ঢাকা ০৮:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী! কাতারের রাজপরিবারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যেসব অত্যাধুনিক সুবিধা রয়েছে কাকরদিয়া–তেরাদল–আলিপুর এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকের আত্নপ্রকাশ

নির্বাচনের আগে সংস্কার ইস্যুতে উভয় সংকটে বিএনপি, অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে রাখতে চায়

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১০:২২:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫
  • / 87

বিএনপি’র লোগো

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সুপারিশের প্রতিক্রিয়া জানানো নিয়ে উভয়সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

দলটির নেতারা বলছেন, নির্বাচনী প্রস্তুতিতে মনোযোগী বিএনপি ভাবেনি যে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে। এতে দলটি এখন বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে।

বিএনপি সরকারের কর্মকাণ্ড নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। দলটি আবারও স্পষ্ট করেছে—ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে তারা কোনো আপস করবে না। বরং আগামী দিনগুলোতে আরও সতর্ক কৌশলে এগোবে।

জ্যেষ্ঠ বিএনপি নেতাদের মতে, নিজেদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারায় রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা হারানোর পর জুলাই সনদ ইস্যুতে বিএনপির চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশনই এখন বেশি সমালোচনার মুখে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিএনপির জন্য সবচেয়ে বাস্তবসম্মত পথ হলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা— এতে কৌশলগতভাবে সরকারকে চাপের মুখে ফেলা সম্ভব হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান বলেন, “বিএনপি এখন দোটানায় পড়েছে। তারা যদি জুলাই সনদ প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে মনে হবে তারা সংস্কারের বিপক্ষে। এতে দলটি বিব্রত হবে। আবার সবকিছু মেনে নিলে তারা পরাজিত পক্ষ হিসেবে গণ্য হবে।”

মঙ্গলবার ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদের সাংবিধানিক সংস্কার বাস্তবায়নের সুপারিশ সরকারে জমা দেয়।

এর বিরোধিতা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে অভিযোগ করেন, কমিশনের সদস্যরা বিএনপির দেওয়া ‘নোট অব ডিসেন্ট’ অন্তর্ভুক্ত না করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে “বিশ্বাস ভঙ্গ” করেছেন।

বুধবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনার পর বিএনপি নেতারা সরাসরি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের উদ্বেগ তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেন।

যোগাযোগ করা হলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “দলের পক্ষ থেকে আমরা আমাদের মতামত দিয়েছি। কয়েকটি দলের রাজনৈতিক এজেন্ডা বা প্রস্তাব পুরো জাতির ওপর একতরফাভাবে চাপিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”

তিনি আরও বলেন, “কোনো প্রস্তাব জোর করে চাপিয়ে দিলে তা রাষ্ট্রের কোনো উপকারে আসবে না। ব্যক্তিগত এজেন্ডাও বাস্তবায়িত হওয়া উচিত নয়। আমরা আশা করি, সরকার ও ঐকমত্য কমিশন এই বাস্তবতা অনুধাবন করবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, বিএনপির এই ইস্যুটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া প্রয়োজন।

তিনি বলেন, “বিএনপি যে সমস্যায় পড়েছে, সেটা দলের জন্য ক্ষতিকর হবে। নানা পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, দলটি ধীরে ধীরে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। এখন যদি তারা যথাযথ ভূমিকা রাখতে না পারে, তাহলে নিজেদের আরও ক্ষতি করবে।”

অধ্যাপক আল মাসুদ পরামর্শ দেন, বিএনপির উচিত এমন কৌশল গ্রহণ করা যাতে সরকার চাপের মধ্যে থাকে, কিন্তু নির্বাচনের সময়সূচিতে দেরি না হয়।

তিনি বলেন, “বিএনপি যদি আন্দোলনে যায়, তাহলে নির্বাচনের সময়সূচি কীভাবে বজায় থাকবে? যেকোনো অস্থিরতা তাদের দাবিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।”

জ্যেষ্ঠ বিএনপি নেতারা বলেন, তারা এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করবেন না, যাতে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো সুবিধা নিতে পারে বা নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।

আলাপকালে বিএনপির চারজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে—বিএনপির জন্য আগামী দিনগুলো সহজ হবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, “এখন আমাদের আরও সতর্কভাবে ভাবতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে দলের সামনে বড় কোনো চ্যালেঞ্জ আসছে কি না। আমরা এই নতুন ইস্যুর জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। তবে জনগণ বুঝতে পারছে, বিএনপি নয়, সরকারই আস্থা ভঙ্গ করে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।”

নেতারা বলেন, যদি সরকার সনদ নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ উপেক্ষা করতে থাকে, তাহলে তারা কৌশলগতভাবে সতর্কবার্তা দেবে এবং সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ বিএনপি নেতা বলেন, “বিএনপি কোনো বিশৃঙ্খলা চায় না। আমরা সরকার ও ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সহযোগিতা করছি। বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রাখে। কিন্তু সরকার বিএনপির আস্থাকে দুর্বলতা ভেবে ভুল করছে। যদি তারা এর সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে সেটি হবে গুরুতর ভুল।”

