ঢাকা ০৫:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ইসলামে পারিবারিক নির্যাতনের কোনো স্থান নেই-শায়খ আব্দুল কাইয়ুম লিবিয়া থেকে ৩১০ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু

দেশব্যাপী ধর্ষণ-যৌন হয়রানির প্রতিবাদ, শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন ঘোষণা

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৪:৫৪:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫
  • / 284
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনায় ধর্ষকদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিতকরণ এবং দেশব্যাপী যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে রবিবার (৯ মার্চ ২০২৫) ব্যাপক কর্মসূচি পালিত হয়েছে সারা দেশে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করেও প্রতিবাদ জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

মাগুরায় আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের প্রতিবাদে এ সব কর্মসূচি শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার (৮ মার্চ) মধ্যরাতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গঠন করা হয়েছে  ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ। ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে এ ঘটনায় জড়িতদের প্রকাশ্যে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ

দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনায় ধর্ষকদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিতকরণ এবং দেশব্যাপী যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শান্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তারা। এসময় বিভাগটির শিক্ষকরাও তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন এবং মিছিলে অংশ নেন।

বেলা সোয়া ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।

এ সময় শিক্ষার্থীরা- ‘We want we want, Justice Justice’, ‘we want Justice, hang the rapist’; ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’; ‘তুমি কে আমি কে, আসিয়া আসিয়া’; ‘আমার বোন তোমার বোন, আসিয়া আসিয়া’; ‘আমার বোনের কান্না, আর না আর না’; ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধরে ধরে কবর দে’; ‘রশি লাগলে রশি নে, ধর্ষকদের ফাঁসি দে’; ‘ধর্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’; ‘২৪ এর বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’; ‘জাহাঙ্গীর করে কি? খায় দায় ঘুমায় নাকি?’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

লোক প্রশাসন বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ মিছিলে লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবির, অধ্যাপক আবু হুসাইন মোহাম্মদ আহসান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শেহরিন আমিন ভূইয়া একাত্মতা পোষণ করে মিছিলে অংশ নেন।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে লোক প্রশাসন বিভাগের ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাকিবুল বাশার বলেন, আগের সরকার কীভাবে পালিয়েছে সেটাকে ভুলে যাবেন না। আপনি রাত ৩টায় এসে আমাদেরকে সিরিয়াসনেস বুঝাবেন না। আমরা রাস্তায় সিরিয়াসনেস দেখতে চাই। আমাদের মা-বোনদের নিরাপদ দেখতে চাই, আমরা এত প্যাঁচ দেখতে চাই না।

আরেক শিক্ষার্থী তুয়াম্মুম কবির বলেন, আমরা এই ধর্ষকদের ১ মিনিটের ফাঁসি চাই না। আরও কঠিন শাস্তি কার্যকর করতে হবে। একজন ধর্ষিতা বোন যেমন কষ্ট সহ্য করে এদের তার চেয়ে কঠিন শাস্তির মাধ্যমে মৃত্যু নিশ্চিত করতে হবে।

লোক প্রশাসন বিভাগের প্রভাষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শেহরিন আমিন ভূইয়া বলেন, আমরা শুধু আইনের কথা বলি, রুলসের দোহাই দেই। কিন্তু এই রেপিস্টদের শাস্তি দিতে ১০ দিনের বেশি সময় লাগার কথা না। ট্রাইব্যুনাল গঠন করে অতি দ্রুত প্রকাশ্য শাস্তি কার্যকর করতে পারলে ধর্ষণের পরিমাণ কমে আসবে।

লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক আবু হুসাইন মোহাম্মদ আহসান বলেন, আমাদের প্রতিবাদ প্রতিনিয়ত জানাতে হবে। এটা কীটের মতো রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। এটাকে সমূলে উৎপাত করতে হবে।

লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবির বলেন, এই ধর্ষকরা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। পশুরা অন্তত তাদের বাচ্চাদের সাথে এসব করে না। কিন্তু আমাদের ছোট মেয়ে আসিয়াকেও তারা ছাড় দেয়নি। আমরা যেন এই ঘটনাগুলো ভুলে না যাই। আমরা ভুলে যাই বলেই ধর্ষকরা কিছুদিন পরপর তাদের রূপ দেখায়।

