ঢাকা ০২:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

তারেক রহমান চাইলেই ফিরতে পারেন, জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৫:৩২:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫
  • / 247
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

১৭ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থানকারী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফিরতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

যুক্তরাজ্য সফররত প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি নেতার বৈঠকের আগের দিন বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুপুরে গাজীপুরের সালনা হাইওয়ে থানা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, “তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি চাইলে যে কোনো সময় দেশে ফিরতে পারেন। তবে দেশে ফিরলে তার বিরুদ্ধে যেসব আইনগত বিষয় রয়েছে, সেগুলো বিচার বিভাগের মাধ্যমে মোকাবিলা করতে হবে।”

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১১ মাসে সব সাজা বাতিল এবং চলমান মামলা থেকে খালাস হয়ে যাওয়ার পরও তারেকের দেশে ফেরার কোনো ঘোষণা আসছে না। আওয়ামী লীগ শাসনামলের মতোই বিএনপির নেতারা পরিবেশ সৃষ্টির কথা বলছেন। তবে সেই পরিবেশ কী, তার ব্যাখ্যা করছেন না।

বিএনপি ও সমমনা দলের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে এ নিয়ে প্রশ্নও রাখা হচ্ছে যে, তারেকের ফেরায় কোনো বাধা আছে কি না।

গত ১০ মে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “এখন সরকারের কাছ থেকে আমরা জানতে চাই, তারেক রহমানের দেশে ফেরার পেছনে কোনো বাধা নাই। আপনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনো বাধা নাই।”

৯ দিন পর জাতীয় প্রেস ক্লাবেই বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করা ১২ দলীয় জোটের নেতারাও একই প্রশ্ন রাখেন। সেখানে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, “জাতি জানতে চায় তারেক রহমানের দেশে ফিরতে প্রতিবন্ধকতা কোথায়?”

জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোট প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, “তার দেশে ফিরতে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা আপনারা স্পষ্ট করেন। এটা ইউনূস সরকারকেই স্পষ্ট করতে হবে।”

বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, “তারেক রহমানকে দেশে ফেরার নিশ্চয়তা দিন। কিন্তু আপনারা কোনো কথা বলেননি।”

তবে সরকারের পক্ষ থেকে তারেকের ফেরার বিষয়ে এই প্রথম কোনো বার্তা পাওয়া গেল।

তারেক কবে থেকে যুক্তরাজ্যে
সেনা-নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হন তারেক রহমান। ওই সরকারের আমলে তিনি ১৮ মাস কারাগারে ছিলেন।

বিএনপির পক্ষ থেকে বন্দি অবস্থায় নির্যাতনের অভিযোগও আনা হয়। বিএনপি ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তারেক।

১১ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারকে নিয়ে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছাড়েন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে।

দেশ ছাড়ার সময় সক্রিয় রাজনীতি থেকে পাঁচ বছর দূরে থাকার বিষয়ে একটি চিরকুট সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হয়েছিল। তবে পরে বিএনপি এটি অস্বীকার করে।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান তারেক রহমান। ১৭ বছর ধরেই তিনি সেখানে অবস্থান করছেন।

সে সময় বিএনপিতে তারেক রহমানের পদ ছিল জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বরের জাতীয় সম্মেলনের পর তাকে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের সাজা নিয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তাকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়।

এ জন্য দলের গঠনতন্ত্র সংশোধনও করে বিএনপি। এর আগে ছিল সাজাপ্রাপ্ত কেউ দলের নেতৃত্বে আসতে পারবেন না।

খালেদা জিয়া মুক্ত হওয়ার পরেও তারেক রহমানই কার্যত এখন দল চালাচ্ছেন।

যুক্তরাজ্যে ইউনূস-তারেকের বৈঠক কখন

যুক্তরাজ্য সফরে যাওয়া প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে দেশটিতে গিয়ে জানিয়েছেন সরকার প্রধানের প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

ইউনূস যুক্তরাজ্যে যাওয়ার আগেই এ নিয়ে গুঞ্জন থাকলেও সরকারের তরফে কিছু নিশ্চিত করা হয়নি।

পরে ১০ জুন ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, সরকারের আগ্রহেই এই বৈঠক হচ্ছে।

তিনি জানান, লন্ডনের হোটেল ডোরচেস্টারে শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে এই বৈঠক হতে যাচ্ছে।

সেদিন ফখরুল বলেন, “উনাকে (তারেক রহমান) ফরমালি দাওয়াত করা হয়েছে মিটিংয়ের জন্যে। ১৩ তারিখে (শুক্রবার) ৯টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত লন্ডন টাইমে.. এই সময়টা দেওয়া হয়েছে আরকি।”

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের এই বৈঠকটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হতে পারে বলেও মত দেন বিএনপি নেতা।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

তারেক রহমান চাইলেই ফিরতে পারেন, জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আপডেট সময় : ০৫:৩২:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫

১৭ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থানকারী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফিরতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

যুক্তরাজ্য সফররত প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি নেতার বৈঠকের আগের দিন বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুপুরে গাজীপুরের সালনা হাইওয়ে থানা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, “তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি চাইলে যে কোনো সময় দেশে ফিরতে পারেন। তবে দেশে ফিরলে তার বিরুদ্ধে যেসব আইনগত বিষয় রয়েছে, সেগুলো বিচার বিভাগের মাধ্যমে মোকাবিলা করতে হবে।”

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১১ মাসে সব সাজা বাতিল এবং চলমান মামলা থেকে খালাস হয়ে যাওয়ার পরও তারেকের দেশে ফেরার কোনো ঘোষণা আসছে না। আওয়ামী লীগ শাসনামলের মতোই বিএনপির নেতারা পরিবেশ সৃষ্টির কথা বলছেন। তবে সেই পরিবেশ কী, তার ব্যাখ্যা করছেন না।

বিএনপি ও সমমনা দলের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে এ নিয়ে প্রশ্নও রাখা হচ্ছে যে, তারেকের ফেরায় কোনো বাধা আছে কি না।

গত ১০ মে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “এখন সরকারের কাছ থেকে আমরা জানতে চাই, তারেক রহমানের দেশে ফেরার পেছনে কোনো বাধা নাই। আপনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনো বাধা নাই।”

৯ দিন পর জাতীয় প্রেস ক্লাবেই বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করা ১২ দলীয় জোটের নেতারাও একই প্রশ্ন রাখেন। সেখানে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, “জাতি জানতে চায় তারেক রহমানের দেশে ফিরতে প্রতিবন্ধকতা কোথায়?”

জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোট প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, “তার দেশে ফিরতে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা আপনারা স্পষ্ট করেন। এটা ইউনূস সরকারকেই স্পষ্ট করতে হবে।”

বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, “তারেক রহমানকে দেশে ফেরার নিশ্চয়তা দিন। কিন্তু আপনারা কোনো কথা বলেননি।”

তবে সরকারের পক্ষ থেকে তারেকের ফেরার বিষয়ে এই প্রথম কোনো বার্তা পাওয়া গেল।

তারেক কবে থেকে যুক্তরাজ্যে
সেনা-নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হন তারেক রহমান। ওই সরকারের আমলে তিনি ১৮ মাস কারাগারে ছিলেন।

বিএনপির পক্ষ থেকে বন্দি অবস্থায় নির্যাতনের অভিযোগও আনা হয়। বিএনপি ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তারেক।

১১ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারকে নিয়ে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছাড়েন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে।

দেশ ছাড়ার সময় সক্রিয় রাজনীতি থেকে পাঁচ বছর দূরে থাকার বিষয়ে একটি চিরকুট সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হয়েছিল। তবে পরে বিএনপি এটি অস্বীকার করে।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান তারেক রহমান। ১৭ বছর ধরেই তিনি সেখানে অবস্থান করছেন।

সে সময় বিএনপিতে তারেক রহমানের পদ ছিল জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বরের জাতীয় সম্মেলনের পর তাকে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের সাজা নিয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তাকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়।

এ জন্য দলের গঠনতন্ত্র সংশোধনও করে বিএনপি। এর আগে ছিল সাজাপ্রাপ্ত কেউ দলের নেতৃত্বে আসতে পারবেন না।

খালেদা জিয়া মুক্ত হওয়ার পরেও তারেক রহমানই কার্যত এখন দল চালাচ্ছেন।

যুক্তরাজ্যে ইউনূস-তারেকের বৈঠক কখন

যুক্তরাজ্য সফরে যাওয়া প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে দেশটিতে গিয়ে জানিয়েছেন সরকার প্রধানের প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

ইউনূস যুক্তরাজ্যে যাওয়ার আগেই এ নিয়ে গুঞ্জন থাকলেও সরকারের তরফে কিছু নিশ্চিত করা হয়নি।

পরে ১০ জুন ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, সরকারের আগ্রহেই এই বৈঠক হচ্ছে।

তিনি জানান, লন্ডনের হোটেল ডোরচেস্টারে শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে এই বৈঠক হতে যাচ্ছে।

সেদিন ফখরুল বলেন, “উনাকে (তারেক রহমান) ফরমালি দাওয়াত করা হয়েছে মিটিংয়ের জন্যে। ১৩ তারিখে (শুক্রবার) ৯টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত লন্ডন টাইমে.. এই সময়টা দেওয়া হয়েছে আরকি।”

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের এই বৈঠকটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হতে পারে বলেও মত দেন বিএনপি নেতা।