ঢাকা ০৪:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ সংশোধন, প্রবাসীদের কতটা সুবিধা হল? রূপসায় গুলিতে সৌদি প্রবাসী যুবক নিহত গণভোট প্রশ্নে বিএনপির প্রস্তাব ভুল, স্বীকার করলেন আমীর খসরু ‘আসন সমঝোতা’ জামায়াতের ‘গোপন’ কৌশল? ট্রাম্প বললেন, নিউইয়র্ক সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে, কমিউনিস্ট শহর হয়ে যাবে সৌদিতে সভা-সমাবেশে কঠোর ব্যবস্থা: সতর্কতা দূতাবাসের মামদানির জয়—ট্রাম্পের ক্ষমতা কি নড়বড়ে হচ্ছে? চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে গুলি বিএনপি প্রার্থী গুলিবিদ্ধ, ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ সরোয়ার নিহত নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র মামদানি, ভাঙলেন সর্বকনিষ্ঠের রেকর্ড পিতৃপরিচয়ে ধানের শীষ পেলেন ২৪ জন, প্রথমবার নির্বাচনে ৮১ জন

জামায়াত নেতা আজহারের মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল, ‘বেকসুর’ খালাস

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০১:১২:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫
  • / 292
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

যুদ্ধাপরাধের মামলায় দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামকে সম্পূর্ণ খালাস দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ছয় বছর পর দ্বিতীয়বার শুনানির পর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত সদস্যের বেঞ্চ মঙ্গলবার (২৭ মে ২০২৫) একমত হয়ে এই রায় ঘোষণা করেন।

জুলাইয়ের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এই রায় আসে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধসংক্রান্ত মামলায় রিভিউ আবেদনের পর আপিল পর্যায়ে এটাই প্রথম খালাসের ঘটনা।

রায় ঘোষণার পর আদালত চত্বরে উল্লাস প্রকাশ করেন আইনজীবীরা, শোনা যায় জামায়াতের ‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগান।

আজহারের আইনজীবী মো. শিশির মনির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এই রায়ের মাধ্যমে সত্যের জয় হয়েছে, মিথ্যার পরাজয় ঘটেছে।”

রায়ের সময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। রায় নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ ও নির্যাতনের ছয়টি ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আজহারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। ২০১৯ সালে প্রথমবার আপিল শুনানি শেষে সেই রায় বহাল রেখেছিলেন তৎকালীন আপিল বেঞ্চ।

সেই দুই রায় বাতিল করে বর্তমান আপিল বিভাগ বলেছে, মামলার তথ্য-প্রমাণ ‘আগের আপিল বিভাগ যথাযথভাবে বিবেচনা করতে পারেনি’।

২০১২ সালের ২২ আগস্ট মগবাজারের নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন তৎকালীন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম। তখন থেকেই তিনি কারাবন্দি।

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে আজহারকে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অন্য কোনো মামলা না থাকলে তাকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

কোন যুক্তিতে খালাস

এই মামলায় ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রেখে রায় দিয়েছিল। এর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয় ২০২০ সালের ১৫ মার্চ। এরপর ২০২০ সালের ১৯ জুলাই সেই রায়ের বিরুদ্ধে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন আজহারুল ইসলাম।

সরকার পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে আপিল বিভাগ গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রিভিউ শুনে ফের আপিল শুনানির সিদ্ধান্ত নেয়। পুনরায় শুনানি শেষে ৮ মে রায়ের তারিখ ধার্য হয় ২৭ মে।

মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে বিচারকরা বেঞ্চে বসার পর রায় ঘোষণা করেন।

রায়ের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন আইনজীবী শিশির মনির।

তিনি বলেন, “আদালত বলেছেন, পূর্বের রায়ে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের ক্রিমিনাল বিচার ব্যবস্থার ধারা পরিবর্তন করা হয়েছিল, যা ছিল একটি মারাত্মক ভুল।

“তারা বলেছেন, আদালতে উপস্থাপিত সাক্ষ্য ও প্রমাণ যথাযথভাবে বিশ্লেষণ না করেই আজহারুল ইসলাম সাহেবকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছিল।

“আরও বলেছেন, এটি ছিল ‘ট্র্যাভেস্টি অব ট্রুথ’, অর্থাৎ সত্যের অপমান।

“আদালতের মতে, যেসব তথ্য-প্রমাণ পেশ করা হয়েছিল, আগের আপিল বিভাগ তা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করেনি।”