ঢাবির বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে সম্মিলিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজ্ঞান অনুষদের কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

বেলা পৌনে ১টা থেকে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যে এ বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ভূতত্ত্ব বিভাগসহ একাধিক বিভাগের শিক্ষার্থী।

এ সময় ‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট একশন, আমরা সোনার বাংলায় ধর্ষকের ঠাঁই নাই, ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই ধর্ষকের ফাঁসি চাই’সহ একাধিক স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা।

পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, নারী দিবসেও একাধিক ঘটনা ঘটেছে। শিশু ধর্ষণও হয়েছে। এসবের পরও আমরা ঘরে বসে থাকতে পারি না। আমারা চাই, এ দেশে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থা গড়ে উঠুক। কারণ এ দেশে বিচারব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদি। ধর্ষকরা জামিন পেয়ে যায়। আমরা এ ধরণের বিচারব্যবস্থা চাই না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গতকাল রাতেও ধর্ষণের প্রতিবাদে বের হয়ে এসেছিল। আজও আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি।

শিক্ষার্থী ফুরকান আহমেদ বলেন, আমরা ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর দেখতে চাই। আমাদের বোনেরা আজ রাস্তায় নিরাপদ না। তারা নির্ভয়ে বাইরে বের হতে পারছে না। দৃশ্যমান বিচার না হলে এই ধর্ষণের পরিমাণ বাড়তেই থাকবে।

এছাড়াও একাধিক শিক্ষার্থী ধর্ষকের ফাঁসি চেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণের প্রতিবাদে রবিবার সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ইতোমধ্যে নিজেদের বিভাগের ব্যানারে প্রতিবাদ জানিয়েছে ৯টি বিভাগ। লোক প্রশাসন, রসায়ন, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবজ্ঞান, পদার্থ, ভূতত্ব, ইংরেজি, ভাষা বিজ্ঞানসহ আরও কয়েকটি বিভাগ প্রতিবাদ জানিয়েছে বলে জানা গেছে।

ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা

সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) শিক্ষার্থীরা। রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

ধর্ষকদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে মুখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ করতে দেখা যায় ঢামেকের নারী শিক্ষার্থীদের। এসময় তারা ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের ফাঁসি দে’, ‘হ্যাং দ্যা রেপিস্ট, ইউ ওয়ান্ট জাস্টিস’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

ঢামেকের অধ্যাপক আব্দুল ওয়াহাব বলেন, যারা ধর্ষণ করে এবং যারা এদের মদদ দেয় তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এর আগে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় ধর্ষণের সেঞ্চুরি করা হয়েছে। ধর্ষকে রাজনৈতিক দল এবং নির্বাহী ক্ষমতা যারা ছিল তারা তাকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। ভোট না দেওয়া কারণে উলঙ্গ করে ভিডিও বানিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, দেশে চলমান এসব ধর্ষণের সুরাহা হতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও এ বিষয় সচেতন হতে হবে। তাদের নেতাকর্মীদের সচেতন করতে হবে। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সমাবেশ এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা প্রতিবাদ করা না পর্যন্ত ধর্ষকদের কেন বিচার শুরু হয় না? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে আমরা দায়িত্ব তুলে দিয়েছি। আপনারা কোনও দলীয় সরকার নন। এরপরে ধর্ষকদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারছেন না। প্রতিটি ধর্ষিত বোনের পাশে আমরা আছি। তাদের ধর্ষণের বিচারের জন্য আমরা রাস্তায় নামবো।

এর আগে ঢামেক শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে এসে জড়ো হয়। বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাধিক শিক্ষক সংহতি জানিয়ে অংশগ্রহণ করেন।

ধর্ষকদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা

দ্রুত সময়ের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। রবিবার দুপুর ১২টার দিকে মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা।

এ সময় ধর্ষকদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও সোমবার (১০ মার্চ) বেলা ১১টায় অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে দুপুর ১টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে, বেলা সাড়ে ১১টার দিক থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে প্যারিস রোডে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে একত্রিত হন।

এ সময় তারা, ‘ধর্ষকের শাস্তি, মৃত্যু মৃত্যু’, ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’, ‘ধর্ষকের ঠিকানা, এ বাংলায় হবে না’, ‘আমার বোন ধর্ষিত কেন? ইন্টেরিম জবাব দে’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘ছাত্র সমাজের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘রাবিয়ানদের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, ধর্ষকের বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

