ঢাকা ০৯:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

কাতার ও ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে ইরাকের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১২:৫৩:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
  • / 246
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি


কাতার ও ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে জানাচ্ছে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজ এজেন্সি। তাসনিম জানাচ্ছে, ‘বিশারাত ফাতেহ’ এবং ‘ইয়া আবা আবদুল্লাহ’ নামে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

এসব হামলায় একাধিক ওয়ারহেড বা ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম খাইবার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে বার্তা সংস্থাটি জানিয়েছে।

আইআরজিসির বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থাটি জানাচ্ছে, এই প্রথমবার এই ক্ষেপণাস্ত্র কোনও হামলায় ব্যবহার করা হলো। সেই সাথে হামলায় আধুনিক ড্রোনও ব্যবহার করা হয়েছে।

ইরানের সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, “ইয়া আবা আব্দুল্লাহ আল হুসেইন” সাংকেতিক নাম ধারণ করে বিপ্লবী গার্ড বাহিনী কাতারের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। এক বিবৃতিতে ইরানি সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে ‘বাশারাত ফাতেহ’ অপারেশনে কাতারের উদেইদ ঘাঁটিকে “বিধ্বংসী এবং শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে লক্ষ্যবস্তু” করে হামলা হয়েছে।

এই অভিযান “সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের নির্দেশে এবং খাতাম আল আম্বিয়া কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছে” বলে জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। কিছুক্ষণ আগে রাজধানী দোহা এবং এর উপকণ্ঠ লুসাইল এ বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং আকাশে প্রজেক্টাইল দেখা যাচ্ছে।

সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল এক বিবৃতিতে বলেছে, “এই সফল অভিযানে ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলায় যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ বোমা ব্যবহার করেছিল তার সমান ছিল। শক্তিশালী ইরানি বাহিনীর হামলায় যে ঘাঁটিটি লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল তা কাতারের নগর স্থাপনা এবং আবাসিক এলাকা থেকে অনেক দূরে ছিল।”

যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল তারা ১৪টি বোমা দিয়ে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। এর কয়েক মিনিট আগে, সংবাদ সংস্থা তাসনিম জানিয়েছিল কাতার এবং ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ‘বিশারাত ফাতেহ’ এবং ‘ইয়া আবা আব্দুল্লাহ’ কোড নামে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে।

কাতারের দোহায় বিস্ফোরণের শব্দ
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপি জানিয়েছে, কাতারের দোহা থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এক্সিওস নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে বিবিসি অ্যারাবিক জানিয়েছে, কাতারের মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান।

বিবিসি পার্সিয়ান অ্যাক্সিওস ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, কাতারে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ওই ওয়েবসাইটটি এ তথ্য জানিয়েছে। এই ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, কাতারে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরান ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।

এর কিছুক্ষণ আগে, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আমেরিকান কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছিল ইরান মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান বাহিনীকে হামলা করার জন্য ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চারগুলোকে বিভিন্ন স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে।

এএফপি ও রয়টার্স বলছে কাতারে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এক ঘণ্টা আগে কাতার তাদের আকাশ সীমা বন্ধ করে দিয়েছে। এ অঞ্চলের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক ঘাঁটি কাতারে অবস্থিত।

মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে হামলার ‘তীব্র নিন্দা’ জানিয়েছে কাতার

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স এ লিখেছেন, “আমরা এটিকে কাতার রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, এর আকাশসীমা, আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের একটি স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করি।”

তিনি বলেছেন কাতারের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা “হামলা সফলভাবে প্রতিহত করেছে এবং ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে বাধা দিয়েছে ” এবং ঘাঁটিটি আগেই খালি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেছেন, “ ঘাঁটিতে থাকা কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। যার মধ্যে কাতারি সশস্ত্র বাহিনী, বন্ধুত্বপূর্ণ বাহিনী এবং অন্যান্যরাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।”

“আমরা নিশ্চিত করছি হামলার ফলে কোনও আহত বা মানুষের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি” বলেন মি. আনসারী।

তিনি আরও মুখপাত্র বলেন, “এই নির্লজ্জ আগ্রাসনের প্রকৃতি এবং মাত্রার সাথে সমানভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকার কাতারের রয়েছে।”

কাতারের আকাশে ক্ষেপণাস্ত্রের ছবি

কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলার সময় দেশটির আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র দেখা যাওয়ার ছবি প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।

রয়টার্সের নিচের এই ছবিতে কাতারের আকাশে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্রের আলো দেখা যাচ্ছে। ইরানের হামলার খবর পাওয়ার পর এটিই প্রথম ছবি।

এদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে সেখানকার সামরিক বাহিনী কাতারের একটি মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে বলে নিশ্চিত করেছে।

