ক্লাস বাদ দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের
- আপডেট সময় : ০৬:০৪:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
- / 123
ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে কর্মবিরতিও অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন আজিজী।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সচিবালয়ের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শিক্ষকদের তিন দফা দাবির বিষয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার ও শিক্ষা সচিব রেহানা পারভীনের বৈঠক শেষে তিনি এ তথ্য জানান।
বৈঠকে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, অর্থ উপদেষ্টা বিদেশ থেকে দেশে ফিরলে আগামী অর্থবছর থেকে শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়ার ভাতা ১০ শতাংশ বাড়ানোর বিষয়ে তিনি আহ্বান জানাবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এ সময় শিক্ষা সচিব রেহানা পারভীন বলেন, আগামী ১ নভেম্বর থেকে ৫ শতাংশ বা সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়ার ভাতা প্রদান করা হবে। একই সঙ্গে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রস্তাবনা গ্রহণ করে আন্দোলন প্রত্যাহারের আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া আগামী বেতন স্কেলে শিক্ষকদের দাবিগুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে বলেও আশ্বস্ত করেন শিক্ষা সচিব।
বৈঠক শেষে এমপিওভুক্ত শিক্ষক প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, “আপনারা জানেন, আমরা গত ১২ অক্টোবর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব ও শহীদ মিনারের সামনে টানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে টানা ২২ দিন এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলন করেছিলাম। তখন শিক্ষা উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন— উৎসবভাতা ও অন্যান্য সুবিধা বাজেট থেকে দেওয়া হবে এবং শিক্ষকদের জন্য বিনোদন ভাতাও বাড়ানো হবে। সেই আশ্বাসে আমরা আন্দোলন স্থগিত করে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাই। তখন আমরা বলেছিলাম, প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হলে আবার আন্দোলনে ফিরব। সরকার উৎসবভাতা ২৫ থেকে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে— এজন্য ধন্যবাদ জানাই।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষা উপদেষ্টা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অন্যান্য ভাতাও বাড়ানো হবে এবং বাজেটে বরাদ্দ থাকবে। সেই অনুযায়ী আমরা আগস্টে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিই— ১৩ আগস্টের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে আন্দোলনে যাবো। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের ভাতা ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ ও বাড়ি ভাড়া ৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৩ আগস্ট থেকে আন্দোলনে যাই। পরে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে সভায় বাড়ি ভাড়া ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিলে তিনি রাজি হয়েছিলেন।”
আজিজী বলেন, “আজ আমাদের আবার ডাকা হয়েছিল সমস্যার সমাধানের জন্য। আমরাও চাই সমস্যার সমাধান হোক, যাতে আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে যেতে পারি। কিন্তু আজকের বৈঠকে তারা আগের সিদ্ধান্ত থেকে এক চুলও সরেননি। আলোচনার নামে শুধু চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম— বর্তমান বাজেট থেকে ১০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া এবং আগামী বাজেট থেকে আরও ১০ শতাংশ বাড়ানো হবে— এই সিদ্ধান্ত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করতে হবে। কিন্তু তারা তা করেননি। এরপর বলেছি, আমাদের পক্ষে এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। উপদেষ্টা উঠে চলে গেছেন, আমরাও সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছি।”
শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। সাত লাখ কোটি টাকার বাজেটে সরকার হাজার কোটি টাকায় আসবাব কিনতে পারে, নানা প্রকল্পে অপচয় হয়— কিন্তু শিক্ষকদের তিন হাজার টাকা দিতে পারে না। এ রাষ্ট্র দেউলিয়া হয়ে যাক— তাতে আমাদের আপত্তি নেই।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা কোনো অবস্থাতেই শ্রেণিকক্ষে ফিরব না। বিশৃঙ্খলা নয়, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অনশন চালিয়ে যাবো। প্রয়োজনে শহীদ মিনারে আমাদের হত্যা করুক— দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যাবো না। যেতে হলে আমাদের লাশ যাবে।”
শেষে আজিজী বলেন, “যে রাষ্ট্র ছয় লাখের বেশি শিক্ষকের ডাল-ভাতের ব্যবস্থা করতে পারে না, সেই রাষ্ট্রের উচিত শিক্ষা ব্যবস্থা বন্ধ করে সবাইকে ছুটি দেওয়া। আমরা সিএনজি চালিয়ে, রিকশা চালিয়ে, কৃষিকাজ বা দিনমজুরির কাজ করে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকব।”

