অবস্থান কর্মসূচিতে হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যব্যবস্থা বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘আমাদের দেশে একটার পর একটা ধর্ষণ হয়ে যাচ্ছে। কুমিল্লার তনু থেকে শুরু করে বর্তমানে আছিয়ার ধর্ষণ। কিন্তু আমরা এর কোনও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখতে পাইনি। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনও সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধর্ষকের পরিপূর্ণ শাস্তি কার্যকর করতে পারেনি। এটা সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চরম ব্যর্থতা। আমি এই অস্থায়ী সরকারকে বলতে চাই, আপনারা যদি ধর্ষকের শাস্তি দিতে না পারেন, তাদের জনগণের হাতে ছেড়ে দেন। আমার মা-বোনেরা ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করবে।’

সোমবারের কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাবির সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত ধর্ষকের শাস্তি না হবে, ততদিন পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ঘোষণা করছি। এর সঙ্গে সঙ্গে আগামীকাল বেলা সাড়ে ১১টায় অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করছি। আমাদের একটি দাবি, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে, শুধু আছিয়া, খাদিজা বা তনু না, বিগত সময়ের যত ধর্ষণ হয়েছে সবগুলো শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং ধর্ষকের এমন শাস্তি দিতে হবে, যেন পরবর্তীতে কেউ ধর্ষণ করার আগে হাজারবার চিন্তা করে।’

এ সময় সাধারণ ছাত্রনেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন বিভাগের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি নারী ও শিশুদের নিয়ে হেনস্তা ও নিপীড়নের বেশ কয়েকটি ঘটনার মধ্যেই মাগুরায় আছিয়া নামে একটি শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বিষয়টিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হিসেবে দেখছেন অনেকে।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় দেশব্যাপী ধর্ষণ, সন্ত্রাস ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। ঢাকার বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আজ বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও একই কর্মসূচি রয়েছে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত সময়ের মধ্যে দোষী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকরের দাবি জানান।

ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষণকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে রাজশাহী, খুলনা, সিলেটের শাহজালাল ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

দেশব্যাপী ধর্ষণ-যৌন হয়রানির প্রতিবাদ, শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন ঘোষণা

আপডেট সময় : ০৪:৫৪:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫

দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনায় ধর্ষকদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিতকরণ এবং দেশব্যাপী যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে রবিবার (৯ মার্চ ২০২৫) ব্যাপক কর্মসূচি পালিত হয়েছে সারা দেশে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করেও প্রতিবাদ জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

মাগুরায় আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের প্রতিবাদে এ সব কর্মসূচি শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার (৮ মার্চ) মধ্যরাতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গঠন করা হয়েছে  ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ। ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে এ ঘটনায় জড়িতদের প্রকাশ্যে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ

দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনায় ধর্ষকদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিতকরণ এবং দেশব্যাপী যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শান্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তারা। এসময় বিভাগটির শিক্ষকরাও তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন এবং মিছিলে অংশ নেন।

বেলা সোয়া ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।

এ সময় শিক্ষার্থীরা- ‘We want we want, Justice Justice’, ‘we want Justice, hang the rapist’; ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’; ‘তুমি কে আমি কে, আসিয়া আসিয়া’; ‘আমার বোন তোমার বোন, আসিয়া আসিয়া’; ‘আমার বোনের কান্না, আর না আর না’; ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধরে ধরে কবর দে’; ‘রশি লাগলে রশি নে, ধর্ষকদের ফাঁসি দে’; ‘ধর্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’; ‘২৪ এর বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’; ‘জাহাঙ্গীর করে কি? খায় দায় ঘুমায় নাকি?’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

লোক প্রশাসন বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ মিছিলে লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবির, অধ্যাপক আবু হুসাইন মোহাম্মদ আহসান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শেহরিন আমিন ভূইয়া একাত্মতা পোষণ করে মিছিলে অংশ নেন।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে লোক প্রশাসন বিভাগের ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাকিবুল বাশার বলেন, আগের সরকার কীভাবে পালিয়েছে সেটাকে ভুলে যাবেন না। আপনি রাত ৩টায় এসে আমাদেরকে সিরিয়াসনেস বুঝাবেন না। আমরা রাস্তায় সিরিয়াসনেস দেখতে চাই। আমাদের মা-বোনদের নিরাপদ দেখতে চাই, আমরা এত প্যাঁচ দেখতে চাই না।