অন্যদিকে কাতারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সফলভাবে হামলা প্রতিহত করেছে।

কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলার কথা স্বীকার করল যুক্তরাষ্ট্র
কাতারে আল উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার কথা স্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিবিসির খবরে বলা হয়, মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন জানিয়েছে, কাতারের আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে ইরান স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে।

একজন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিকের হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি এখনো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

মিশর ও কুয়েতের এয়ারলাইন্সের বিমান চলাচল বন্ধ
কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ওই অঞ্চলের অনেকগুলো দেশের বিমান সংস্থাগুলো সাময়িকভাবে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।

মিশর এয়ার ও কুয়েত এয়ারওয়েজ জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আপাতত ওই অঞ্চল দিয়ে তাদের কোনও বিমান চলাচল করবে না।

এর আগে কাতার, বাহরাইন ও ইরাক তাদের দেশের আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেয়।

আল উদেইদ ঘাঁটি সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
কাতারের রাজধানী দোহার কাছে অবস্থিত আল উদেইদ মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের বিমান অভিযানের সদর দপ্তর হিসেবে কাজ করে। এখানে প্রায় আট হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করে। ব্রিটিশ সেনা সদস্যরাও এই ঘাঁটিতে অনেক সময় থাকে। কখনো কখনো এই ঘাঁটি আবু নাখলা এয়ারপোর্ট হিসেবেও পরিচিতি পায়।

বর্তমানে এই স্থাপনাটি ইরাকে মার্কিন অভিযানের জন্য সদর দপ্তর এবং সরবরাহ ঘাঁটি হিসেবে কাজ করে। এই উপসাগরীয় অঞ্চলের দীর্ঘতম বিমান অবতরণ স্ট্রিপও এতে রয়েছে।

কাতার ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে আল উদেইদ ঘাঁটিতে প্রবেশাধিকার দেয়। ২০০১ সালে আমেরিকানরা ঘাঁটি ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দোহা এবং ওয়াশিংটন ২০০২ সালের ডিসেম্বরে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।

লন্ডন-ভিত্তিক গোয়েন্দা সংস্থা গ্রে ডাইনামিক্সের মতে, ওই চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে আল উদেইদ স্থাপনায় মার্কিন সেনাবাহিনীর উপস্থিতিকে স্বীকৃতি দেয়।

২০২৪ সালে সিএনএন জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র কাতারের সাথে আরও ১০ বছরের জন্য তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

কাতার ও ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে ইরাকের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

আপডেট সময় : ১২:৫৩:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫


কাতার ও ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে জানাচ্ছে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজ এজেন্সি। তাসনিম জানাচ্ছে, ‘বিশারাত ফাতেহ’ এবং ‘ইয়া আবা আবদুল্লাহ’ নামে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

এসব হামলায় একাধিক ওয়ারহেড বা ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম খাইবার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে বার্তা সংস্থাটি জানিয়েছে।

আইআরজিসির বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থাটি জানাচ্ছে, এই প্রথমবার এই ক্ষেপণাস্ত্র কোনও হামলায় ব্যবহার করা হলো। সেই সাথে হামলায় আধুনিক ড্রোনও ব্যবহার করা হয়েছে।

ইরানের সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, “ইয়া আবা আব্দুল্লাহ আল হুসেইন” সাংকেতিক নাম ধারণ করে বিপ্লবী গার্ড বাহিনী কাতারের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। এক বিবৃতিতে ইরানি সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে ‘বাশারাত ফাতেহ’ অপারেশনে কাতারের উদেইদ ঘাঁটিকে “বিধ্বংসী এবং শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে লক্ষ্যবস্তু” করে হামলা হয়েছে।

এই অভিযান “সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের নির্দেশে এবং খাতাম আল আম্বিয়া কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছে” বলে জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। কিছুক্ষণ আগে রাজধানী দোহা এবং এর উপকণ্ঠ লুসাইল এ বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং আকাশে প্রজেক্টাইল দেখা যাচ্ছে।

সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল এক বিবৃতিতে বলেছে, “এই সফল অভিযানে ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলায় যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ বোমা ব্যবহার করেছিল তার সমান ছিল। শক্তিশালী ইরানি বাহিনীর হামলায় যে ঘাঁটিটি লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল তা কাতারের নগর স্থাপনা এবং আবাসিক এলাকা থেকে অনেক দূরে ছিল।”

যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল তারা ১৪টি বোমা দিয়ে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। এর কয়েক মিনিট আগে, সংবাদ সংস্থা তাসনিম জানিয়েছিল কাতার এবং ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ‘বিশারাত ফাতেহ’ এবং ‘ইয়া আবা আব্দুল্লাহ’ কোড নামে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে।

