ঢাকা ০৩:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
আরও পেছাল খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা ইসলামে পারিবারিক নির্যাতনের কোনো স্থান নেই-শায়খ আব্দুল কাইয়ুম লিবিয়া থেকে ৩১০ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না

নগরভবনের টানাপোড়েনের ধাক্কা ক্ষমতার মসনদে আঁচড় ফেলবে কি?

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০১:০৪:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
  • / 241
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানো নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে বিএনপি। মেয়র পদের মতো তুলনামূলকভাবে ‘ছোট’ একটি ইস্যুতে বিএনপির এতটা অনড় অবস্থান এবং সরকার পক্ষের উদাসীনতা— বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত দেশের রাজনীতি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আপাতত ক্ষুদ্র বলে মনে হলেও, এই ‘শপথ’ ইস্যু আগামী দিনের রাজনীতিতে বিএনপি ও সরকারের পারস্পরিক অবস্থান স্পষ্ট করে দিতে পারে।

সরকারের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ অবস্থানের মাঝেই রাজপথে অবস্থান নেওয়া বিএনপি আপাতত আন্দোলনের সফল পরিণতির অপেক্ষায়। দলটির অভিমত, রোববারের মধ্যেই যদি সরকার ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে শপথ করাতে বাধ্য হয়, তবে দীর্ঘ ১৯ বছর পর ক্ষমতার মুখ দেখতে পারে বিএনপি।

এদিকে সরকার ও ক্ষমতাসীন মিত্র দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) শঙ্কিত— ইশরাকের মেয়র পদে আসীন হওয়াকে সাধারণ মানুষ এনসিপির দুর্বলতা হিসেবে দেখতে পারে, যা সরকার পরিচালনা এবং রাজনৈতিক অবস্থান দীর্ঘ মেয়াদে টিকিয়ে রাখতে অন্তরায় হয়ে উঠতে পারে।

গত বৃহস্পতিবার (২২ মে ২০২৫) উচ্চ আদালত রায় দিয়েছেন, ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণে কোনো বাধা নেই। কিন্তু দুদিন আগেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং ইশরাক হোসেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে অন্যকে দোষারোপ করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

ইশরাক হোসেন রাজনীতি ডটকমকে বলেন: ‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে আমাকে রাজপথে নামতে হলো। এটি সরকারের দায়িত্ব ছিল আমাকে শপথ পড়ানো। চট্টগ্রামে যেমন হয়েছে, এখানেও হওয়া উচিত ছিল। সরকার বিএনপিকে অবহেলার চোখে দেখছে। শপথ নিয়ে যদি টালবাহানা করা হয়, তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।’

অন্যদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সব সিদ্ধান্ত সরকারি হয় না, কিছু রাজনৈতিকও হয়। এই ইস্যুটিও রাজনৈতিক। সরকার যদি রায় অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিত, তবে তা ইতোমধ্যেই কার্যকর হতো। তবে এটি আদালত অবমাননার মধ্যে পড়ে না।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও সরাসরি সরকারের বিরোধিতা করেনি বিএনপি। কিন্তু এই মেয়র ইস্যুকেই কেন্দ্র করে তারা প্রথমবার রাজপথে সক্রিয়ভাবে সরকারের বিরোধিতা করল। ফলে অনেকেই এটিকে কেবল একটি মেয়র পদে শপথের দাবি হিসেবে না দেখে বৃহৎ রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের অংশ হিসেবে দেখছেন।

ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয় প্রায় এক সপ্তাহ আগে। তারা সরকারের কাছে সময়সীমা নির্ধারণ করে দাবি আদায়ের আলটিমেটাম দেয়।

গত মঙ্গলবার আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত করার আগে আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দেন, বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে দাবি মানা না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আদালতের রায় এখন সরকারের হাতে তুলে দিয়েছে সিদ্ধান্তের বল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন: ‘অতি দ্রুত ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণ করাতে হবে, অন্যথায় এই আন্দোলন আরও বিস্তৃত রূপ নিতে পারে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘সরকারের অবস্থান দেখে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করব। এখানে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।’ তার মতে, সরকার ও এনসিপি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে। এবার তা সহ্য করা হবে না।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচিতে এনসিপির কয়জন ছিল? তাদের জনসমর্থন ক্রমেই কমছে। বিএনপি এবার শক্ত অবস্থান নেবে, মেয়র ইস্যুই তার সূচনা।’

সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই প্রকাশ্যে কথা বলছেন বিএনপি নেতারা। বিশেষ করে নির্বাচন ও ভোটাধিকারের প্রশ্নে সরকারকে একাধিকবার আক্রমণ করেছেন তারা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন: ‘দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে কালো ছায়া পড়েছে। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির মাধ্যমে দেশকে অন্য খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে।’

