ঢাকা ০৮:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী! কাতারের রাজপরিবারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যেসব অত্যাধুনিক সুবিধা রয়েছে কাকরদিয়া–তেরাদল–আলিপুর এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকের আত্নপ্রকাশ

জাতিসংঘে নেতানিয়াহুকে ঘিরে বিক্ষোভ, নিষেধাজ্ঞার দাবি

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৪:২২:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / 186

নেতানিয়াহুকে ঘিরে নিউ ইয়র্কে বিক্ষোভ

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরোধিতা জানাতে নিউ ইয়র্কের রাস্তায় নেমে আসেন হাজারো মানুষ। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ ভবনের কাছাকাছি টাইমস স্কয়ারে তারা বিক্ষোভ করেন। একই সময়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) চতুর্থ দিনের সাধারণ বিতর্ক চলাকালে নেতানিয়াহু বক্তব্য শুরু করলে বহু প্রতিনিধি হল ছেড়ে বেরিয়ে যান। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

এ সময় হেগ গ্রুপের বৈঠকে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাসহ কঠোর পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা করেন। প্রায় দুই বছর ধরে গাজায় চলমান হামলার প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

নিউ ইয়র্কের প্রতিবাদকারীদের মধ্যে আল-শরিফ নাসেফ বলেন, নেতানিয়াহু নিউ ইয়র্কে আসতে পারেন না, বরং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) জবাবদিহি করা উচিত। গত বছর আইসিসি তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

তিনি আরও বলেন, “এখানে উপস্থিত প্রতিটি নিউ ইয়র্কবাসী তার গ্রেপ্তারকে সমর্থন করেন। তিনি এখানে অবাঞ্ছিত।”

তার দাবি, “ইনশাল্লাহ, নতুন মেয়র নির্বাচিত হলে তিনি নিউ ইয়র্কে পা রাখলেই গ্রেপ্তার হবেন।”

এই মাসের শুরুর দিকে নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাটিক মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি ঘোষণা দেন, তিনি নির্বাচিত হলে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করবেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য নয়, তাই নিউ ইয়র্ক পুলিশ আইনত তাকে আটক করতে পারবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

নেতানিয়াহুর বক্তব্য শেষে বিক্ষোভকারীরা টাইমস স্কয়ার থেকে পদযাত্রা করে জাতিসংঘ সদর দফতরের কাছে ইস্ট রিভারের একটি পার্কে পৌঁছান। এসময় তারা ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে নিয়ে “ফ্রি প্যালেস্টাইন” ও “অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা চাই” স্লোগান দেন। ঘটনাস্থলে ছিল ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন।

কিছু বিক্ষোভকারী কলোম্বিয়া ও আয়ারল্যান্ডের পতাকাও বহন করেন—যে দুই দেশ প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে।

ফিলিস্তিনি ইয়ুথ মুভমেন্ট–এনওয়াইসি’র সদস্য নাসরিন ইসা বলেন, “এই বিশাল সমাবেশ যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, নেতানিয়াহুকে লাল গালিচায় স্বাগত জানানো মেনে নেওয়া যায় না।”

তার মতে, “প্রতিবাদের তাৎক্ষণিক ফলাফল নাও আসতে পারে, তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা সৃষ্টির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে বাস্তব পরিবর্তনের পথ তৈরি হয়।”

অন্যদিকে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মেগান ফ্রেডেট একটি প্ল্যাকার্ডে লিখেন: “শিশুখাদ্য কি হামাস???” এর মাধ্যমে তিনি গাজায় খাদ্যপণ্যের ওপর ইসরায়েলের অবরোধের প্রতিবাদ জানান, যা জাতিসংঘ-সমর্থিত সংস্থাগুলোর মতে প্রাণঘাতী দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছে।

তিনি বলেন, একজন নিউ ইয়র্কবাসী হিসেবে নেতানিয়াহুকে নিজের শহরে দেখে তিনি “ঘৃণা” ও “ক্ষোভ” অনুভব করছেন।

