ঐকমত্য কমিশন আসলে অনৈক্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে, হাস্যকর সুপারিশ : সালাহউদ্দিন
- আপডেট সময় : ১১:৫৫:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
- / 114
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জাতীয় ঐকমত্যের পরিবর্তে জাতীয় অনৈক্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। কমিশন জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে যে সুপারিশগুলো প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছে, তার প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে কার্যক্রম শেষ করায় কমিশনকে ধন্যবাদও জানান তিনি।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে সচিবালয়ে আইন উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, “যে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করেছে, সেই সনদের বাইরে অনেক পরামর্শ ও সুপারিশ সনদ বাস্তবায়নের আদেশের খসড়ায় সংযোজন করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদে ৮৪টি দফা আছে। সেখানে বিভিন্ন দফায় আমাদের এবং আরও কয়েকটি দলের ভিন্নমত বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ উল্লেখ আছে। স্পষ্টভাবে বলা আছে, যে দলগুলো এই নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, তারা যদি নির্বাচনী ইশতেহারে তা উল্লেখ করে জনগণের ম্যান্ডেট পায়, তাহলে সে অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে পারবে। কিন্তু আজ যে সংযুক্ত সুপারিশগুলো দেওয়া হয়েছে, সেখানে সেই নোট অব ডিসেন্টের কোনো উল্লেখই নেই—এটা বিস্ময়কর।”
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের সময় নিয়ে কমিশনের প্রস্তাবের প্রসঙ্গ টেনে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান হতে পারত। কিন্তু এখন সংবিধান সংস্কার পরিষদের নামে একটি নতুন প্রস্তাব যুক্ত করা হয়েছে, যা আগে কখনও আলোচিত হয়নি বা ঐকমত্যে আসেনি।”
তিনি বলেন, “আমরা জানি, আসন্ন নির্বাচন জাতীয় সংসদের নির্বাচন হবে। সেই সংসদ সদস্যরা সংবিধান সংস্কার পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন কিনা, তা জাতীয় সংসদেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু ঐকমত্য কমিশনে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবু হঠাৎ করে তারা সুপারিশে যোগ করেছেন যে পরবর্তী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবেও কাজ করবে। এটা আরোপিত সিদ্ধান্ত, চাপিয়ে দেওয়া নয়।”
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, “জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে কেবল সংসদই গঠিত হবে। সংবিধান সংস্কার পরিষদের জন্য তো কোনো আলাদা নির্বাচন হচ্ছে না। নির্বাচন হবে শুধু জাতীয় সংসদের জন্য।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “গণভোটে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে রায় এলে, যেভাবে সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে—নোট অব ডিসেন্টসহ—রাজনৈতিক দলগুলো বাধ্য থাকবে তা বাস্তবায়নে। কিন্তু ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে আমি দেখছি ভিন্নতা এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, আপার হাউস নিম্নকক্ষের ভোটের আনুপাতিক হারে গঠিত হবে—যা কখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। শুধু বলা হয়েছিল, উচ্চকক্ষ হবে ১০০ সদস্যের, কিন্তু কীভাবে নির্বাচিত হবেন, তা নিয়ে কোনো ঐকমত্য হয়নি।”
উচ্চকক্ষের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে কমিশনের আলোচনায় দীর্ঘ তর্কবিতর্ক হলেও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপি প্রস্তাব দিয়েছিল নিম্নকক্ষের আসন সংখ্যার অনুপাতে বণ্টনের; অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রস্তাব দেয় ভোটের আনুপাতিক হারে আসন বণ্টনের।
এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “কেউ ভোটের অনুপাতে চেয়েছে, আমরা চেয়েছি আসনের অনুপাতে। এখানে নোট অব ডিসেন্ট অনুযায়ী বলা আছে—যদি কোনো দল জনগণের ম্যান্ডেট পায়, তারা সেভাবে বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু কমিশন এখন পিআর ভিত্তিক প্রস্তাব সরাসরি যুক্ত করেছে, কোনো নোট অব ডিসেন্টের উল্লেখ না রেখেই।”
উচ্চকক্ষের এখতিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, অর্থবিল ও আস্থা ভোট ছাড়া সব বিল উচ্চকক্ষে উত্থাপন করা যাবে। অথচ আমরা নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছিলাম যে, যেহেতু উচ্চকক্ষ সরাসরি নির্বাচিত নয়, তাই তারা সংবিধান সংশোধনের মতো বিষয় বিবেচনা করতে পারে না। জনগণের সরাসরি নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া সংবিধান পরিবর্তনের অধিকার কারও নেই। এই অবস্থান সত্ত্বেও সেটি সুপারিশের অংশে যুক্ত করা হয়েছে—যা অগ্রহণযোগ্য।”
‘এটা হাস্যকর ব্যাপার’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আরেক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আগামী সংসদ যদি ২৭০ দিনের মধ্যে গণভোটে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলো পাস না করে, তাহলে সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে। এ নিয়ে কড়া সমালোচনা করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “এটা হাস্যকর ব্যাপার। সংবিধান সংশোধনের কোনো বিষয় অটো পাস হতে পারে না। কোনো আইন পাস হলে তা সংসদে অনুমোদন, স্পিকারের স্বাক্ষর ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পরেই আইনে পরিণত হয়। অটো পাসের মতো কিছু সংবিধানে থাকতে পারে না। এমন প্রস্তাব কীভাবে এল, আমি বুঝতে পারছি না।”
তিনি বলেন, “এই আইন ও সুপারিশ প্রণয়নে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এখানে কয়েকশ পৃষ্ঠার সংযুক্তি রয়েছে, আমরা সেগুলো ভালোভাবে পর্যালোচনা করে আগামীকাল বা তার পরের দিন বিস্তারিত মন্তব্য করব।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আলোচনা তো চার–পাঁচ দিন হয়েছে। কিন্তু যাহা আলোচনা করিলাম, তাহা এখানে নাই।”

















