এক সপ্তাহের মধ্যে ৩য় বার হামলা
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আবার আগুন-ভাঙচুর
- আপডেট সময় : ০৯:৪৪:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / 146
ঢাকার বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আগুন ও ভাঙচুর করা হয়েছে।
সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে গণঅধিকার পরিষদের লোকজন প্রথমে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে আসেন। এরপর সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে আরও একদল বিক্ষুব্ধ জনতা লাঠিসোটা নিয়ে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের ভেতর ঢুকে পড়ে। তারা ভেতরে ঢুকে দলের ব্যানার-ফেস্টুন-সাইনবোর্ড খুলে ভাঙচুর করে। এরপর চার তলা বিশিষ্ট কার্যালয়ের নিচতলা ও দোতলায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার প্রতিবাদ কর্মসূচি শেষে জাতীয় পার্টি কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটল।
এর আগে নুর আহত হওয়ার পরদিন ২৯ আগস্ট গণঅধিকার পরিষদের কর্মীরা জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। বিক্ষোভকারীরা একপর্যায়ে কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে পুলিশ এসে হামলাকারীদের লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেয়। হামলাকারীদের সরাতে ও কার্যালয়ের আগুন নেভাতে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ।
এরপর গত ৩০ আগস্ট জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে আবার গণঅধিকার কর্মীদের হামালা ঘটনায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের লাঠিচার্জে গুরুতর আহ হয়েছিলেন নুরুল হক নুর। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার আগের দিনও জাতীয় পার্টির অফিসে হামলার ঘটনা ঘটেছিল।
৭ দিনের মধ্যে এ নিয়ে তিনবার আক্রান্ত হলো জাপা কার্যালয়।
জাপা নিষিদ্ধের দাবিতে সর্বদলীয় সংহতি সমাবেশ
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ নেতাকর্মীদের ওপর হামলাকারীদের বিচার, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ এবং জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে সর্বদলীয় সংহতি সমাবেশ হয়। বিকেল ৩টায় রাজধানীর শাহবাগে ছিল এ সমাবেশ। এতে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন দল ও সংগঠনের প্রতিনিধিরা যোগ দেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, “নুরুল হক নুরসহ নেতাকর্মীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা দেশের গণতন্ত্রকামী শক্তির ওপর সরাসরি আঘাত। এ হামলার পেছনে আওয়ামী লীগের দোসর বাহিনী ও জাতীয় পার্টির ষড়যন্ত্র রয়েছে।”
বক্তারা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ ও ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।
সমাবেশ থেকে গণঅধিকার পরিষদ সব নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।
সংহতি সমাবেশ শেষে জাপার কার্যালয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শাহবাগে সংহতি সমাবেশ শেষ করে বিক্ষুব্ধ লোকজন মিছিল নিয়ে সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আসেন। এর কিছুক্ষণ পর লাঠিসোটা নিয়ে লোকজন জড়ো হতে শুরু করে। তারা প্রথমে তালা ভেঙে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের ভেতর ঢুকে ভাঙচুর চালায়। কিছুক্ষণ পর সেখানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
আধাঘণ্টা পর এলো পুলিশের জলকামান
জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে বিক্ষুব্ধরা অবস্থান নেয় অন্যপাশে দাঁড়িয়ে ছিল রমনা থানার পুলিশ সদস্যরা। তারা শান্তিপূর্ণভাবে প্রস্তুতি নিয়ে সেখানে দাঁড়িয়েছিলেন। জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর আধাঘণ্টা পর সেখানে আসে পুলিশের জলকামান। পুলিশ সদস্যরা জলকামান ছুড়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা চলে। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন পুলিশের জলকামান গাড়ি লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে। সেখানে একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিট ও ৭টা ৫৩ মিনিটে দুটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এরপর চার মিনিট পর ৭টা ৫৭ মিনিটে আরও দুটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা ধাওয়া দিয়ে বিক্ষুব্ধদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এর ফলে সেখানে পুলিশ ও বিক্ষুব্ধ জনতার মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেখানকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ হয়ে পড়ে।


















