ক্যাপিটল হিলে হামলা: যেসব প্রশ্নের কোন উত্তর মেলেনা!
- আপডেট সময় : ০৮:৪৭:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ জানুয়ারী ২০২১
- / 1004
ক্যাপিটল হিলে আক্রমণ করা ট্রাম্প সমর্থকদের বিশাল সমাবেশ দেখে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে এত বিপুলসংখ্যক মানুষ গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে। শত শত আমেরিকান নাগরিক একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের ফলাফলের বিরুদ্ধে রীতিমত জিহাদ ঘোষণা করেছে যেন! এ এক অবিশ্বাস্য ঘটনা আমেরিকার ইতিহাসে। সারা বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষ আজ বিস্মিত, স্তম্ভিত, বাকরুদ্ধ!
ট্রাম্প সমর্থকদের মুখে হাসি দেখে যে প্রশ্নটি বারবার মনে আসছে- নিজ দেশের আড়াই শ’ বছরের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মধ্যে আত্মতৃপ্তির কী খুঁজে পেয়েছেন এসব রিপাবলিকানরা? দেশ বিরোধী হওয়াটাকে কেন তারা কৃতিত্বের মনে করছেন? তবে কি আমেরিকায় গণতন্ত্র বিরোধী একটি শক্তিশালী দল তৈরী হয়েছে ট্রাম্পের নেতৃত্বে যারা প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা না করে একদলীয় শাসন কায়েম করার প্রয়োজনে নিজেরা জীবন দিতেও প্রস্তুত। হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মীর মগজ ধোলাই মোটেই সহজ কাজ নয়। এটাতো পরিস্কার যে ট্রাম্প সে কাজটি করেছেন অত্যন্ত পারদর্শিতার সংগে। তা নাহলে আইনের আওতায় আসতে পারেন এটা জেনেও কেন শত শত মানুষ দেশের গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানে এরুপ ন্যাক্কারজনক হামলা চালাবে!
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাকে মনে করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে চৌকষ গোয়েন্দা সংস্থা। আফগানিস্তানের দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় জঙ্গিদের তৎপরতা সম্পর্কে তারা অবগত থাকেন অথচ নিজ দেশের সংসদ ভবনে এরকম সংঘবদ্ধ একটা আক্রমণ করা হবে তা তারা আগে থেকে জানতে পারলেন না – এটা মেনে নেয়া মুশকিল। গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতায় যে দুটি প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়ায় তাহলো: এক- তবে কি প্রেসিডেণ্ট ট্রাম্পের সরাসরি নির্দেশেই এরকম একটি হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছে? দুই- তবে কি ফেডারেল নিরাপত্তায় নিয়োজিত গোয়েন্দা সংস্থাকে সাময়িক নিষ্ক্রীয় করে রাখার নির্বাহী আদেশ দেয়া হয়েছিল?
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, যিনি কয়েক শ’ বার আমেরিকাকে ‘ গ্রেট’ বানানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন, তিনি ক্ষমতা হস্তান্তরের মাত্র দু’ সপ্তাহ আগে আমেরিকার গণতন্ত্রের গায়ে কালিমা লেপন করে কী অর্জন করতে চেয়েছিলেন সেটাও ভাববার বিষয়। তিনি তো ঠিকই অবগত ছিলেন যে এভাবে কোন নির্বচনের ফলাফলকে উল্টে দেয়া যায়না। তাহলে তার এই শক্তি প্রদর্শনের হেতু কী?
সে যাই হোক না কেন, সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর চার ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতা ব্যবহার করে ট্রাম্প কে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করে সরিয়ে ফেলা শুধুমাত্র আমেরিকার গণতন্ত্রের জন্য নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশে যে সব রাষ্ট্র নায়ক গণতন্ত্রকে এভাবে নস্যাৎ করার ঔদ্ধত্য দেখানোর সুপ্ত বাসনা পোষণ করেন তাদেরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্যও আজ খুবই জরুরী।
আশার কথা হলো ইতিমধ্যে ২৫ তম সংশোধনীতে প্রদত্ত ক্ষমতা ব্যবহার করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ভাইস প্রেসিডেন্টের প্রতি আহবান জানিয়েছেন কংগ্রেসের স্পীকার শীর্ষস্হানীয় ডেমোক্র্যাট ন্যান্সি পেলোসি এবং সিনেটের ‘মাইনরিটি লিডার’ চার্লস শুমার।প্রেসিডেণ্ট ট্রাম্প আমেরিকার ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক শাসনের ইতিহাসে যে কালিমা লেপন করেছেন ভাইস প্রেসিডেণ্ট মাইক পেন্স সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীতে প্রদত্ত ক্ষমতা ব্যবহার করে সেই কালিমা মুছতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবেন বলেই প্রত্যাশা।
বিশ্বের দেশে দেশে গণতন্ত্রের জয় হোক!
লন্ডন, ৮ জানুয়ারী ২০২১
লেখক : কবি ও সাংবাদিক



