এখন বিএনপি আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে উপদেষ্টা পরিষদের দুই ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীবের পদত্যাগ দাবিতে। বিপরীতে এনসিপি দাবি তুলেছে উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সালেহউদ্দীন আহমেদ ও আসিফ নজরুলের পদত্যাগের। এনসিপির ছাত্র সংগঠনগুলো চায়, উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্র প্রতিনিধিদের সংখ্যা বাড়ানো হোক।

বিএনপির এক নেতা বলছেন, ‘ছাত্র সংগঠনগুলো কার্যত অস্তিত্ব হারিয়েছে। সরকার ও দলে তারা ব্যর্থ— এটি জনগণকে বোঝাতে চায় বিএনপি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন:
‘সরকার বা এনসিপি হয়তো মনে করছে, এই মুহূর্তে মেয়র পদ ছেড়ে দিলে ঢাকায় বিএনপির অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে। তারা এই বিষয়টিকে টেনে নিয়ে এমন একটা জায়গায় নিতে চায়, যেখানে আর মেয়াদ থাকবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি যদি বিষয়টিকে রাজনৈতিক প্লট হিসেবে নেয়, তাহলে জনগণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করাই হবে মূল চ্যালেঞ্জ। কারণ তারা তো নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তবে তাদের অবস্থানের পেছনে ভিন্ন মোটিভ থাকতে পারে। সরকারও এটিকে দীর্ঘায়িত করতে চাইছে।’

বিএনপি ও সরকার উভয় পক্ষই এখন রাজনৈতিক টানাপোড়েনে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
‘বিএনপি একদিকে সরকারের সঙ্গে সহমত হতে পারছে না, আবার সরাসরি বিরোধিতাও করতে পারছে না। সরকারও এই দ্বিধার সুযোগ নিতে চাইছে। তারা চায় না বিএনপি ঢাকায় শক্তি অর্জন করুক বা সরকারের কর্তৃত্বে চ্যালেঞ্জ তৈরি হোক।’

শেষমেশ অধ্যাপক সাব্বির বলেন, ‘বিএনপি যদি এই দাবিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সরকার ধরে নেবে, বিএনপির অন্য দাবিগুলোর অবস্থানও দুর্বল। অন্যদিকে, এই দাবিকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আন্দোলনের ভিত্তি গড়ে তুলতে চায় বিএনপি। ফলে ইশরাকের শপথ ইস্যু আগামী রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

নগরভবনের টানাপোড়েনের ধাক্কা ক্ষমতার মসনদে আঁচড় ফেলবে কি?

আপডেট সময় : ০১:০৪:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানো নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে বিএনপি। মেয়র পদের মতো তুলনামূলকভাবে ‘ছোট’ একটি ইস্যুতে বিএনপির এতটা অনড় অবস্থান এবং সরকার পক্ষের উদাসীনতা— বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত দেশের রাজনীতি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আপাতত ক্ষুদ্র বলে মনে হলেও, এই ‘শপথ’ ইস্যু আগামী দিনের রাজনীতিতে বিএনপি ও সরকারের পারস্পরিক অবস্থান স্পষ্ট করে দিতে পারে।

সরকারের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ অবস্থানের মাঝেই রাজপথে অবস্থান নেওয়া বিএনপি আপাতত আন্দোলনের সফল পরিণতির অপেক্ষায়। দলটির অভিমত, রোববারের মধ্যেই যদি সরকার ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে শপথ করাতে বাধ্য হয়, তবে দীর্ঘ ১৯ বছর পর ক্ষমতার মুখ দেখতে পারে বিএনপি।

এদিকে সরকার ও ক্ষমতাসীন মিত্র দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) শঙ্কিত— ইশরাকের মেয়র পদে আসীন হওয়াকে সাধারণ মানুষ এনসিপির দুর্বলতা হিসেবে দেখতে পারে, যা সরকার পরিচালনা এবং রাজনৈতিক অবস্থান দীর্ঘ মেয়াদে টিকিয়ে রাখতে অন্তরায় হয়ে উঠতে পারে।

গত বৃহস্পতিবার (২২ মে ২০২৫) উচ্চ আদালত রায় দিয়েছেন, ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণে কোনো বাধা নেই। কিন্তু দুদিন আগেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং ইশরাক হোসেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে অন্যকে দোষারোপ করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

ইশরাক হোসেন রাজনীতি ডটকমকে বলেন: ‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে আমাকে রাজপথে নামতে হলো। এটি সরকারের দায়িত্ব ছিল আমাকে শপথ পড়ানো। চট্টগ্রামে যেমন হয়েছে, এখানেও হওয়া উচিত ছিল। সরকার বিএনপিকে অবহেলার চোখে দেখছে। শপথ নিয়ে যদি টালবাহানা করা হয়, তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।’

অন্যদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সব সিদ্ধান্ত সরকারি হয় না, কিছু রাজনৈতিকও হয়। এই ইস্যুটিও রাজনৈতিক। সরকার যদি রায় অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিত, তবে তা ইতোমধ্যেই কার্যকর হতো। তবে এটি আদালত অবমাননার মধ্যে পড়ে না।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও সরাসরি সরকারের বিরোধিতা করেনি বিএনপি। কিন্তু এই মেয়র ইস্যুকেই কেন্দ্র করে তারা প্রথমবার রাজপথে সক্রিয়ভাবে সরকারের বিরোধিতা করল। ফলে অনেকেই এটিকে কেবল একটি মেয়র পদে শপথের দাবি হিসেবে না দেখে বৃহৎ রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের অংশ হিসেবে দেখছেন।

ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয় প্রায় এক সপ্তাহ আগে। তারা সরকারের কাছে সময়সীমা নির্ধারণ করে দাবি আদায়ের আলটিমেটাম দেয়।

গত মঙ্গলবার আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত করার আগে আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দেন, বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে দাবি মানা না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আদালতের রায় এখন সরকারের হাতে তুলে দিয়েছে সিদ্ধান্তের বল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন: ‘অতি দ্রুত ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণ করাতে হবে, অন্যথায় এই আন্দোলন আরও বিস্তৃত রূপ নিতে পারে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘সরকারের অবস্থান দেখে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করব। এখানে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।’ তার মতে, সরকার ও এনসিপি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে। এবার তা সহ্য করা হবে না।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচিতে এনসিপির কয়জন ছিল? তাদের জনসমর্থন ক্রমেই কমছে। বিএনপি এবার শক্ত অবস্থান নেবে, মেয়র ইস্যুই তার সূচনা।’

সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই প্রকাশ্যে কথা বলছেন বিএনপি নেতারা। বিশেষ করে নির্বাচন ও ভোটাধিকারের প্রশ্নে সরকারকে একাধিকবার আক্রমণ করেছেন তারা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন: ‘দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে কালো ছায়া পড়েছে। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির মাধ্যমে দেশকে অন্য খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে।’

এখন বিএনপি আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে উপদেষ্টা পরিষদের দুই ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীবের পদত্যাগ দাবিতে। বিপরীতে এনসিপি দাবি তুলেছে উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সালেহউদ্দীন আহমেদ ও আসিফ নজরুলের পদত্যাগের। এনসিপির ছাত্র সংগঠনগুলো চায়, উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্র প্রতিনিধিদের সংখ্যা বাড়ানো হোক।

বিএনপির এক নেতা বলছেন, ‘ছাত্র সংগঠনগুলো কার্যত অস্তিত্ব হারিয়েছে। সরকার ও দলে তারা ব্যর্থ— এটি জনগণকে বোঝাতে চায় বিএনপি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন:
‘সরকার বা এনসিপি হয়তো মনে করছে, এই মুহূর্তে মেয়র পদ ছেড়ে দিলে ঢাকায় বিএনপির অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে। তারা এই বিষয়টিকে টেনে নিয়ে এমন একটা জায়গায় নিতে চায়, যেখানে আর মেয়াদ থাকবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি যদি বিষয়টিকে রাজনৈতিক প্লট হিসেবে নেয়, তাহলে জনগণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করাই হবে মূল চ্যালেঞ্জ। কারণ তারা তো নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তবে তাদের অবস্থানের পেছনে ভিন্ন মোটিভ থাকতে পারে। সরকারও এটিকে দীর্ঘায়িত করতে চাইছে।’

বিএনপি ও সরকার উভয় পক্ষই এখন রাজনৈতিক টানাপোড়েনে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
‘বিএনপি একদিকে সরকারের সঙ্গে সহমত হতে পারছে না, আবার সরাসরি বিরোধিতাও করতে পারছে না। সরকারও এই দ্বিধার সুযোগ নিতে চাইছে। তারা চায় না বিএনপি ঢাকায় শক্তি অর্জন করুক বা সরকারের কর্তৃত্বে চ্যালেঞ্জ তৈরি হোক।’

শেষমেশ অধ্যাপক সাব্বির বলেন, ‘বিএনপি যদি এই দাবিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সরকার ধরে নেবে, বিএনপির অন্য দাবিগুলোর অবস্থানও দুর্বল। অন্যদিকে, এই দাবিকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আন্দোলনের ভিত্তি গড়ে তুলতে চায় বিএনপি। ফলে ইশরাকের শপথ ইস্যু আগামী রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।’