নিউজটি শেয়ার করুন

নির্বাচনের আগে সংস্কার ইস্যুতে উভয় সংকটে বিএনপি, অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে রাখতে চায়

আপডেট সময় : ১০:২২:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সুপারিশের প্রতিক্রিয়া জানানো নিয়ে উভয়সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

দলটির নেতারা বলছেন, নির্বাচনী প্রস্তুতিতে মনোযোগী বিএনপি ভাবেনি যে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে। এতে দলটি এখন বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে।

বিএনপি সরকারের কর্মকাণ্ড নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। দলটি আবারও স্পষ্ট করেছে—ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে তারা কোনো আপস করবে না। বরং আগামী দিনগুলোতে আরও সতর্ক কৌশলে এগোবে।

জ্যেষ্ঠ বিএনপি নেতাদের মতে, নিজেদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারায় রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা হারানোর পর জুলাই সনদ ইস্যুতে বিএনপির চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশনই এখন বেশি সমালোচনার মুখে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিএনপির জন্য সবচেয়ে বাস্তবসম্মত পথ হলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা— এতে কৌশলগতভাবে সরকারকে চাপের মুখে ফেলা সম্ভব হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান বলেন, “বিএনপি এখন দোটানায় পড়েছে। তারা যদি জুলাই সনদ প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে মনে হবে তারা সংস্কারের বিপক্ষে। এতে দলটি বিব্রত হবে। আবার সবকিছু মেনে নিলে তারা পরাজিত পক্ষ হিসেবে গণ্য হবে।”

মঙ্গলবার ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদের সাংবিধানিক সংস্কার বাস্তবায়নের সুপারিশ সরকারে জমা দেয়।

এর বিরোধিতা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে অভিযোগ করেন, কমিশনের সদস্যরা বিএনপির দেওয়া ‘নোট অব ডিসেন্ট’ অন্তর্ভুক্ত না করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে “বিশ্বাস ভঙ্গ” করেছেন।

বুধবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনার পর বিএনপি নেতারা সরাসরি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের উদ্বেগ তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেন।

যোগাযোগ করা হলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “দলের পক্ষ থেকে আমরা আমাদের মতামত দিয়েছি। কয়েকটি দলের রাজনৈতিক এজেন্ডা বা প্রস্তাব পুরো জাতির ওপর একতরফাভাবে চাপিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”

তিনি আরও বলেন, “কোনো প্রস্তাব জোর করে চাপিয়ে দিলে তা রাষ্ট্রের কোনো উপকারে আসবে না। ব্যক্তিগত এজেন্ডাও বাস্তবায়িত হওয়া উচিত নয়। আমরা আশা করি, সরকার ও ঐকমত্য কমিশন এই বাস্তবতা অনুধাবন করবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, বিএনপির এই ইস্যুটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া প্রয়োজন।

তিনি বলেন, “বিএনপি যে সমস্যায় পড়েছে, সেটা দলের জন্য ক্ষতিকর হবে। নানা পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, দলটি ধীরে ধীরে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। এখন যদি তারা যথাযথ ভূমিকা রাখতে না পারে, তাহলে নিজেদের আরও ক্ষতি করবে।”

অধ্যাপক আল মাসুদ পরামর্শ দেন, বিএনপির উচিত এমন কৌশল গ্রহণ করা যাতে সরকার চাপের মধ্যে থাকে, কিন্তু নির্বাচনের সময়সূচিতে দেরি না হয়।

তিনি বলেন, “বিএনপি যদি আন্দোলনে যায়, তাহলে নির্বাচনের সময়সূচি কীভাবে বজায় থাকবে? যেকোনো অস্থিরতা তাদের দাবিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।”

জ্যেষ্ঠ বিএনপি নেতারা বলেন, তারা এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করবেন না, যাতে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো সুবিধা নিতে পারে বা নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।

আলাপকালে বিএনপির চারজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে—বিএনপির জন্য আগামী দিনগুলো সহজ হবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, “এখন আমাদের আরও সতর্কভাবে ভাবতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে দলের সামনে বড় কোনো চ্যালেঞ্জ আসছে কি না। আমরা এই নতুন ইস্যুর জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। তবে জনগণ বুঝতে পারছে, বিএনপি নয়, সরকারই আস্থা ভঙ্গ করে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।”

নেতারা বলেন, যদি সরকার সনদ নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ উপেক্ষা করতে থাকে, তাহলে তারা কৌশলগতভাবে সতর্কবার্তা দেবে এবং সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ বিএনপি নেতা বলেন, “বিএনপি কোনো বিশৃঙ্খলা চায় না। আমরা সরকার ও ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সহযোগিতা করছি। বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রাখে। কিন্তু সরকার বিএনপির আস্থাকে দুর্বলতা ভেবে ভুল করছে। যদি তারা এর সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে সেটি হবে গুরুতর ভুল।”