বিক্ষোভকারীরা জাতিসংঘ ভবনের নিরাপত্তা বেষ্টনীর কাছে পৌঁছালে, হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত ইসরায়েলি ও ইহুদিদের সঙ্গে মুখোমুখি হন। তবে পুলিশ দুই পক্ষকে আলাদা করে দেয় এবং ইসরায়েলপন্থি সমাবেশকে ব্যারিকেডের ভেতরে সীমিত রাখে।

জাতিসংঘের ভেতরে নেতানিয়াহু বক্তব্য দেওয়ার সময় হল আংশিক খালি হয়ে যায়। বক্তব্য শেষে করতালি শোনা যায় কেবল একাংশ থেকে।

নেতানিয়াহুর দফতর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দাবি করে, গাজার বাসিন্দাদের ফোন হ্যাক করে তার বক্তব্য সরাসরি সেখানে সম্প্রচার করা হয়েছে। বার্তায় বলা হয়, “অভূতপূর্বভাবে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন, ইসরায়েলি সেনারা গাজার জনগণ ও হামাস সদস্যদের ফোনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং তার ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করছে।”

শুক্রবার হেগ গ্রুপভুক্ত ৩৪ দেশের কূটনীতিকরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শুধু প্রতীকী বিবৃতি নয়, কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর সতর্ক করে বলেন, “এখনই ব্যবস্থা না নিলে শিশুদের মৃত্যু চলতেই থাকবে।”

তিনি যোগ করেন, “ফিলিস্তিনি শিশুরা হত্যা হচ্ছে, অনাহারে মারা যাচ্ছে, অনাথ হচ্ছে, আগুনে পুড়ছে, মানসিক আঘাত পাচ্ছে। পরিবার ভেঙে যাচ্ছে, জীবন ধ্বংস হচ্ছে, জমি দখল হচ্ছে, ভূখণ্ড দখল হচ্ছে।”

এই বৈঠকে কলোম্বিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, কাতার, তুরস্ক, মেক্সিকো, সৌদি আরব, ব্রাজিল, আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও উরুগুয়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

জাতিসংঘে নেতানিয়াহুকে ঘিরে বিক্ষোভ, নিষেধাজ্ঞার দাবি

আপডেট সময় : ০৪:২২:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরোধিতা জানাতে নিউ ইয়র্কের রাস্তায় নেমে আসেন হাজারো মানুষ। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ ভবনের কাছাকাছি টাইমস স্কয়ারে তারা বিক্ষোভ করেন। একই সময়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) চতুর্থ দিনের সাধারণ বিতর্ক চলাকালে নেতানিয়াহু বক্তব্য শুরু করলে বহু প্রতিনিধি হল ছেড়ে বেরিয়ে যান। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

এ সময় হেগ গ্রুপের বৈঠকে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাসহ কঠোর পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা করেন। প্রায় দুই বছর ধরে গাজায় চলমান হামলার প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

নিউ ইয়র্কের প্রতিবাদকারীদের মধ্যে আল-শরিফ নাসেফ বলেন, নেতানিয়াহু নিউ ইয়র্কে আসতে পারেন না, বরং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) জবাবদিহি করা উচিত। গত বছর আইসিসি তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

তিনি আরও বলেন, “এখানে উপস্থিত প্রতিটি নিউ ইয়র্কবাসী তার গ্রেপ্তারকে সমর্থন করেন। তিনি এখানে অবাঞ্ছিত।”

তার দাবি, “ইনশাল্লাহ, নতুন মেয়র নির্বাচিত হলে তিনি নিউ ইয়র্কে পা রাখলেই গ্রেপ্তার হবেন।”

এই মাসের শুরুর দিকে নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাটিক মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি ঘোষণা দেন, তিনি নির্বাচিত হলে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করবেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য নয়, তাই নিউ ইয়র্ক পুলিশ আইনত তাকে আটক করতে পারবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