কাতারের দোহায় বিস্ফোরণের শব্দ
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপি জানিয়েছে, কাতারের দোহা থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এক্সিওস নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে বিবিসি অ্যারাবিক জানিয়েছে, কাতারের মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান।

বিবিসি পার্সিয়ান অ্যাক্সিওস ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, কাতারে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ওই ওয়েবসাইটটি এ তথ্য জানিয়েছে। এই ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, কাতারে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরান ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।

এর কিছুক্ষণ আগে, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আমেরিকান কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছিল ইরান মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান বাহিনীকে হামলা করার জন্য ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চারগুলোকে বিভিন্ন স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে।

এএফপি ও রয়টার্স বলছে কাতারে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এক ঘণ্টা আগে কাতার তাদের আকাশ সীমা বন্ধ করে দিয়েছে। এ অঞ্চলের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক ঘাঁটি কাতারে অবস্থিত।

মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে হামলার ‘তীব্র নিন্দা’ জানিয়েছে কাতার

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স এ লিখেছেন, “আমরা এটিকে কাতার রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, এর আকাশসীমা, আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের একটি স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করি।”

তিনি বলেছেন কাতারের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা “হামলা সফলভাবে প্রতিহত করেছে এবং ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে বাধা দিয়েছে ” এবং ঘাঁটিটি আগেই খালি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেছেন, “ ঘাঁটিতে থাকা কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। যার মধ্যে কাতারি সশস্ত্র বাহিনী, বন্ধুত্বপূর্ণ বাহিনী এবং অন্যান্যরাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।”

“আমরা নিশ্চিত করছি হামলার ফলে কোনও আহত বা মানুষের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি” বলেন মি. আনসারী।

তিনি আরও মুখপাত্র বলেন, “এই নির্লজ্জ আগ্রাসনের প্রকৃতি এবং মাত্রার সাথে সমানভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকার কাতারের রয়েছে।”

কাতারের আকাশে ক্ষেপণাস্ত্রের ছবি

কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলার সময় দেশটির আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র দেখা যাওয়ার ছবি প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।

রয়টার্সের নিচের এই ছবিতে কাতারের আকাশে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্রের আলো দেখা যাচ্ছে। ইরানের হামলার খবর পাওয়ার পর এটিই প্রথম ছবি।

এদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে সেখানকার সামরিক বাহিনী কাতারের একটি মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে বলে নিশ্চিত করেছে।

অন্যদিকে কাতারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সফলভাবে হামলা প্রতিহত করেছে।

কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলার কথা স্বীকার করল যুক্তরাষ্ট্র
কাতারে আল উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার কথা স্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিবিসির খবরে বলা হয়, মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন জানিয়েছে, কাতারের আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে ইরান স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে।

একজন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিকের হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি এখনো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

মিশর ও কুয়েতের এয়ারলাইন্সের বিমান চলাচল বন্ধ
কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ওই অঞ্চলের অনেকগুলো দেশের বিমান সংস্থাগুলো সাময়িকভাবে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।

মিশর এয়ার ও কুয়েত এয়ারওয়েজ জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আপাতত ওই অঞ্চল দিয়ে তাদের কোনও বিমান চলাচল করবে না।

এর আগে কাতার, বাহরাইন ও ইরাক তাদের দেশের আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেয়।

আল উদেইদ ঘাঁটি সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
কাতারের রাজধানী দোহার কাছে অবস্থিত আল উদেইদ মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের বিমান অভিযানের সদর দপ্তর হিসেবে কাজ করে। এখানে প্রায় আট হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করে। ব্রিটিশ সেনা সদস্যরাও এই ঘাঁটিতে অনেক সময় থাকে। কখনো কখনো এই ঘাঁটি আবু নাখলা এয়ারপোর্ট হিসেবেও পরিচিতি পায়।

বর্তমানে এই স্থাপনাটি ইরাকে মার্কিন অভিযানের জন্য সদর দপ্তর এবং সরবরাহ ঘাঁটি হিসেবে কাজ করে। এই উপসাগরীয় অঞ্চলের দীর্ঘতম বিমান অবতরণ স্ট্রিপও এতে রয়েছে।

কাতার ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে আল উদেইদ ঘাঁটিতে প্রবেশাধিকার দেয়। ২০০১ সালে আমেরিকানরা ঘাঁটি ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দোহা এবং ওয়াশিংটন ২০০২ সালের ডিসেম্বরে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।

লন্ডন-ভিত্তিক গোয়েন্দা সংস্থা গ্রে ডাইনামিক্সের মতে, ওই চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে আল উদেইদ স্থাপনায় মার্কিন সেনাবাহিনীর উপস্থিতিকে স্বীকৃতি দেয়।

২০২৪ সালে সিএনএন জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র কাতারের সাথে আরও ১০ বছরের জন্য তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে।