ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের নেতৃত্বে সঞ্চয়পত্র জালিয়াতি: ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা
- আপডেট সময় : ১২:০৬:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
- / 95
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঞ্চয়পত্র সার্ভারে জালিয়াতি করে কোটি টাকার সরকারি অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মোহাম্মদ মারুফ এলাহী রনিসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে অতিরিক্ত পরিচালক আবুল খায়ের মো. খালিদ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন।
অন্য আসামিরা হলেন—মোহিউদ্দিন আহমেদ, এনআরবিসি ব্যাংকের দিনাজপুর উপশাখার গ্রাহক মো. আরিফুর রহমান মিম এবং তার পরিচয় শনাক্তকারী আল আমিন।
পুলিশ ইতোমধ্যে আরিফুর রহমানকে মতিঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে।
জালিয়াতির কৌশল
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, জালিয়াত চক্র জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের এনএসসি সার্ভারে অননুমোদিতভাবে প্রবেশ করে গ্রাহকদের তথ্য পরিবর্তন করে সঞ্চয়পত্রের অর্থ অন্য ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইউজার আইডি ব্যবহার করে একাধিক সঞ্চয়পত্রকে নগদায়ন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করা হয়।
গত ২৩ থেকে ২৭ অক্টোবরের মধ্যে তিনটি সঞ্চয়পত্রের তথ্য পরিবর্তন করে ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও এনআরবিসি ব্যাংকের হিসাবে মোট ৭৫ লাখ টাকা স্থানান্তরের চেষ্টা হয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্রুত পদক্ষেপে ৫০ লাখ টাকা উদ্ধার করে সরকারি খাতে ফেরত জমা দেওয়া হয়।
আরিফুর রহমানের হিসাবে জাল লেনদেন
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, মহা হিসাব নিরীক্ষণ কার্যালয়ের কর্মকর্তা এসএম রেজভীর নামে কেনা ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভুয়া প্রক্রিয়ায় নগদায়ন করে আরিফুর রহমান মিমের হিসাবে জমা হয়। পরে ঢাকার দুটি শাখা থেকে ওই টাকা উত্তোলন করা হয়।
আরিফুর রহমানের লেনদেন সীমা ছিল ২ লাখ টাকা; কিন্তু জালিয়াতির মাধ্যমে তা বাড়িয়ে ১০ লাখ করা হয়।
রনির নামে সঞ্চয়পত্রের অর্থ
ছাত্রদলের সাবেক নেতা মারুফ এলাহী রনির নামে থাকা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের হিসাবে দুটি সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে ৫০ লাখ টাকা জমা হয়। উভয় সঞ্চয়পত্রই ছিল পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র। তবে সময়মতো জালিয়াতি শনাক্ত হওয়ায় টাকা উত্তোলনের আগেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা আটকে দেয়।
তদন্ত ও নিরাপত্তা জোরদার
ঘটনার পর বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, বিএফআইইউ এবং এনআরবিসি ব্যাংক পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সংশ্লিষ্ট ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ডধারী তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট কম্পিউটার জব্দ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নিরাপত্তা জোরদারের জন্য নতুন ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ইস্যু করা হয়েছে। রবিবার থেকে কার্যক্রম স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।’
সঞ্চয়পত্র কার্যক্রমে ভোগান্তি
ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও নগদায়ন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকরা। বর্তমানে তিন লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র চলমান রয়েছে, যার প্রায় ৩০ শতাংশ বিক্রি হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের মাধ্যমে।
এদিকে বিএফআইইউ ইতোমধ্যে সন্দেহভাজন সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে।

