শিশির মনির বলেন, “ফলস্বরূপ আজকে জনাব এটিএম আজহারুল ইসলামকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বের বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। আমাদের বিশ্বাস, এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, সত্যের জয় হয়েছে, মিথ্যার পতন ঘটেছে।”

তিনি আরও বলেন, “যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামায়াত ও বিএনপির ছয় শীর্ষ নেতার মধ্যে পাঁচজন জেলেই মৃত্যুবরণ করেছেন। এটা ইতিহাসে এক অনন্য নির্যাতনের উদাহরণ। জনাব আজহারুল ইসলাম সৌভাগ্যবান, তিনি বেঁচে ছিলেন বলেই ন্যায়বিচার পেয়েছেন। আমরা মনে করি, এই রায়ের মাধ্যমে ‘সিন্ডিকেটেড ইনজাস্টিস’-এর অবসান হয়েছে এবং বাংলাদেশের মর্যাদা রক্ষা পেয়েছে।”

শিশির মনির বলেন, “এখন থেকে জামায়াতে ইসলামের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল জনাব এটিএম আজহারুল ইসলাম একজন নির্দোষ মানুষ।”

তিনি জানান, তারা আদালতের কাছে ‘শর্ট অর্ডার’ চেয়েছিলেন এবং আদালত সেটি মঞ্জুর করেছেন। আদালত বলেছেন, আজ ও আগামীকালের মধ্যে যেন শর্ট অর্ডার কার্যকর করে জনাব আজহারুল ইসলাম মুক্তি পান, সেজন্য প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

আদালতের বাইরে উপস্থিত জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহির বলেন, “আমি আদালত এবং দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাই। তাদের আন্দোলন-সংগ্রামের একটি সুন্দর ফল আজ আমরা পেয়েছি।”

রায়ের পর আইন বিশেষজ্ঞ আসিফ নজরুল সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লেখেন, “এই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সুযোগ এনে দিয়েছেন জুলাইয়ের গণআন্দোলনের সাহসী নেতৃত্ব। এই সুযোগ রক্ষা করা এখন আমাদের সবার দায়িত্ব।”

কে এই আজহার, কী ছিল অভিযোগ

এ টি এম আজহারুল ইসলামের জন্ম ১৯৫২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি, রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার বাতাসন লোহানীপাড়া গ্রামে। বাবা নাজির হোসাইন, মা রামিসা বেগম।

১৯৬৮ সালে রংপুর জিলা স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করে ১৯৬৯ সালে ভর্তি হন রংপুর কারমাইকেল কলেজে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ছিলেন জামায়াতের তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি—এ তথ্য মামলার নথিতে উল্লেখ রয়েছে।

সেখানে বলা হয়, স্বাধীনতার আগে আজহার দেশত্যাগ করে সৌদি আরবে চলে যান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।

জিয়াউর রহমানের শাসনামলে জামায়াতে ইসলামী রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হন। ১৯৯১ সালে ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমির এবং ২০০৫ সালে দলের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হন।

আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের গ্রেপ্তারের পর তিনি কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালের ২২ আগস্ট গ্রেপ্তার হন আজহার।

সেই বছরের ১৫ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ছয়টি ঘটনায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর থেকে তার বিচার শুরু হয়।

অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরে তিনি ইসলামী ছাত্র সংঘের রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে ‘আলবদর বাহিনীর রংপুর শাখার কমান্ডার’ ছিলেন। তার নেতৃত্বে গণহত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ ও নির্যাতনের মাধ্যমে রংপুর অঞ্চলে ১৪ শতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়। তবে আপিল বিভাগের খালাসের রায়ে এই সব অভিযোগ থেকেও তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন।

আজহার খালাস পাওয়ায় ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত’ হয়েছে: আইন উপদেষ্টা
যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের বেকসুর খালাস পাওয়ার ঘটনায় ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত’ হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। সুযোগ তৈরির এই কৃতিত্ব ‘জুলাই আন্দোলনের নেতাদের’ মন্তব্য করে মঙ্গলবার ফেইসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা।