নেতানিয়াহুর বক্তব্য শেষে বিক্ষোভকারীরা টাইমস স্কয়ার থেকে পদযাত্রা করে জাতিসংঘ সদর দফতরের কাছে ইস্ট রিভারের একটি পার্কে পৌঁছান। এসময় তারা ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে নিয়ে “ফ্রি প্যালেস্টাইন” ও “অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা চাই” স্লোগান দেন। ঘটনাস্থলে ছিল ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন।

কিছু বিক্ষোভকারী কলোম্বিয়া ও আয়ারল্যান্ডের পতাকাও বহন করেন—যে দুই দেশ প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে।

ফিলিস্তিনি ইয়ুথ মুভমেন্ট–এনওয়াইসি’র সদস্য নাসরিন ইসা বলেন, “এই বিশাল সমাবেশ যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, নেতানিয়াহুকে লাল গালিচায় স্বাগত জানানো মেনে নেওয়া যায় না।”

তার মতে, “প্রতিবাদের তাৎক্ষণিক ফলাফল নাও আসতে পারে, তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা সৃষ্টির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে বাস্তব পরিবর্তনের পথ তৈরি হয়।”

অন্যদিকে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মেগান ফ্রেডেট একটি প্ল্যাকার্ডে লিখেন: “শিশুখাদ্য কি হামাস???” এর মাধ্যমে তিনি গাজায় খাদ্যপণ্যের ওপর ইসরায়েলের অবরোধের প্রতিবাদ জানান, যা জাতিসংঘ-সমর্থিত সংস্থাগুলোর মতে প্রাণঘাতী দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছে।

তিনি বলেন, একজন নিউ ইয়র্কবাসী হিসেবে নেতানিয়াহুকে নিজের শহরে দেখে তিনি “ঘৃণা” ও “ক্ষোভ” অনুভব করছেন।

বিক্ষোভকারীরা জাতিসংঘ ভবনের নিরাপত্তা বেষ্টনীর কাছে পৌঁছালে, হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত ইসরায়েলি ও ইহুদিদের সঙ্গে মুখোমুখি হন। তবে পুলিশ দুই পক্ষকে আলাদা করে দেয় এবং ইসরায়েলপন্থি সমাবেশকে ব্যারিকেডের ভেতরে সীমিত রাখে।

জাতিসংঘের ভেতরে নেতানিয়াহু বক্তব্য দেওয়ার সময় হল আংশিক খালি হয়ে যায়। বক্তব্য শেষে করতালি শোনা যায় কেবল একাংশ থেকে।

নেতানিয়াহুর দফতর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দাবি করে, গাজার বাসিন্দাদের ফোন হ্যাক করে তার বক্তব্য সরাসরি সেখানে সম্প্রচার করা হয়েছে। বার্তায় বলা হয়, “অভূতপূর্বভাবে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন, ইসরায়েলি সেনারা গাজার জনগণ ও হামাস সদস্যদের ফোনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং তার ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করছে।”

শুক্রবার হেগ গ্রুপভুক্ত ৩৪ দেশের কূটনীতিকরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শুধু প্রতীকী বিবৃতি নয়, কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর সতর্ক করে বলেন, “এখনই ব্যবস্থা না নিলে শিশুদের মৃত্যু চলতেই থাকবে।”

তিনি যোগ করেন, “ফিলিস্তিনি শিশুরা হত্যা হচ্ছে, অনাহারে মারা যাচ্ছে, অনাথ হচ্ছে, আগুনে পুড়ছে, মানসিক আঘাত পাচ্ছে। পরিবার ভেঙে যাচ্ছে, জীবন ধ্বংস হচ্ছে, জমি দখল হচ্ছে, ভূখণ্ড দখল হচ্ছে।”

এই বৈঠকে কলোম্বিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, কাতার, তুরস্ক, মেক্সিকো, সৌদি আরব, ব্রাজিল, আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও উরুগুয়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।