তেহরান খালি করতে বললেন ট্রাম্প
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ৫ম দিনে
- আপডেট সময় : ১১:২৬:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
- / 316

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা গড়িয়েছে পঞ্চম দিনে। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ইরানি নাগরিকদের যত দ্রুত সম্ভব রাজধানী তেহরান ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইরান পরমাণু অস্ত্র নির্মাণের পরিকল্পনা পরিহার করে চুক্তিতে সম্মত না হওয়ায় এ সতর্কতা জানাতে বাধ্য হচ্ছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে, কানাডায় অনুষ্ঠিত শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি৭-এর শীর্ষ সম্মেলন শেষ হওয়ার এক দিন আগেই সোমবার দেশে ফিরছেন ট্রাম্প—এমন তথ্য জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। দেশে ফিরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে অংশ নেবেন বলেও জানিয়েছে ফক্স নিউজ।
ট্রুথ সোশ্যাল নামের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প লিখেছেন, “ইরানের উচিত ছিল আমি যে চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বলেছিলাম, সেখানে স্বাক্ষর করা। কী লজ্জা, কী পরিমাণ মানুষের জীবনের অপচয়। সহজ করে বলি, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র পেতে পারে না। আমি বারবার এটা বলেছি। সবারই উচিত দ্রুত তেহরান ছেড়ে চলে যাওয়া।”
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, জি৭ সম্মেলন শুরুর আগেই ট্রাম্পের চলে যাওয়াকে ইতিবাচক মনে করছেন তিনি। তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে ইসরায়েল ও ইরানকে রাজি করানোই ট্রাম্পের প্রধান উদ্দেশ্য।
ম্যাক্রোঁ সাংবাদিকদের বলেন, “একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে যুদ্ধবিরতির ও বিস্তৃত আলোচনা শুরুর। আমার মনে হয় এটি ভালো কিছু। এখন আমাদের দেখতে হবে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো কী করে।”
ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলো মঙ্গলবার ভোরে জানায়, তেহরানে বিস্ফোরণের শব্দ এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ব্যস্ততা লক্ষ্য করা গেছে। নাতাঞ্জ এলাকাতেও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় ছিল বলে জানানো হয়েছে। আসরিরান নিউজ ওয়েবসাইট জানায়, তেহরান থেকে ৩২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই অঞ্চলে রয়েছে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনাগুলো।
রয়টার্সকে হোয়াইট হাউজের এক সহযোগী জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা চালাতে যাচ্ছে—এই গুঞ্জনের কোনো ভিত্তি নেই। একই বক্তব্য দিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথও। ফক্স নিউজকে তিনি বলেন, ট্রাম্প এখনো ইরানের সঙ্গে একটি পরমাণু চুক্তিতে পৌঁছাতে আগ্রহী। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থ রক্ষা করবে বলেও জোর দিয়ে উল্লেখ করেন তিনি।
ইরানের ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরায়েলে মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে বিমান হামলার সতর্কতা এবং বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
ইরানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া হামলায় এখন পর্যন্ত তাঁদের দেশে ২২৪ জন নিহত হয়েছেন, যাঁদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
ইসরায়েল জানিয়েছে, হামলায় তাদের ২৪ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালের স্মতরিচ জানিয়েছেন, ইরানি হামলায় সৃষ্ট ক্ষতির ফলে প্রায় ৩ হাজার ইসরায়েলিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্পের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে দ্রুত যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে ওমান, কাতার ও সৌদি আরবের সহায়তা চেয়েছে তেহরান—এমন তথ্য জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
এই সূত্রগুলোর মধ্যে দুটি ইরানি এবং তিনটি আঞ্চলিক সূত্র জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইরান পরমাণু আলোচনায় নমনীয়তা দেখানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এক্স-এ লিখেছেন, “যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কূটনীতি নিয়ে আন্তরিক হন এবং যুদ্ধ অবসানে আগ্রহী হন, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। ইসরায়েলকে তার আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে, আর আমাদের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ না হলে, আমাদের প্রতিক্রিয়াও অব্যাহত থাকবে।”
সোমবার নেতানিয়াহু সাংবাদিকদের বলেন, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির হুমকি দূর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, “এটা যদি অন্যভাবে অর্জন করা যায়, তাহলেও ভালো। কিন্তু আমরা ৬০ দিনের সুযোগ দিয়েছিলাম।”
শুক্রবার, ইরানে ইসরায়েলি হামলার প্রথম দিন ট্রাম্প রয়টার্সকে বলেন, তিনি ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধে চুক্তিতে পৌঁছাতে ৬০ দিন সময় দিয়েছিলেন। কিন্তু সে সময় পেরিয়ে গেছে চুক্তি ছাড়া।
তেহরান বলছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ এবং তারা পরমাণু অস্ত্র বানানোর কোনো পরিকল্পনা করছে না।
যুদ্ধের কারণে আকাশসীমা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায়, চীনের দূতাবাস দেশটির নাগরিকদের যত দ্রুত সম্ভব স্থলসীমান্ত দিয়ে ইসরায়েল ত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে।
রয়টার্স জানায়, সোমবার ইসরায়েল ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে ব্যাপক হামলা চালালে তেহরান ও তেল আবিবের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার মাত্রা বেড়ে যায়।
পরে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বিবিসিকে জানান, তাঁর ধারণা, ইসরায়েলি হামলায় নাতাঞ্জ কেন্দ্রে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং আনুমানিক ১৫ হাজার সেন্ট্রিফিউজ ধ্বংস হয়েছে। তবে ফরদো পরমাণু কেন্দ্র প্রায় অক্ষত রয়েছে।
এর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত মেনে ইরান তাদের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করতে রাজি হলে সঙ্গে সঙ্গেই ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হয়ে যাবে।
জি৭ সম্মেলনের সাইডলাইনে সোমবার সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, “যেমনটা আমি বলে আসছি, আমার মনে হয় একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে, বা কিছু একটা হবে, কিন্তু একটা চুক্তি হবে, এবং আমি মনে করি সেখানে স্বাক্ষর না করা ইরানের জন্য বোকামি হবে।”
মার্কিন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়ে জি৭ নেতাদের খসড়া বিবৃতিতে ট্রাম্প স্বাক্ষর করবেন না। ওই খসড়া বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইরান কখনোই পরমাণু অস্ত্র পেতে পারে না এবং ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।


