আসিফ বলছেন, “নির্দোষ প্রমাণ হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস পেয়েছেন জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে তাঁর করা রিভিউ সর্বসম্মতিতে মঞ্জুর করেছেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ। আজহারুলকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় এবং মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে এর আগে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে আজকের রায়ে।”

আসিফ নজরুল বলেছেন ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত’ হওয়ার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, সেটি রক্ষা করার দায় এখন ‘সবার’। আজহারের আইনজীবী মো শিশির মনির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এই রায়ের মধ্য দিয়ে সত্য জয়ী হয়েছে, মিথ্যা পরাজিত হয়েছে।”

রায়ের সময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। রায়ের পর তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

জামায়াত নেতা আজহারের মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল, ‘বেকসুর’ খালাস

আপডেট সময় : ০১:১২:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫

যুদ্ধাপরাধের মামলায় দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামকে সম্পূর্ণ খালাস দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ছয় বছর পর দ্বিতীয়বার শুনানির পর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত সদস্যের বেঞ্চ মঙ্গলবার (২৭ মে ২০২৫) একমত হয়ে এই রায় ঘোষণা করেন।

জুলাইয়ের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এই রায় আসে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধসংক্রান্ত মামলায় রিভিউ আবেদনের পর আপিল পর্যায়ে এটাই প্রথম খালাসের ঘটনা।

রায় ঘোষণার পর আদালত চত্বরে উল্লাস প্রকাশ করেন আইনজীবীরা, শোনা যায় জামায়াতের ‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগান।

আজহারের আইনজীবী মো. শিশির মনির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এই রায়ের মাধ্যমে সত্যের জয় হয়েছে, মিথ্যার পরাজয় ঘটেছে।”

রায়ের সময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। রায় নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ ও নির্যাতনের ছয়টি ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আজহারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। ২০১৯ সালে প্রথমবার আপিল শুনানি শেষে সেই রায় বহাল রেখেছিলেন তৎকালীন আপিল বেঞ্চ।

সেই দুই রায় বাতিল করে বর্তমান আপিল বিভাগ বলেছে, মামলার তথ্য-প্রমাণ ‘আগের আপিল বিভাগ যথাযথভাবে বিবেচনা করতে পারেনি’।

২০১২ সালের ২২ আগস্ট মগবাজারের নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন তৎকালীন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম। তখন থেকেই তিনি কারাবন্দি।

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে আজহারকে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অন্য কোনো মামলা না থাকলে তাকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

কোন যুক্তিতে খালাস

এই মামলায় ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রেখে রায় দিয়েছিল। এর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয় ২০২০ সালের ১৫ মার্চ। এরপর ২০২০ সালের ১৯ জুলাই সেই রায়ের বিরুদ্ধে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন আজহারুল ইসলাম।

সরকার পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে আপিল বিভাগ গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রিভিউ শুনে ফের আপিল শুনানির সিদ্ধান্ত নেয়। পুনরায় শুনানি শেষে ৮ মে রায়ের তারিখ ধার্য হয় ২৭ মে।

মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে বিচারকরা বেঞ্চে বসার পর রায় ঘোষণা করেন।

রায়ের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন আইনজীবী শিশির মনির।

তিনি বলেন, “আদালত বলেছেন, পূর্বের রায়ে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের ক্রিমিনাল বিচার ব্যবস্থার ধারা পরিবর্তন করা হয়েছিল, যা ছিল একটি মারাত্মক ভুল।

“তারা বলেছেন, আদালতে উপস্থাপিত সাক্ষ্য ও প্রমাণ যথাযথভাবে বিশ্লেষণ না করেই আজহারুল ইসলাম সাহেবকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছিল।

“আরও বলেছেন, এটি ছিল ‘ট্র্যাভেস্টি অব ট্রুথ’, অর্থাৎ সত্যের অপমান।

“আদালতের মতে, যেসব তথ্য-প্রমাণ পেশ করা হয়েছিল, আগের আপিল বিভাগ তা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করেনি।”

শিশির মনির বলেন, “ফলস্বরূপ আজকে জনাব এটিএম আজহারুল ইসলামকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বের বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। আমাদের বিশ্বাস, এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, সত্যের জয় হয়েছে, মিথ্যার পতন ঘটেছে।”

