‘চাপে’ থাকা সরকার সমর্থন খুঁজছে, বিপদে পড়লেই ‘ফ্যাসিবাদ’ ফেরার ভয়
- আপডেট সময় : ১০:১২:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫
- / 379

মাইলস্টোন ট্রাজেডির পর বিক্ষোভ-সংঘাতের মধ্যে আবারও রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকে দৃশ্যমান ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর ‘পূর্ণ সমর্থন’ নিয়ে ক্ষমতায় বসা এই অন্তর্বর্তী সরকার গত এক বছরে কয়েক দফা এমন পরিস্থিতি মুখোমুখি হয়েছে। প্রতিবারই পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারপ্রধানকে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বসতে দেখা গেছে।
এবার সরকারপ্রধানের ঐক্যের আহ্বানের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন, সরকার কোনো ‘সংকটে’ পড়লে তখনই কেবল ডাকা হয় রাজনৈতিক দলগুলোকে। `ফ্যাসিবাদ’ ফিরে আসার ভয় দেখিয়ে, ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য’ প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে। বাকি সময়টাতে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে সরকার পরিস্থিতি ‘বেসামাল’ আর ‘লেজেগোবরে’ করে ফেলে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
এ অবস্থায় সরকার যে ‘চাপের’ মধ্যে আছে এবং সে কারণেই রাজনৈতিক দলগুলোর ‘শরণাপন্ন’ হওয়া-এমন কথাও এসেছে রাজনীতি বিশ্লেষকের কাছ থেকে।
ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সোমবার (২১ জুলাই) প্রশিক্ষণে থাকা বিমান বাহিনীর যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের পর বিভিন্ন রকমের সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার।
রাষ্ট্রীয় শোকের দিন মঙ্গলবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে সচিবালয় এলাকায় সংঘাত হয়েছে।
দুর্ঘটনায় নিহতের ‘লাশ লুকানোর গুজবের’ মধ্যে এদিন সরকারের দুই উপদেষ্টাকে মাইলস্টোন স্কুলে ৯ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল।
দিনভর এই বিক্ষোভ-সংঘাতের পর মঙ্গলবার রাতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা।
বুধবার (২৩ জুলাই) দ্বিতীয় দফায় সিপিবি, বাসদ, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ১৩ দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি।
এদিন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কড়া সমালোচনা করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ‘কোটায়’ অন্তর্বর্তী সরকারে এসেছেন বলে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, “আমাদের একজন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আছে, আপনারা তাকে চেনেন? তিনি মুহাম্মদ ইউনূসের ভাই-বেরাদর কোঠায় এসেছেন। ইউনুসের স্বজনপ্রীতির সবচেয়ে বড় উদাহরণ এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। সব সময় বলে আসছি, এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কোনো প্রয়োজন নাই।”
দুই দফা বৈঠকে ‘ফ্যাসিবাদের’ বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যকে দৃশ্যমান করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। দলগুলোও এ বিষয়ে সরকারকে ‘পূর্ণ সমর্থন’ দিয়ে নিয়মিত তাদের সঙ্গে বসে পরামর্শ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
সরকারের তরফে বলা হয়েছে, ‘ঘন ঘন’ বসার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শের সঙ্গে তারা একমত। নির্বাচন কাছাকাছি এলে সেভাবেই করা হবে।
বুধবার বৈঠক থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, “আমি যেটা বুঝেছি, প্রধান উপদেষ্টা উৎকণ্ঠিত। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) আমাদের বলেছেন, আমরা একটা সঠিক নির্বাচন যাতে করতে পারি, সেই দিকে আগাবো এবং এটি সবাই মিলে করতে হবে। শুধু পুলিশের উপর নির্ভর করলে হবে না, জনগণের উপর নির্ভর করতে হবে।”
তবে উষ্মা প্রকাশ করে প্রিন্স বলেন, দেশে সংকট হলেই শুধু প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোকে ডাকেন এবং দেখান যে সবাই একমত। এর পর থেকে সরকার রাজনৈতিক দলের পরামর্শ গ্রহণ না করলে প্রধান উপদেষ্টার এমন আহ্বানে সাড়া দেবেন না তারা।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “সরকার অভ্যুত্থানের পরই, রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে তাদের সাথে আলাপ, আলোচনা, পরামর্শ না করে, এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা তারা তৈরি করেছে। আপনারা জানেন, এই সরকার যখন খুবই বিপদে পড়ে, আর সামলাতে পারছে না, টালমাটাল অবস্থা, এবং মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে, তখন রাজনৈতিক দলগুলোকে, আমাদেরকে ডেকে দেখায় যে, এরা আমার সাথে আছে। আমরা সরকারকে সমর্থন করেছি ঠিক, কিন্তু অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থি কোনো কাজ করলে আমরা এই সরকারকে সমর্থন করব না।”
