ট্রাম্পের বেশির ভাগ শুল্ক অবৈধ ঘোষণা: মার্কিন আদালত
- আপডেট সময় : ১২:১৬:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৫
- / 155
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছিলেন, তার বেশিরভাগকেই অবৈধ ঘোষণা করেছে দেশটির একটি আপিল আদালত।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই রায় ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে এবং নতুন আইনি জটিলতার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
রায়ে চীন, মেক্সিকো, কানাডাসহ বিশ্বের বহু দেশের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্কের একটি বড় অংশকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। ইউএস কোর্ট অব আপিলস ফর দ্য ফেডারেল সার্কিটের বিচারকদের ৭-৪ ভোটে এ রায় গৃহীত হয়।
ট্রাম্প জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন ব্যবহার করে এসব শুল্ক আরোপ করেছিলেন। তবে আদালত বলেছে, এই পদক্ষেপ ছিল ‘আইনের পরিপন্থি ও অবৈধ’।
তবে ট্রাম্প প্রশাসন যেন সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারে, সেই সুযোগ দিতে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত রায় কার্যকর হবে না বলে জানানো হয়েছে।
এ রায়ের সমালোচনা করে ট্রাম্প ট্রুথ সোশালে লিখেছেন, “এই রায় যদি বহাল থাকে, তাহলে এটি যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেবে।”
তিনি আরও লিখেছেন, “চরম পক্ষপাতদুষ্ট একটি আপিল আদালত আজ ভুলভাবে বলেছে—‘আমাদের শুল্ক সরিয়ে ফেলা উচিত’। কিন্তু তারা জানে, শেষ পর্যন্ত আমেরিকাই জয়ী হবে। এই শুল্ক যদি কখনো বাতিল হয়, তবে তা দেশের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় বয়ে আনবে। এতে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে; অথচ আমাদের শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন।”
জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইনের অধীনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ‘অস্বাভাবিক ও অসাধারণ হুমকির’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। ট্রাম্পের দাবি ছিল, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অসমতা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি; তাই তিনি বাণিজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু আদালত রায়ে বলেছে, শুল্ক আরোপ প্রেসিডেন্টের এখতিয়ারে পড়ে না; বরং এটি কংগ্রেসের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।
১২৭ পৃষ্ঠার রায়ে উল্লেখ করা হয়, জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইনে ‘শুল্ক’ শব্দের কোনো উল্লেখ নেই এবং প্রেসিডেন্টকে সীমাহীনভাবে শুল্ক আরোপের ক্ষমতা দেওয়ার মতো কোনো কাঠামোও এতে নেই।
আদালত বলেছে, কর ও শুল্ক আরোপের ক্ষমতা কংগ্রেসের এখতিয়ারেই থাকবে, এবং এই ক্ষমতার ওপর জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।
রায়ে আরও বলা হয়, ১৯৭৭ সালে কংগ্রেস এই আইন পাস করার সময় প্রেসিডেন্টকে সীমাহীন শুল্ক আরোপের ক্ষমতা দেওয়ার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।
ছোট ব্যবসায়ী ও একাধিক অঙ্গরাজ্যের জোটের করা দুটি মামলার ভিত্তিতেই এ রায় দেওয়া হয়।
গত এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে প্রায় সব দেশের ওপর ১০ শতাংশ ভিত্তি শুল্ক এবং বহু দেশের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। তিনি সেদিনটিকে বর্ণনা করেছিলেন “অন্যায্য বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে মুক্তির দিন” হিসেবে। এরপরই মামলাগুলো দায়ের হয়।
এর আগে গত মে মাসে নিউ ইয়র্কের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত ট্রাম্পের শুল্ককে অবৈধ ঘোষণা করেছিল। তবে আপিল প্রক্রিয়া চলায় তা কার্যকর হয়নি।
সর্বশেষ শুক্রবারের রায়ে চীন, মেক্সিকো ও কানাডার ওপর আরোপিত শুল্কও অবৈধ ঘোষণা করা হয়। যদিও ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, মাদক আমদানি ঠেকাতেই এসব শুল্ক জরুরি ছিল।
তবে প্রেসিডেন্টের অন্য এখতিয়ারের আওতায় স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর বসানো শুল্কের ক্ষেত্রে এ রায় প্রযোজ্য হবে না।
রায় ঘোষণার আগে হোয়াইট হাউসের আইনজীবীরা সতর্ক করে বলেন, শুল্ক বাতিল হলে ১৯২৯ সালের মতো ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা, শেয়ারবাজার ধস এবং আর্থিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
তারা একটি চিঠিতে লিখেছেন: “জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইনের আওতায় প্রেসিডেন্টের শুল্ক আরোপের ক্ষমতা যদি হঠাৎ করে বাতিল হয়ে যায়—তাহলে তা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা, পররাষ্ট্রনীতি ও অর্থনীতির ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে।”


















