নির্বাচনে এককভাবে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি, ‘চমক আছে’
- আপডেট সময় : ০২:২৯:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫
- / 58
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন অংশ। দলটি সবগুলো—৩০০—আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতিমধ্যে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ জন্য রংপুর অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ঢাকায় ডেকে নেওয়া হয়েছে, এবং নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে। নেতারা জানান, নতুন প্রার্থীসহ ‘কিছু চমক’ও থাকছে।
রবিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে এসব তথ্য বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেন জি এম কাদেরের অংশের একজন কো-চেয়ারম্যান এবং তিনজন প্রেসিডিয়াম সদস্য। তারা বলেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং সারাদেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম বিস্তার নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা আলোচনা করছেন। পাশাপাশি সব আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রংপুর মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা গত তিন দিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে শনিবার রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির নেতারা। দলটির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করেন। তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বিএনপি ও সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন।
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর জেলার আহ্বায়ক আজমল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “দলের মহাসচিবের নেতৃত্বে আমরা হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদের আগমন ও খোঁজ নেওয়ার জন্য তারা ধন্যবাদ জানিয়েছেন।”
তিনি আরও জানান, কয়েকটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। “জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনেই নির্বাচনে অংশ নেবে। রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় নেতাদের বাছাই করে তালিকা প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। রংপুর-৩ আসনে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং গাইবান্ধা-১ আসনে মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।”
নির্বাচনি প্রচারের সমান সুযোগ এবং নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ প্রত্যাশা করে আজমল হোসেন বলেন, “যদি কমিশন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে বিকল্প পরিকল্পনাও আছে। রংপুরে আমাদের নেতাকর্মীরা যেকোনো প্রতিকূলতা মোকাবিলায় মানসিকভাবে প্রস্তুত। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচন হলে জাতীয় পার্টি ভালো ফল করবে।”
রংপুর জেলার সদস্যসচিব আবদুর রাজ্জাকও একই কথা বলেন। তিনি জানান, “আমি এখন ঢাকায় আছি। আমরা নির্বাচনের সব প্রস্তুতি নিচ্ছি। রংপুরের ছয়টি আসনের দুটিতে নতুন প্রার্থী থাকছে। রংপুর-১ আসনে জনপ্রিয় এক ব্যারিস্টারকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। বিভাগের সব আসনেই গ্রহণযোগ্য নেতাদের মনোনয়নের ভাবনা চলছে। একসময় ওই অঞ্চলের ২২টি আসন আমাদের ছিল—সেগুলো ফিরে পাওয়ার জন্যই প্রস্তুতি।”
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির বলেন, “জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে—এটা সত্য। সব আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করাসহ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব।”
তিনি যোগ করেন, “জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করবে। গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও সিলেট বিভাগেও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দেওয়া হবে। রংপুরের ৩৩টি আসনে জয়ের সম্ভাবনা আছে এমন ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। কয়েকটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্তও করা হয়েছে। আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি—এটা নিশ্চিত। তবে এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। ভোটের আগে কমিশনকে এটি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে আমাদের প্রার্থীরা স্বাভাবিক প্রচারণা চালাতে পারেন।”
নির্বাচনে জাপার অংশগ্রহণে কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টির নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো বাধা নেই। নির্বাচন কমিশনও একই কথা বলেছে। তাই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও আমরা নির্বাচনে থাকব।”
দলের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “তফসিল ঘোষণার আগেই জাতীয় পার্টি চমক দেখাবে। কিছু সাবেক সরকারি কর্মকর্তা দলে যোগ দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন। আরও কিছু চমকও রয়েছে।”
বিষয়টি জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, “আমি এখন ঢাকায়। জাতীয় পার্টি সবসময় নির্বাচনমুখী দল। পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হলে আমরা নির্বাচনে থাকব। সেই দিকেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
অন্যদিকে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় পার্টির (জাপা) একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বে নতুন একটি রাজনৈতিক জোট গঠিত হচ্ছে। জোটের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পাবেন জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। জোটটির সম্ভাব্য নাম ঠিক করা হয়েছে ‘জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক জোট’। রবিবার বিকালে রাজধানীর গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে জাপার উদ্যোগে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাপার একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং প্রধান অতিথি ছিলেন জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। পরে যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানানো হয়।

















