ঢাকা ১১:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

কথাসাহিত্যিক সাংবাদিক রাহাত খান আর নেই: রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৭:০২:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২০
  • / 887
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাহাত খান মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। রাহাত খানের স্ত্রী অপর্ণা খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় বাসাতেই শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন রাহাত খান।

শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে অপর্ণা খান নিজ ফেসবুকে রাহাত খানের মৃত্যুর খবর জানান। পরে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাহাত খান রাত সাড়ে ৮টায় তার ইস্কাটন গার্ডেনের বাসায় মারা যান। রাতে তার মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হবে। আগামীকাল শনিবার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে। তবে সময় এখনও ঠিক হয়নি।’

দাফনের আগে জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলা একাডেমি ও শহীদ মিনারে নেয়া হতে পারে রাহাত খানের মরদেহ— জানান তিনি।

দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন রাহাত খান। করোনাকালে জটিল চিকিৎসা প্রক্রিয়া হওয়ায় তার সার্জারি করা যাচ্ছিল না বলে বাসাতেই অবস্থান করছিলেন গুণী এই সাংবাদিক।

রাহাত খান বাংলাদেশের খ্যাতিমান একজন কথাশিল্পীও। ছোটগল্প ও উপন্যাস উভয় শাখাতেই তার ছিল অবাধ বিচরণ। সাংবাদিক হিসেবেও রাহাত খানের অবদান উল্লেখযোগ্য। ষাটের দশক থেকে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। পত্রিকাটির সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।

১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন রাহাত খান। বিখ্যাত সিরিজ ‘মাসুদ রানা’ চরিত্রটি তার অনুসরণেই তৈরি করা।

রাহাত খান ১৯৪০ সালের ১৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার পূর্ব জাওয়ার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কথাসাহিত্যিক হিসেবে সমাদৃত হলেও কর্মসূত্রে রাহাত খান আপাদমস্তক ছিলেন সাংবাদিক।

১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে রাহাত খান কিছুদিন জোট পারচেজ ও বীমা কোম্পানিতে চাকরি করে ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে যোগদান করেন। তারপর একে একে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করেন।

১৯৬৯ সালে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় তার সাংবাদিকতা জীবনের হাতেখড়ি। পরে তিনি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় যোগদান করেন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় দৈনিক বর্তমান পত্রিকা। শেষবেলায় এসে তিনি দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭২ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘অনিশ্চিত লোকালয়’ প্রকাশিত হয়। তার পরবর্তী উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘অমল ধবল চাকরি’, ‘ছায়াদম্পতি’, ‘শহর’, ‘হে শূন্যতা’, ‘হে অনন্তের পাখি’, ‘মধ্য মাঠের খেলোয়াড়’, ‘এক প্রিয়দর্শিনী’, ‘মন্ত্রিসভার পতন’, ‘দুই নারী’, ‘কোলাহল’ ইত্যাদি।

তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৩), সুহৃদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৫), সুফী মোতাহার হোসেন পুরস্কার (১৯৭৯), আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮০), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮২), ত্রয়ী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮) এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় একুশে পদকে (১৯৯৬) ভূষিত হন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাহাত খানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার (২৮ আগস্ট) পৃথক শোকবার্তায় একুশে পদকপ্রাপ্ত এই গুণীজনের সাংবাদিকতা ও সাহিত্যে অবদানের কথা স্মরণ করেন তারা।রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

কথাসাহিত্যিক সাংবাদিক রাহাত খান আর নেই: রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

আপডেট সময় : ০৭:০২:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২০

কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাহাত খান মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। রাহাত খানের স্ত্রী অপর্ণা খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় বাসাতেই শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন রাহাত খান।

শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে অপর্ণা খান নিজ ফেসবুকে রাহাত খানের মৃত্যুর খবর জানান। পরে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাহাত খান রাত সাড়ে ৮টায় তার ইস্কাটন গার্ডেনের বাসায় মারা যান। রাতে তার মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হবে। আগামীকাল শনিবার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে। তবে সময় এখনও ঠিক হয়নি।’

দাফনের আগে জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলা একাডেমি ও শহীদ মিনারে নেয়া হতে পারে রাহাত খানের মরদেহ— জানান তিনি।

দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন রাহাত খান। করোনাকালে জটিল চিকিৎসা প্রক্রিয়া হওয়ায় তার সার্জারি করা যাচ্ছিল না বলে বাসাতেই অবস্থান করছিলেন গুণী এই সাংবাদিক।

রাহাত খান বাংলাদেশের খ্যাতিমান একজন কথাশিল্পীও। ছোটগল্প ও উপন্যাস উভয় শাখাতেই তার ছিল অবাধ বিচরণ। সাংবাদিক হিসেবেও রাহাত খানের অবদান উল্লেখযোগ্য। ষাটের দশক থেকে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। পত্রিকাটির সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।

১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন রাহাত খান। বিখ্যাত সিরিজ ‘মাসুদ রানা’ চরিত্রটি তার অনুসরণেই তৈরি করা।

রাহাত খান ১৯৪০ সালের ১৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার পূর্ব জাওয়ার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কথাসাহিত্যিক হিসেবে সমাদৃত হলেও কর্মসূত্রে রাহাত খান আপাদমস্তক ছিলেন সাংবাদিক।

১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে রাহাত খান কিছুদিন জোট পারচেজ ও বীমা কোম্পানিতে চাকরি করে ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে যোগদান করেন। তারপর একে একে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করেন।

১৯৬৯ সালে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় তার সাংবাদিকতা জীবনের হাতেখড়ি। পরে তিনি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় যোগদান করেন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় দৈনিক বর্তমান পত্রিকা। শেষবেলায় এসে তিনি দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭২ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘অনিশ্চিত লোকালয়’ প্রকাশিত হয়। তার পরবর্তী উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘অমল ধবল চাকরি’, ‘ছায়াদম্পতি’, ‘শহর’, ‘হে শূন্যতা’, ‘হে অনন্তের পাখি’, ‘মধ্য মাঠের খেলোয়াড়’, ‘এক প্রিয়দর্শিনী’, ‘মন্ত্রিসভার পতন’, ‘দুই নারী’, ‘কোলাহল’ ইত্যাদি।

তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৩), সুহৃদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৫), সুফী মোতাহার হোসেন পুরস্কার (১৯৭৯), আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮০), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮২), ত্রয়ী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮) এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় একুশে পদকে (১৯৯৬) ভূষিত হন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাহাত খানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার (২৮ আগস্ট) পৃথক শোকবার্তায় একুশে পদকপ্রাপ্ত এই গুণীজনের সাংবাদিকতা ও সাহিত্যে অবদানের কথা স্মরণ করেন তারা।রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।