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের মতে, বিপদের সময় না ডেকে নিয়মিতভাবে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের সম্পৃক্ততা আরও বাড়ানো দরকার। তিনি বলেন, “আমরা বলেছি, আপনি সবচেয়ে জননন্দিত, রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থনে আসা সরকার হলেও মানুষের মাঝে ধারণা তৈরি হয়েছে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুর্বল সরকার। এ কারণে দেশে একটা আধা-নৈরাজ্যের অবস্থা ইতোমেধ্যে তৈরি হয়েছে।”
সরকার সমস্ত দিক থেকে ‘লেজেগোবরে’ করে ফেলেছে মন্তব্য করে বামপন্থি দলের এই নেতা বলেন, “আমরা দেখছি, সরকারের মধ্যে অনেকগুলো সরকার কাজ করছে। কার্যত প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে আমরা কেবল একটা সরকার দেখতে চাই। এই অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আরও অস্থিতিশীল অবস্থা, নৈরাজ্যিক অবস্থা, আরও নাশকতার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন সাইফুল হক। “নির্বাচন কাছে আসলে পরিস্থিতি আরও বেসামাল হতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কাটা ব্যক্ত করেছি।”
বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ‘মতপার্থক্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ থাকলেও ‘ফ্যাসিবাদের’ বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যকে আরও দৃশ্যমান করার বিষয়ে জোর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠকে তিনি বলেছেন, “মতপার্থক্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যকে আরও দৃশ্যমান করা দরকার। তা না হলে তারা এটাকে সুযোগ মনে করছে।”
ইউনূস বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছরে আমাদের আয়োজন ছিল সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে নিয়ে অতীতকে স্মরণ করা, সেজন্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলাম। এতে করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের মধ্যে ঐক্যটা দৃশ্যমান হত। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই পরাজিত শক্তির নানা ষড়যন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে অংশ নেওয়া সব দল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও গণঐক্য বজায় রাখার বিষয়ে ‘একমত’ পোষণ করেছে। দলগুলোর নেতারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রধান উপদেষ্টাকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
যদিও তার আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ থেকে ১০ মিনিটের ‘প্রতীকী ওয়াকআউট’ করে বাম ধারার তিন দল–সিপিবি, বাসদ ও বাংলাদেশ জাসদ।
বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনার পর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘হামলার’ প্রতিবাদে এসব দলের প্রতিনিধিরা বৈঠক থেকে ওয়াকআউট করেন।
মাইলস্টোন স্কুলে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার আগেও ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে পড়ে সরকার।
মে মাসের শেষের দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে বিএনপির মাঠের কর্মসূচি এবং সেনাবাহিনীর প্রধানের বক্তব্য ঘিরে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস পদত্যাগের বিষয়ে ‘ভাবছেন’ বলে আলোচনায় আসে।
উত্তেজনাপূর্ণ ওই সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও জাতীয় নির্বাচনের ‘রোডম্যাপ’ চেয়ে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচি চলতে থাকে। এরপর জুন মাসে লন্ডন বৈঠকে আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে একমত হন মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
৯ জুলাই সাম্প্রতিক সময়ে মির্টফোর্ডে এক ব্যবসায়ীকে মাথা থেঁতলে হত্যার ঘটনায় বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনাকে বিএনপির তরফে নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত করার অজুহাত দাবি করা হয়। দলটি নির্বাচন ঘিরে ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগও তোলে।
এরই মধ্যে গত ১৬ জুলাই এনসিপির কর্মসূচি ঘিরে গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৫ জন নিহত হয়েছেন। এমন সংঘাত এড়াতে আগে থেকে প্রস্তুতি না থাকার কথা বলে সরকার সমালোচনা হয়েছে।
সোমবার বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় সরকার ‘ঠিকভাবে’ সাড়া দিতে পেরেছে কি-না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা পেছাতে গিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা নিয়েও ক্ষোভ-বিক্ষোভের মুখে পড়ে সরকার।
দুর্ঘটনার পর থেকে এর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা ও রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বসা বা ‘চাপ’ সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে একধরনের ‘সমন্বয়হীনতা’ দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক স ম আলী রেজা।
