওপর বিএনপির অঘোষিত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে দখলবাজি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি অভিযোগ সামনে আসছে। কেন্দ্রীয়ভাবে এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও থামানো যাচ্ছে না তৃণমূলের কিছু নেতাকর্মীকে। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, “দলটির অনেকেই দখল, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে অনেক ধরনের অপকর্মের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে। এই অবস্থার কারণে দলের পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচনের ওপর দ্রুত জোর দিচ্ছে। বিএনপির একাংশ মনে করছে, ক্ষমতায় গেলে দলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা অনেক সহজ হবে।”

প্রবীণ সাংবাদিক ও বিশ্লেষক এলাহী নেওয়াজ খান সাজু বলেন, “নির্বাচন যখনই হোক, শেষ পর্যন্ত হয়তো ক্ষমতায় আসবে বিএনপি। কিন্তু কিছু নেতাকর্মীর অপকীর্তির জন্য দলের ভাবমূর্তি কিছুটা ক্ষুণ্ন হয়েছে।” তিনি জানান, বিএনপি ইতোমধ্যে তিন হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে, তবুও সংকট থেকে গেছে। তাঁর মতে, এই সংকটের জন্য যেমন দলীয় অভ্যন্তরীণ অবস্থা দায়ী, তেমনি বাইরের কিছু মহলও লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে।

ডিসেম্বরের পর নির্বাচন: বিএনপির আশঙ্কা

যদিও বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে, তবে অভ্যুত্থানপন্থী ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সংস্কার ও আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের প্রশ্নে অনড়। সংবিধান সংস্কার ও গণপরিষদ গঠনের মতো দীর্ঘমেয়াদি জটিল দাবিগুলোকেও বিএনপি দেখছে নির্বাচন বিলম্বিত করার কৌশল হিসেবে।

বিএনপির নেতারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, যেসব সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলোই কার্যকর হবে। এসব বিষয়ে ঐকমত্য হলে একমাসের মধ্যেই তা চূড়ান্ত করে সনদে স্বাক্ষর সম্ভব। তাই রোডম্যাপ ঘোষণায় বিলম্বের কারণ দেখছেন না তারা।

বিএনপির অভিযোগ, কিছু নতুন দল এবং পুরোনো রাজনৈতিক শক্তির বক্তব্যে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত মিলছে। সরকারের বক্তব্য ও কার্যক্রম বিশ্লেষণ করলেও দেখা যাচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা বিদ্যমান, যা গণতন্ত্রের জন্য উদ্বেগজনক।

এছাড়া ডিসেম্বর পেরিয়ে গেলে রমজান, ঈদ, এসএসসি পরীক্ষা, কোরবানির ঈদ ও হাটের ব্যস্ততা মিলিয়ে নির্বাচন আয়োজনের সময় বের করাটা কঠিন হয়ে পড়বে। এই প্রেক্ষাপটেই বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যেই ভোট চায়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ১০ মে আহ্বান জানান, “কেউ যেন ভোটের অধিকার কুক্ষিগত করার ষড়যন্ত্র করতে না পারে, সেজন্য জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।” একই সঙ্গে তিনি সরকারের কাছে নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার যে যুক্তিটা আমরা এরই মধ্যে বলে দিয়েছি। আমরা আসলে এখন জানতে চাই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হওয়ার যুক্তিগুলো কী। কেন নির্বাচন করা যাবে না, এটাই আমাদের প্রশ্ন।”

সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মে মাসের মাঝামাঝি বিষয়গুলো চূড়ান্ত করে ফেলবেন—এটা যদি ঠিক হয়, তাহলে কাজটা শেষ করতে কয়দিন লাগবে? তাহলে ডিসেম্বরে নির্বাচন দিতে সমস্যা কোথায়?”

পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে বিএনপির?

নির্বাচনের রোডম্যাপ না এলে বিএনপির করণীয় কী হবে, সে বিষয়ে এখনই স্পষ্ট করে কিছু বলেননি নজরুল ইসলাম খান। তবে জানিয়েছেন, “যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল যৌথভাবে কর্মসূচি পালন করছে। জেলা ও মহানগরে কর্মসূচি হচ্ছে। ভবিষ্যতেও প্রয়োজন হলে দলীয়ভাবে কার্যকর কর্মসূচি নেওয়া হবে।”

যদিও তিনি নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকলেও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ রাজপথে আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তার ভাষায়, “দেশের মানুষ ভোট দিতে উদগ্রীব। তাই আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছি নির্বাচনের একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করতে। কারণ, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে যেমন আন্দোলন হয়েছে, নির্বাচনের রোডম্যাপের জন্যও তা হতে পারে।”

তবে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে এখনই বড় ধরনের কোনো আন্দোলনের সম্ভাবনা দেখছেন না ড. সাব্বির আহমেদ।

বিশ্লেষকদের মতামত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চায়। বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চায়, অন্যদিকে এনসিপি ও জামায়াত সময় নিতে চায় যাতে প্রস্তুতির সুযোগ মেলে। ফলে স্বার্থের সংঘাতে নির্বাচন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।”

অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, “নতুন দল এনসিপি সংবিধান পুনঃলিখনের প্রস্তাব এনেছে। এরকম সাংঘর্ষিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে। আর যদি গণপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হয়, সেটা দেশের জন্য ভালো হবে না।”

ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় বিএনপির মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে।”

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ও নির্বাচন

বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা নিশ্চিত হলেও তারেক রহমান এখনো বিদেশে। আগে বলা হয়েছিল মামলা ও দণ্ড প্রত্যাহার হলেই তিনি ফিরবেন। বর্তমানে বলা হচ্ছে, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলেই তিনি দেশে ফিরবেন।

ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, “যদি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয় এবং নির্বাচন করা যায়, তাহলে তারেক জিয়া দেশে ফিরবেন।”