কত বছর বাঁচতে চান আপনি?
- আপডেট সময় : ১২:১৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ অগাস্ট ২০২১
- / 1129
কত বছর বাঁচতে চান আপনি?
কিংবা কত বছর বাঁচলে তৃপ্ত হবেন?
নিজের অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতে পারবেন?
ধরলাম, আপনি ৬০ বছর বাঁচলেন। চলেন তবে হিসেব করি…
আপনি জীবনে কতটুকু সময় কাজের মধ্যে ব্যয় করেছেন:
১। প্রতিদিন আপনি ৮ ঘন্টা করে ঘুমিয়েছেন। তার মানে ৬০ বছরের তিন ভাগের একভাগ ।অর্থাৎ ২০ বছর আপনি ঘুমের মধ্যেই কাটিয়েছেন!
বাকী থাকল ৪০ বছর…
২। খাবার গ্রহণ,বিশ্রাম,গোসল,ওয়াশরুম,সাজগোজে,আড্ডা,টিভি দেখা,বেড়ানো ইত্যাদি কাজে আপনি প্রতিদিন গড়ে ৮ ঘণ্টা সময় ব্যয় করেছেন!
তার মানে ৬০ বছরের জীবনে হাবিজাবি কাজে আপনি সময় ব্যায় করেছেন প্রায় ২০ বছর!
–রইল বাকী ২০ বছর!
অর্থাৎ মাত্র এই ২০ বছর সময় আপনি নিজেকে গড়া, দেশ গড়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন!
কথা এখানেও আছে…
এই ২০ বছর আপনি পুরোপুরি কর্মক্ষম ছিলেন না ,এর মধ্যেও অনেক সিস্টেম লস ছিল!
যেমন:
১। জন্ম থেকে ৫ বছর—আপনি কিছুই করেন নাই…কেটেছে মায়ের কোলে বা খেলার মাঝে!
২। মাসে ৪ শুক্রবার…বন্ধের দিন আপনি শুধুমাত্র বিশ্রামে ছিলেন!
৩। কর্মক্ষম ২০ বছরের মধ্যে আপনি কম হলেও ২ বছর অসুস্থতাজনিত বিশ্রামে কাটিয়েছেন!
৪। প্রতিদিন গড়ে ৮ ঘণ্টা কর্মময় থাকা কারো পক্ষে সম্ভব নয়… কষ্টের লোড শেডিং করার জন্য আপনি মাঝে মধ্যে তাই বিশ্রামে ছিলেন!
ফলাফল:
৬০ বছরের জীবনে আপনি মাত্র ২০ বছর কর্মক্ষম ছিলে…এর মধ্যেও আবার গড়ে ৫ বছরের সিস্টেম লস ছিল…অর্থাৎ মাত্র ১৫ বছর আপনি কর্মময় একটা মানুষ ছিলেন!
সেদিন এমনই একজন মানুষের অপারেশন ছিল ,দু’টো কিডনিই অকেজো,ডায়ালাইসিস করেই জীবন চলে, হাতে ডায়ালাইসিস এর জন্য ফিস্টুলা অপারেশন হবে,অপারেশনে দেরি হচ্ছে দেখে একটু গল্প করলাম।গল্পের এক ফাঁকে জানতে চাইলাম…
এই যে আপনার বয়স ৬০ বছর, আপনার কি ছোটবেলার স্মৃতিগুলো সব মনে আছে?
উনি অপারেশনের টেবিলে শুয়ে শুয়েই হাসলেন…
হাসি থামিয়ে বলা শুরু করলেন…
‘এই যে চোখে বন্ধ করলাম…ঐ যে দেখতে পাচ্ছি…দল বেঁধে স্কুলে যাচ্ছি…স্কুলে শেষে বাড়ী ফেরার সময় পুকুরে ডুব দিচ্ছি…দেরী করে ঘরে ফেরায় মায়ের হাতে পিটুনি খাচ্ছি…!
এবার চোখ খুলে আমার দিকে তাকালেন…কই স্যার, আমার কাছে তো অনেক দিন আগের কথা মনে হচ্ছে না…মনে হচ্ছে, এই তো সেদিন…সব যেন ঝকঝকে…আহারে কোথায় গেল দিনগুলা! স্যার তবুও দেখেন ছোট্ট এই জীবনে…মানুষই কতই না নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত…দু’টো কিডনিই নাই আমার…প্রতিদিনই মনে হয় নতুন করে বাঁচলাম…একটা দিন শুরু হলে মনে হয় আজকের দিনটাই হয়ত শেষ দিন…সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের দিকে তাকাই…আহা! আমি বেঁচে আছি!…আমার কিডনি অকেজো…তাই মৃত্যুকে এতো কাছের মনে হয়…কিন্তু যে ভাল আছে…সে কি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবে…তাঁর কাছ থেকে মৃত্যু অনেক দূরে…!
অপারেশন শেষে ফাইলে চোখ বুলালাম…
রহিম বকস নাম,বয়স ৬৩,উচ্চরক্তচাপ ছিল,নিয়মিত ঔষধ খেতেন না!
ডায়াবেটিস ছিল,নিয়মিত চেক আপ করাতেন না,ফলাফল কিডনি বিকল!
সুরাইয়া আক্তার নামে একটি মেয়ের হাতে ফিস্টুলা করেছিলাম…তার বয়স মাত্র ১৭ বছর।কিডনির প্রদাহ বা নেফ্রাইটিস রোগে ভুগছিল সে।আর বরিশালের গফুর সাহেব একেবারে সুস্থ মানুষ।তবে দীর্ঘদিন ধরে সারা শরীর ব্যথা তাঁর।ব্যথা নাশক ঔষধ ঘন ঘন খেয়েই কিডনি দুটো অকালে বিকল হয়ে গিয়েছিল তাঁর। অচল হয়ে গিয়েছে তাঁদের বেঁচে থাকার স্বপ্নগুলো…!
তবুও মানুষ বেঁচে থাকে…
স্বপ্ন দেখে…স্বপ্ন দেখতে দেখতেই মরে যায়…কিছু স্বপ্ন অপূর্ণ রেখে…কিংবা পুরোটাই বকেয়া থেকে যায়…কেউবা স্বপ্ন দেখে নতুন করে এই পৃথিবীতে আসার…প্রিয়াকে হারিয়ে ছেলেটি যেমন স্বপ্ন দেখে পরের জনমে তাঁর প্রথম পুরুষ হবার…অকালে মাকে হারিয়ে সন্তান যেমন স্বপ্ন দেখে পরের জনমে মায়ের সেবক হবার…রোগে ভোগা জীর্ণ মানুষটা যেমন স্বপ্ন দেখে পরের জনমে সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার…
সাকলায়েন যেমন স্বপ্ন দেখে যতবার জন্মাবে..ততবারই আরিজের বাবা হবার!
জীবনটাই যেন একটা স্বপ্ন…কিংবা স্বপ্নময় এই পৃথিবীর কিছু সময়কে আমরা ‘জীবন’ নামে ডাকি!





