দেশের সবার মত সরকারও এ ঘটনায় শোকবিহ্বল তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমার কাছে একটু সমন্বয়হীনতা মনে হচ্ছে আরকি। দেখুন বিমান বাহিনী এবং আমাদের যে সেক্টরটা এটার সঙ্গে জড়িত তারা কেন জানি এটা থেকে একটু দূরে, আমরা খেয়াল করছি। তাই না? এটাকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা। অন্তত কারণ দর্শানো, কারণটা শনাক্ত করা, যাতে ভবিষ্যতে এরকম সমস্যা না হয় এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিটাকে সামাল দেওয়া যায়- এই বিষয়টা এখানে চলে আসছে। তো সেখানে আমার কাছে একটু মনে হয়েছে, একটু সমন্বয়হীনতা আছে আরকি।”
উপদেষ্টাদের ওপর বিক্ষুব্ধ জনতা চড়াও হয়েছেন এবং শিক্ষা উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টাকে নয় ঘন্টা মাইলস্টোন স্কুলে অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে। এসব মোকাবেলায় সরকারের তরফে ‘অবহেলা’ দেখছেন না অধ্যাপক আলী রেজা।
তার ভাষ্য, ‘‘পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ আসবে দুর্ঘটনার পরে, আর তাদের সঙ্গে বার্ন ইউনিট। তারা তাদের মত চেষ্টা করছেন। কিন্তু মোটাদাগে সরকারের তরফ থেকে সাড়া নেই, তা তো না। সরকারের উপদেষ্টারাও কিন্তু ঘটনাস্থলে গেছেন, তারপরে শিক্ষা উপদেষ্টা, তারপরে অন্য উপদেষ্টা এরা গেছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। গতকাল তারাও এক ধরনের একটা বিক্ষুব্ধতার মুখে পড়েছিলেন। তো তারপরেও তারা তো সেখানে গেছেন। ফলে সরকার যে এটাকে খুব অবহেলা করছে, সেটা কিন্তু না।”
সরকার ‘চাপ’ বোধ করার পর যে রাজনৈতিক দলের শরণাপন্ন হয়েছে, তাতে একমত রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আগে থেকে না বসার ফলে এবং সমন্বয়হীনতার কারণে এই চাপ তৈরি হয়েছে বলে তার ধারণা।
তিনি বলেন, “তবে এক ধরনের একটা চাপ তারা খুব বোধ করছেন কিন্তু। এটা আপনার, আমার বা আমাদের যে বোধগম্যতা তাতে এক ধরনের চাপ যে তারা বোধ করছেন, এটাই আমার মনে হয়। ওটাকেই কিন্তু আমি সমন্বয়হীনতা বলছি। কারণ এটা একটা অরাজনৈতিক একটা সরকার। এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। এবং এখানে কিছু বিরুদ্ধ শক্তিও আছে, এর ভেতর দিয়ে তারাও এখানে কিছু অপঘাত করা, এখান থেকে কিছু রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। খুব স্বাভাবিক এটা, আমাদের মত দেশের যে রাজনীতি সেজন্য। সেক্ষেত্রে সরকার খুব দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোকে আমলে নিলে সরকারের জন্যই সুবিধা। কয়েকটা দল একটা প্রতীকী ওয়াকআউট করে, এটা একটা চাপের কৌশল। এবং আমি মনে করি যে তাদের এই যে প্রতিক্রিয়া, এটা এই সমন্বয়হীনতার জন্যই, মনে হচ্ছে আরকি।”
বৈঠকে প্রতিমাসে অন্তত একবার বসার পরামর্শ প্রধান উপদেষ্টাকে দেওয়ার কথা তুলে ধরে বাসদের ফিরোজ বলেন, “আমরা বলেছি, অভ্যুত্থানকে সফল করতে হলে, চেতনাকে ধরে রাখতে হলে, আমাদের রাজনৈতিক ঐক্য লাগবে এবং এই ঐক্য আমরা ধরে রাখব। সরকারকে বলেছি, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে, অন্তত প্রতিমাসে একবার বসে তাদের পরামর্শ মতামতের ভিত্তিতে সরকার পরিচালনা করবেন।”
কী বলছে সরকার
রাজনৈতিক দলগুলোর তরফে প্রতি মাসে নিয়মিত বসার বিষয়ে প্রস্তাব আসার কথা তুলে ধরে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, তাদের সঙ্গে ‘ঘন ঘন’ বসার বিষয়ে ভাবছেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস।
তিনি বলেন, “দলগুলোর কেউ কেউ বলেছিলেন- এই ধরনের সংকট মোকাবেলায় মাসে অন্তত একবার যেন দলগুলোর সঙ্গে বসা হয়, এমনটা কেউ কেউ বলেছিলেন। আর প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে বলেছেন- এখন নির্বাচনের সময় কাছে চলে আসছে। সেই সময়ে অন্তর্ঘাত ধরনের ঘটনাও বেড়ে যাচ্ছে। সেজন্য সরকার আরও ঘন ঘন দলগুলোর সঙ্গে বসার চিন্তা করছে।”
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, “স্বার্থন্বেষী গোষ্ঠী যে কোনো কিছুর সুযোগ নিচ্ছে। মাইলস্টোনের মত দুর্ঘটনার সুযোগও তারা নেওয়ার চেষ্টা করলো। এগুলোর জন্য প্রধান উপদেষ্টা চাচ্ছিলেন যেন আরও ঘন ঘন বসা যায়।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে না হলেও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের রাজনৈতিক দলগুলোর নিয়মিত আলাপ-আলোচনা চলার কথা তুলে ধরেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
‘বিপদে পড়লে’ ডাকা হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর এমন অভিযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “তাদের এমন মন্তব্যের কী হেতু আছে আমি বুঝতে পারছি না। ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে তো সবগুলোর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের নিয়মিত আলাপ হচ্ছে।”



