আরেক শিক্ষার্থী তুয়াম্মুম কবির বলেন, আমরা এই ধর্ষকদের ১ মিনিটের ফাঁসি চাই না। আরও কঠিন শাস্তি কার্যকর করতে হবে। একজন ধর্ষিতা বোন যেমন কষ্ট সহ্য করে এদের তার চেয়ে কঠিন শাস্তির মাধ্যমে মৃত্যু নিশ্চিত করতে হবে।

লোক প্রশাসন বিভাগের প্রভাষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শেহরিন আমিন ভূইয়া বলেন, আমরা শুধু আইনের কথা বলি, রুলসের দোহাই দেই। কিন্তু এই রেপিস্টদের শাস্তি দিতে ১০ দিনের বেশি সময় লাগার কথা না। ট্রাইব্যুনাল গঠন করে অতি দ্রুত প্রকাশ্য শাস্তি কার্যকর করতে পারলে ধর্ষণের পরিমাণ কমে আসবে।

লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক আবু হুসাইন মোহাম্মদ আহসান বলেন, আমাদের প্রতিবাদ প্রতিনিয়ত জানাতে হবে। এটা কীটের মতো রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। এটাকে সমূলে উৎপাত করতে হবে।

লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবির বলেন, এই ধর্ষকরা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। পশুরা অন্তত তাদের বাচ্চাদের সাথে এসব করে না। কিন্তু আমাদের ছোট মেয়ে আসিয়াকেও তারা ছাড় দেয়নি। আমরা যেন এই ঘটনাগুলো ভুলে না যাই। আমরা ভুলে যাই বলেই ধর্ষকরা কিছুদিন পরপর তাদের রূপ দেখায়।

ঢাবির বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে সম্মিলিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজ্ঞান অনুষদের কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

বেলা পৌনে ১টা থেকে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যে এ বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ভূতত্ত্ব বিভাগসহ একাধিক বিভাগের শিক্ষার্থী।

এ সময় ‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট একশন, আমরা সোনার বাংলায় ধর্ষকের ঠাঁই নাই, ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই ধর্ষকের ফাঁসি চাই’সহ একাধিক স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা।

পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, নারী দিবসেও একাধিক ঘটনা ঘটেছে। শিশু ধর্ষণও হয়েছে। এসবের পরও আমরা ঘরে বসে থাকতে পারি না। আমারা চাই, এ দেশে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থা গড়ে উঠুক। কারণ এ দেশে বিচারব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদি। ধর্ষকরা জামিন পেয়ে যায়। আমরা এ ধরণের বিচারব্যবস্থা চাই না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গতকাল রাতেও ধর্ষণের প্রতিবাদে বের হয়ে এসেছিল। আজও আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি।

শিক্ষার্থী ফুরকান আহমেদ বলেন, আমরা ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর দেখতে চাই। আমাদের বোনেরা আজ রাস্তায় নিরাপদ না। তারা নির্ভয়ে বাইরে বের হতে পারছে না। দৃশ্যমান বিচার না হলে এই ধর্ষণের পরিমাণ বাড়তেই থাকবে।

এছাড়াও একাধিক শিক্ষার্থী ধর্ষকের ফাঁসি চেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণের প্রতিবাদে রবিবার সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ইতোমধ্যে নিজেদের বিভাগের ব্যানারে প্রতিবাদ জানিয়েছে ৯টি বিভাগ। লোক প্রশাসন, রসায়ন, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবজ্ঞান, পদার্থ, ভূতত্ব, ইংরেজি, ভাষা বিজ্ঞানসহ আরও কয়েকটি বিভাগ প্রতিবাদ জানিয়েছে বলে জানা গেছে।

ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা

সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) শিক্ষার্থীরা। রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

ধর্ষকদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে মুখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ করতে দেখা যায় ঢামেকের নারী শিক্ষার্থীদের। এসময় তারা ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের ফাঁসি দে’, ‘হ্যাং দ্যা রেপিস্ট, ইউ ওয়ান্ট জাস্টিস’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

