ঐকমত্য কমিশন প্রতারণা করেছে: ফখরুল
- আপডেট সময় : ০৩:০১:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
- / 120
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে জুলাই সনদ নিয়ে **‘প্রতারণা’**র অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “গতকাল (সোমবার) আমাদের সংস্কার কমিশন, ঐকমত্য কমিশন—তারা তাদের প্রতিবেদন দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার কাছে। প্রধান উপদেষ্টা সেখানে স্বাক্ষর করেছেন, তিনি এটার চেয়ারম্যান। এখানে অবাক বিষয় আমরা যেটা লক্ষ্য করেছি খুব পরিষ্কারভাবে—যেসব বিষয়ে একমত ছিলাম না, সেখানে আমরা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিলাম। সেই ‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলো লিপিবদ্ধ করার একটা প্রতিশ্রুতি ছিল তাদের। কিন্তু অবাক হয়ে আমরা লক্ষ্য করলাম—কালকে যখন তারা প্রকাশ করলেন, সেই বিষয়গুলো নেই!
“‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলো পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে, ইগনোর করা হয়েছে। এটা তো ঐকমত্য হতে পারে না।”
গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে এক অনুষ্ঠানে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই সনদটি প্রণয়ন করে।
তবে সনদের সব ধারায় একমত হতে পারেনি দলগুলো। বিএনপিরও বেশ কিছু আপত্তি ছিল, যেগুলোর উল্লেখ না করেই দলটি সনদে সই করে।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া সনদে ওই আপত্তিগুলোর উল্লেখ রাখা হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ফখরুল। তিনি বলেন,
“তাহলে ঐকমত্য কমিশনটা করা হয়েছিল কেন? এই ঐকমত্য কমিশন—এটা আমি বলব, জনগণের সঙ্গে একটা প্রতারণা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও এটা প্রতারণা।
“অবিলম্বে এই বিষয়গুলো যদি সংশোধন না করা হয়, তাহলে এটা ঐক্যের বিপরীতে যাবে। এটি সংশোধন করা জরুরি।”
‘নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি পূরণ না হলে দায় আপনার’
বিএনপি মহাসচিব আবারও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।
তিনি বলেন, “সমস্ত সংকটের মূলে রয়েছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের যে পার্লামেন্ট তৈরি হবে, সেই পার্লামেন্ট এসব সংস্কার সংবিধানে নিয়ে আসবে। সেই কারণেই আমরা ৫ আগস্টের পর নির্বাচন চেয়েছিলাম। যদিও অনেকে বলেছে, বিএনপি ক্ষমতা চায় বলে নির্বাচন চাইছে। অথচ এই নির্বাচন যত বিলম্ব হচ্ছে, তত বেশি ফ্যাসিবাদী শক্তি সম্মিলিত হচ্ছে।”
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “আপনি জনগণের নিকট প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন তা সম্পাদন করে একটি নির্বাচন উপহার দেবেন। নির্বাচনের মাধ্যমে যে পার্লামেন্ট ক্ষমতায় আসবে, সে পার্লামেন্ট দেশের সংকটগুলো সমাধান করবে। এর যদি কোনো ব্যত্যয় ঘটে, তার দায় কিন্তু আপনাকেই বহন করতে হবে।”
তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, “নির্বাচন যত দেরি হচ্ছে, পরাজিত শক্তিগুলো ততই শক্তিশালী হচ্ছে। যারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল দেখতে চায়, এখানে একটা নৈরাজ্য তৈরি করতে চায়, যাতে গণতন্ত্র সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠিত না হয়—সেই ব্যবস্থাই তৈরি হচ্ছে।”
‘সবাই বিভক্ত হচ্ছি’
গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা শক্তি বিভক্ত হচ্ছে বলেও সতর্ক করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “এত বড় একটা অভ্যুত্থান, এত ত্যাগের বিনিময়ে, এত প্রাণের বিনিময়ে—সেটাকে আমরা ঠিকভাবে আমাদের জাতির কল্যাণে কাজে লাগাতে পারছি কি না। দুর্ভাগ্যবশত আমরা দেখছি, যতই দিন যাচ্ছে, ততই আমরা বেশি বিভক্ত হয়ে পড়ছি। বিভক্তির বিষয়টা কারা করছেন, কেন করছেন—এটাও আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।”
সামাজিক মাধ্যমে বিভাজন সৃষ্টির প্রবণতা নিয়েও তিনি মন্তব্য করেন,
“সামাজিক মাধ্যমে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে পুরোপুরি ঘায়েল করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। অথচ এটা আমাদের ঐক্যের সময়।
“এখানে এটা হচ্ছে আমাদের ন্যূনতম বিষয়গুলোতে একমত হয়ে একটা রাস্তা ধরার সময়। সেই জায়গায় এটাকে বিভক্ত করে ফেলা হচ্ছে। কারা করছেন, কেন করছেন—এটা নিশ্চয়ই আপনারা উপলব্ধি করছেন এবং সেভাবে চিন্তাও করছেন।”
‘বিএনপি সংস্কার চায় না’—এমন প্রচারণাকে ‘মিথ্যা’ বলে তিনি বলেন,
“বিএনপির জন্মই সংস্কারের মধ্য দিয়ে। অথচ সচেতনভাবে একটা প্রচারণা চালানো হলো যে বিএনপি সংস্কারবিরোধী। এটা পুরোপুরি ভুয়া কথা, একটা মিথ্যা প্রচারণা। বিএনপি যে সংস্কারের মধ্য দিয়েই জন্ম নিয়েছে, সে কখনো সংস্কারবিরোধী হতে পারে না।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর এবং চরচা ডটকম-এর সম্পাদক সোহরাব হাসান।

