তিনি আরও বলেন, “যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামায়াত ও বিএনপির ছয় শীর্ষ নেতার মধ্যে পাঁচজন জেলেই মৃত্যুবরণ করেছেন। এটা ইতিহাসে এক অনন্য নির্যাতনের উদাহরণ। জনাব আজহারুল ইসলাম সৌভাগ্যবান, তিনি বেঁচে ছিলেন বলেই ন্যায়বিচার পেয়েছেন। আমরা মনে করি, এই রায়ের মাধ্যমে ‘সিন্ডিকেটেড ইনজাস্টিস’-এর অবসান হয়েছে এবং বাংলাদেশের মর্যাদা রক্ষা পেয়েছে।”

শিশির মনির বলেন, “এখন থেকে জামায়াতে ইসলামের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল জনাব এটিএম আজহারুল ইসলাম একজন নির্দোষ মানুষ।”

তিনি জানান, তারা আদালতের কাছে ‘শর্ট অর্ডার’ চেয়েছিলেন এবং আদালত সেটি মঞ্জুর করেছেন। আদালত বলেছেন, আজ ও আগামীকালের মধ্যে যেন শর্ট অর্ডার কার্যকর করে জনাব আজহারুল ইসলাম মুক্তি পান, সেজন্য প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

আদালতের বাইরে উপস্থিত জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহির বলেন, “আমি আদালত এবং দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাই। তাদের আন্দোলন-সংগ্রামের একটি সুন্দর ফল আজ আমরা পেয়েছি।”

রায়ের পর আইন বিশেষজ্ঞ আসিফ নজরুল সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লেখেন, “এই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সুযোগ এনে দিয়েছেন জুলাইয়ের গণআন্দোলনের সাহসী নেতৃত্ব। এই সুযোগ রক্ষা করা এখন আমাদের সবার দায়িত্ব।”

কে এই আজহার, কী ছিল অভিযোগ

এ টি এম আজহারুল ইসলামের জন্ম ১৯৫২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি, রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার বাতাসন লোহানীপাড়া গ্রামে। বাবা নাজির হোসাইন, মা রামিসা বেগম।

১৯৬৮ সালে রংপুর জিলা স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করে ১৯৬৯ সালে ভর্তি হন রংপুর কারমাইকেল কলেজে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ছিলেন জামায়াতের তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি—এ তথ্য মামলার নথিতে উল্লেখ রয়েছে।

সেখানে বলা হয়, স্বাধীনতার আগে আজহার দেশত্যাগ করে সৌদি আরবে চলে যান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।

জিয়াউর রহমানের শাসনামলে জামায়াতে ইসলামী রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হন। ১৯৯১ সালে ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমির এবং ২০০৫ সালে দলের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হন।

আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের গ্রেপ্তারের পর তিনি কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালের ২২ আগস্ট গ্রেপ্তার হন আজহার।

সেই বছরের ১৫ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ছয়টি ঘটনায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর থেকে তার বিচার শুরু হয়।

অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরে তিনি ইসলামী ছাত্র সংঘের রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে ‘আলবদর বাহিনীর রংপুর শাখার কমান্ডার’ ছিলেন। তার নেতৃত্বে গণহত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ ও নির্যাতনের মাধ্যমে রংপুর অঞ্চলে ১৪ শতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়। তবে আপিল বিভাগের খালাসের রায়ে এই সব অভিযোগ থেকেও তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন।

আজহার খালাস পাওয়ায় ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত’ হয়েছে: আইন উপদেষ্টা
যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের বেকসুর খালাস পাওয়ার ঘটনায় ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত’ হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। সুযোগ তৈরির এই কৃতিত্ব ‘জুলাই আন্দোলনের নেতাদের’ মন্তব্য করে মঙ্গলবার ফেইসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা।

আসিফ বলছেন, “নির্দোষ প্রমাণ হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস পেয়েছেন জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে তাঁর করা রিভিউ সর্বসম্মতিতে মঞ্জুর করেছেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ। আজহারুলকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় এবং মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে এর আগে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে আজকের রায়ে।”

আসিফ নজরুল বলেছেন ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত’ হওয়ার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, সেটি রক্ষা করার দায় এখন ‘সবার’। আজহারের আইনজীবী মো শিশির মনির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এই রায়ের মধ্য দিয়ে সত্য জয়ী হয়েছে, মিথ্যা পরাজিত হয়েছে।”

রায়ের সময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। রায়ের পর তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।