ঢামেকের অধ্যাপক আব্দুল ওয়াহাব বলেন, যারা ধর্ষণ করে এবং যারা এদের মদদ দেয় তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এর আগে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় ধর্ষণের সেঞ্চুরি করা হয়েছে। ধর্ষকে রাজনৈতিক দল এবং নির্বাহী ক্ষমতা যারা ছিল তারা তাকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। ভোট না দেওয়া কারণে উলঙ্গ করে ভিডিও বানিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, দেশে চলমান এসব ধর্ষণের সুরাহা হতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও এ বিষয় সচেতন হতে হবে। তাদের নেতাকর্মীদের সচেতন করতে হবে। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সমাবেশ এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা প্রতিবাদ করা না পর্যন্ত ধর্ষকদের কেন বিচার শুরু হয় না? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে আমরা দায়িত্ব তুলে দিয়েছি। আপনারা কোনও দলীয় সরকার নন। এরপরে ধর্ষকদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারছেন না। প্রতিটি ধর্ষিত বোনের পাশে আমরা আছি। তাদের ধর্ষণের বিচারের জন্য আমরা রাস্তায় নামবো।

এর আগে ঢামেক শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে এসে জড়ো হয়। বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাধিক শিক্ষক সংহতি জানিয়ে অংশগ্রহণ করেন।

ধর্ষকদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা

দ্রুত সময়ের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। রবিবার দুপুর ১২টার দিকে মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা।

এ সময় ধর্ষকদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও সোমবার (১০ মার্চ) বেলা ১১টায় অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে দুপুর ১টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে, বেলা সাড়ে ১১টার দিক থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে প্যারিস রোডে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে একত্রিত হন।

এ সময় তারা, ‘ধর্ষকের শাস্তি, মৃত্যু মৃত্যু’, ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’, ‘ধর্ষকের ঠিকানা, এ বাংলায় হবে না’, ‘আমার বোন ধর্ষিত কেন? ইন্টেরিম জবাব দে’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘ছাত্র সমাজের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘রাবিয়ানদের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, ধর্ষকের বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

অবস্থান কর্মসূচিতে হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যব্যবস্থা বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘আমাদের দেশে একটার পর একটা ধর্ষণ হয়ে যাচ্ছে। কুমিল্লার তনু থেকে শুরু করে বর্তমানে আছিয়ার ধর্ষণ। কিন্তু আমরা এর কোনও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখতে পাইনি। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনও সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধর্ষকের পরিপূর্ণ শাস্তি কার্যকর করতে পারেনি। এটা সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চরম ব্যর্থতা। আমি এই অস্থায়ী সরকারকে বলতে চাই, আপনারা যদি ধর্ষকের শাস্তি দিতে না পারেন, তাদের জনগণের হাতে ছেড়ে দেন। আমার মা-বোনেরা ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করবে।’

সোমবারের কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাবির সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত ধর্ষকের শাস্তি না হবে, ততদিন পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ঘোষণা করছি। এর সঙ্গে সঙ্গে আগামীকাল বেলা সাড়ে ১১টায় অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করছি। আমাদের একটি দাবি, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে, শুধু আছিয়া, খাদিজা বা তনু না, বিগত সময়ের যত ধর্ষণ হয়েছে সবগুলো শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং ধর্ষকের এমন শাস্তি দিতে হবে, যেন পরবর্তীতে কেউ ধর্ষণ করার আগে হাজারবার চিন্তা করে।’

এ সময় সাধারণ ছাত্রনেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন বিভাগের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি নারী ও শিশুদের নিয়ে হেনস্তা ও নিপীড়নের বেশ কয়েকটি ঘটনার মধ্যেই মাগুরায় আছিয়া নামে একটি শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বিষয়টিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হিসেবে দেখছেন অনেকে।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় দেশব্যাপী ধর্ষণ, সন্ত্রাস ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। ঢাকার বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আজ বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও একই কর্মসূচি রয়েছে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত সময়ের মধ্যে দোষী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকরের দাবি জানান।

ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষণকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে রাজশাহী, খুলনা, সিলেটের শাহজালাল ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও।