ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও পাল্টাপাল্টি হামলা, ইসরায়েল আগ্রাসন বন্ধ করলে থামবে ইরান
- আপডেট সময় : ১০:৫৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
- / 240

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও হামলা-পাল্টা হামলা অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোরে ইরানের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইরানও ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
মঙ্গলবার ভোরের দিকে ইরানের রাজধানী তেহরানের বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইরানের সম্প্রচারমাধ্যম প্রেস টিভি জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী সেদিঘি সাবের নিহত হয়েছেন। এর আগে তেহরানের কেন্দ্রস্থল ফেরদৌসি ও ভালি আসরের প্রধান রাস্তার কাছে তাঁর ওপর হামলার খবর পাওয়া যায়।
ইসরায়েলেও কয়েক দফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এরই মধ্যে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলে ৫ দফায় সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে ওঠে। বাসিন্দাদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আশপাশের সুরক্ষিত এলাকায় আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, ইসরায়েল ‘আগ্রাসন’ বন্ধ করলে তাদের দেশও হামলা চালাবে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইসরায়েল যদি ইরানের স্থানীয় সময় ভোর ৪টা থেকে তেহরানে হামলা না চালায়, তাহলে আমরাও কোনো জবাব দেব না। ইসরায়েল যদি এখনই তাদের অবৈধ আগ্রাসন বন্ধ করে, তাহলে ইরানও প্রতিক্রিয়া অব্যাহত রাখবে না।’
অপরদিকে ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার পর কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও নীরব আছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। যুদ্ধবিরতির বিষয়ে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
যুদ্ধবিরতিতে সম্মত ইরান-ইসরায়েল, দাবি ট্রাম্পের
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরান ও ইসরায়েল পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে হয়েছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সোমবার দিবাগত রাতে সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল–এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই দাবি করেন।
ট্রাম্প বলেন, “এই যুদ্ধবিরতি একপর্যায়ে চলমান সংঘাতকে অবসানের পথে নিয়ে যাবে।”
মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিনের ছায়াযুদ্ধ চললেও চলতি বছরের ১৩ জুন তা সরাসরি সংঘাতে রূপ নেয়। ওই দিন ইসরায়েল একযোগে ইরানের বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি ও পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়।
জবাবে ইরানও ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায় নজিরবিহীন হামলা চালায়, যাতে দেশটির বহু ভবন ও স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, ইরানের হামলায় অন্তত ২৫ জন নিহত এবং কয়েক শ মানুষ আহত হয়েছেন। বিপরীতে, ইরানের সরকারি ও বেসরকারি গণমাধ্যম বলছে, ইসরায়েলি হামলায় ছয় শতাধিক নিহত ও প্রায় সহস্রাধিক আহত হয়েছে।
দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যেই শনিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়।
তবে জাতিসংঘের পরমাণু তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা জানিয়েছে, হামলার পর ওই এলাকাগুলোতে কোনো বিকিরণজনিত অস্বাভাবিকতা দেখা যায়নি।
এর জবাবে সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান। ইরানের এমন হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা উল্লেখযোগ্য বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ইরান ও ইসরায়েল দুই দেশই এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এর আগে ইরানের পাল্টা হামলাকে ‘ব্যর্থ প্রতিশোধ’ আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প বলেন, “আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, ওই হামলায় কোনো আমেরিকান হতাহত হয়নি এবং ক্ষয়ক্ষতিও খুব সামান্য। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, তারা তাদের “সিস্টেম” থেকে সবকিছু বের করে ফেলেছে। আশা করি, এখন থেকে আর কোনো ঘৃণা থাকবে না।”
ইরানের হামলাকে দুর্বল প্রতিক্রিয়া বলেও উল্লেখ করেন ট্রাম্প। তিনি লিখেছেন, “পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসের পর ইরানের প্রতিক্রিয়া খুবই দুর্বল ছিল, যা আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম এবং আমরা তার কার্যকর জবাব দিয়েছি।
“তারা ১৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, এর মধ্যে ১৩টি ভূপাতিত হয়েছে এবং একটি ইচ্ছাকৃতভাবে ছাড় দেওয়া হয়, কারণ সেটি হুমকিমুক্ত দিকে যাচ্ছিল।”
পোস্টের শেষে ট্রাম্প ইরান ও ইসরায়েলকে শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। তিনি লেখেন, “আমি ইরানকে আগাম সতর্কবার্তা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই, যার ফলে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। আশা করি, ইরান এখন এই অঞ্চলে শান্তি ও সম্প্রীতির পথে এগিয়ে যাবে এবং আমি ইসরায়েলকেও একই পথে চলার জন্য উৎসাহিত করব।”
ইসরায়েলজুড়ে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত তিন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির দাবির মধ্যেই মঙ্গলবার ভোরে ইসরায়েল জুড়ে কয়েকধাপে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এসব হামলায় দক্ষিণাঞ্চলে তিন জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের ফায়ার সার্ভিস ও উদ্ধার পরিষেবা বিভাগের বরাতে এমনটাই জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি।
জরুরি পরিষেবা বিভাগের প্রধান ম্যাগেন ডেভিড হামলার পরবর্তি পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “আমরা ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের স্থান থেকে ঘন ধোঁয়া উঠতে দেখেছি এবং কাছাকাছি আসার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকটি ভবনে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছি।”
ভোর থেকে তিন ধাপে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান- এমনটাই দাবি করেছে আইডিএফ। মিডল ইস্ট মনিটর বলছে, একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নেগেভ অঞ্চলের বেরশেবা শহরে আঘাত হেনেছে।
ঠিক এমন সময় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইসরায়েলে হতাহতের ঘটনা ঘটল- যখন মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে দাবি করেছেন, ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
ট্রাম্প এই ইরান ও ইসরায়েলের সংঘাতকে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করেছেন। যদিও দুইপক্ষের কেউই আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করেনি।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি। মঙ্গলবার ভোরেও ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ইরানের রাজধানী তেহরান সহ বেশ কয়েকটি শহরে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে।
তবে ইরান বলছে, ইসরায়েল হামলা চালানো বন্ধ করলে- তারাও প্রতিক্রিয়া দেখানো বন্ধ করবে।
ইসরায়েলের আগ্রাসনের জবাবে ভোর ৪টা পর্যন্ত ইরানের সামরিক অভিযান চলেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি লেখেন, “আগ্রাসনের জন্য ইসরায়েলকে শাস্তি দিতে আমাদের শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনীর সামরিক অভিযান শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত, ভোর ৪টা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।”
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, “সমস্ত ইরানি জনগণের পক্ষ থেকে আমি আমাদের সাহসী সশস্ত্র বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই—যারা শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত প্রিয় দেশকে রক্ষা করতে প্রস্তুত এবং শত্রুর আক্রমণের জবাব দিয়েছেন একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।”
এর আগে আরাঘচি তেহরানের স্থানীয় সময় ভোর ৪টার মধ্যে ইসরায়েলকে আগ্রাসন বন্ধের সময়সীমা দেন। সেই পোস্টে তিনি বলেন, “ইসরায়েল যদি চারটার মধ্যে হামলা বন্ধ করে, তাহলে আমাদের আর প্রতিক্রিয়া চালানোর কোনো ইচ্ছা নেই।”
ইসরায়েল হামলা বন্ধ করলে সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখাবে না ইরান
ইসরায়েলের হামলা বন্ধের শর্তে যুদ্ধবিরতির ইঙ্গিত দিয়েছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেছেন, “ইসরায়েল যদি এখনই তাদের ‘অবৈধ আগ্রাসন’ বন্ধ করে, তাহলে ইরানের পক্ষ থেকে আর কোনো সামরিক প্রতিক্রিয়া আসবে না।”
তবে তিনি জানিয়েছেন, এখনো কোনো চুক্তি হয়নি এবং সামরিক অভিযান বন্ধের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে। খবর বিবিসির।
ইরান ও ইসরায়েল পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবির পরেই ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এমন প্রতিক্রিয়া এলো।
মঙ্গলবার সকালে এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া পোস্টে আরাকচি লিখেছেন, “এই মুহূর্তে কোনো ধরনের যুদ্ধবিরতি বা সামরিক অভিযান বন্ধের বিষয়ে কোনো চুক্তি হয়নি। তবে, যদি ইসরায়েলি শাসন এখনই ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে তাদের অবৈধ আগ্রাসন বন্ধ করে, তাহলে আমরা আর প্রতিক্রিয়া জানাতে ইচ্ছুক নই। আমাদের সামরিক অভিযান বন্ধের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে।”
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ইসরায়েলকে স্থানীয় সময় ভোর ৪টার মধ্যে হামলা বন্ধ করতে বলা হয়েছিল, যা ইতিমধ্যেই পার হয়ে গেছে।
আরাকচি আরও লেখেন, “ইরান বহুবার পরিষ্কার করেছে যে, যুদ্ধ শুরু করেছে ইসরায়েল, ইরান নয়। আমরা যুদ্ধ করছি না, প্রতিরোধ করছি।”
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য আসেনি।
এর আগে রাতে ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, ইরান ও ইসরায়েল পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। তিনি বলেন, “এই যুদ্ধবিরতি একপর্যায়ে চলমান সংঘাতকে অবসানের পথে নিয়ে যাবে।”
ট্রাম্প আরও বলেন, ইরানের সাম্প্রতিক হামলায় কোনো মার্কিন নাগরিক আহত হয়নি এবং ক্ষয়ক্ষতি ছিল সীমিত। তিনি এই হামলাকে ‘ব্যর্থ প্রতিশোধ’ বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, “আমরা খুব কার্যকর জবাব দিয়েছি।”
তবে ট্রাম্পের ঘোষণার পরেই ইরানের প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যাচ্ছে, এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি হয়নি। যুদ্ধবিরতির বিষয়টি এখনো অনেকাংশে শর্তসাপেক্ষ।



















