ঢাকা ০৮:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী! কাতারের রাজপরিবারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যেসব অত্যাধুনিক সুবিধা রয়েছে কাকরদিয়া–তেরাদল–আলিপুর এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকের আত্নপ্রকাশ

এত স্বীকৃতির পরও কেন থেমে আছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৩:২৫:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / 137

ফিলিস্তিন

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনের প্রতি পশ্চিমা সমর্থন ক্রমেই বাড়ছে। ফ্রান্স ও কানাডার পর এবার যুক্তরাজ্যও ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিতে যাচ্ছে।

দেশটির সংবাদমাধ্যম জানায়, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরুর আগে রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেবেন।

জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ইতিমধ্যেই ১৪৭টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবুও দেশটি এখনও পূর্ণ সদস্যপদ পায়নি। কারণ, নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো ক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি।

২০১২ সাল থেকে ফিলিস্তিন জাতিসংঘে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদায় আছে।

আন্তর্জাতিক আইনে একটি রাষ্ট্র স্বীকৃত হতে হলে ১৯৩৩ সালের মন্টিভিডিও কনভেনশন অনুযায়ী থাকতে হবে—

  • স্থায়ী জনসংখ্যা
  • নির্দিষ্ট ভূখণ্ড
  • কার্যকর সরকার
  • আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা

ইতিমধ্যেই রাশিয়া, চীন, ইউরোপের এক ডজনের বেশি দেশ, ভারত ও বাংলাদেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

জাতিসংঘ সদস্যপদ প্রক্রিয়া

  • যেকোনো দেশ মহাসচিবের কাছে আবেদন করে
  • নিরাপত্তা পরিষদে তা মূল্যায়ন হয় ও ভোট হয়
  • ১৫ সদস্যের মধ্যে অন্তত ৯টি ভোট প্রয়োজন, তবে ভেটো শক্তিধর ৫ দেশ (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন) এর কেউ আপত্তি করতে পারবে না
  • এরপর সাধারণ পরিষদে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন পেলে সদস্যপদ নিশ্চিত হয়

ফিলিস্তিনের আবেদন
১৯৮৮ সালে ইয়াসির আরাফাত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ঘোষণা দেন। সে বছরই ৭৮টি দেশ স্বীকৃতি দেয়।
২০১১ সালে জাতিসংঘ সদস্যপদে আবেদন করলেও নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মত অবস্থান না হওয়ায় ভোট হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছিল। ফলে ফিলিস্তিন এখনো পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবেই আছে।

যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্তের পেছনে কারণ
লেবার সরকারের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাজ্য বলছে, এখনই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার উপযুক্ত সময়। প্রধানমন্ত্রী স্টারমার জানান, এটি তাদের আট দফা পরিকল্পনার অংশ, যার বিষয়ে ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি মনে করেন, দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান আনতে পারে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি জাতিসংঘে ভাষণে বলেন, জিম্মিদের মুক্তি ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের সময় এসেছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানেই গুরুত্ব দিয়েছেন।

দ্বিরাষ্ট্র সমাধান কী?

  • ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র থাকবে
  • পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা হবে ফিলিস্তিনের অংশ
  • ইসরায়েলি বসতি ইসরায়েলের অধীনে থাকবে

কিন্তু সমস্যা হলো সীমানা। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের আগে যে সীমানা ছিল, ফিলিস্তিন সেটি দাবি করলেও ইসরায়েল পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানে সেখানে ও পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় ৬ লাখ ইসরায়েলি বসবাস করছে।

প্রতিক্রিয়া

  • ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া মানে “ইসরায়েল ধ্বংসের মঞ্চ তৈরি করা” এবং এটি হামাসকে পুরস্কৃত করবে।
  • ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস পশ্চিমা দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানান।
  • মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এতে হামাস পুরস্কৃত হবে।
  • ফ্রান্স ও কানাডার ঘোষণার পরও তিনি তীব্র প্রতিক্রিয়া দেন এবং কানাডাকে বাণিজ্যচুক্তি কঠিন হওয়ার হুমকি দেন।
  • জাপান যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অনুসরণ করে আপাতত স্বীকৃতি দিচ্ছে না।
  • জার্মানি বলছে, তারা দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে, তবে এখনই স্বীকৃতি দেবে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

এত স্বীকৃতির পরও কেন থেমে আছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা

আপডেট সময় : ০৩:২৫:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনের প্রতি পশ্চিমা সমর্থন ক্রমেই বাড়ছে। ফ্রান্স ও কানাডার পর এবার যুক্তরাজ্যও ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিতে যাচ্ছে।

দেশটির সংবাদমাধ্যম জানায়, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরুর আগে রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেবেন।

জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ইতিমধ্যেই ১৪৭টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবুও দেশটি এখনও পূর্ণ সদস্যপদ পায়নি। কারণ, নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো ক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি।

২০১২ সাল থেকে ফিলিস্তিন জাতিসংঘে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদায় আছে।

আন্তর্জাতিক আইনে একটি রাষ্ট্র স্বীকৃত হতে হলে ১৯৩৩ সালের মন্টিভিডিও কনভেনশন অনুযায়ী থাকতে হবে—

  • স্থায়ী জনসংখ্যা
  • নির্দিষ্ট ভূখণ্ড
  • কার্যকর সরকার
  • আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা

ইতিমধ্যেই রাশিয়া, চীন, ইউরোপের এক ডজনের বেশি দেশ, ভারত ও বাংলাদেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

জাতিসংঘ সদস্যপদ প্রক্রিয়া

  • যেকোনো দেশ মহাসচিবের কাছে আবেদন করে
  • নিরাপত্তা পরিষদে তা মূল্যায়ন হয় ও ভোট হয়
  • ১৫ সদস্যের মধ্যে অন্তত ৯টি ভোট প্রয়োজন, তবে ভেটো শক্তিধর ৫ দেশ (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন) এর কেউ আপত্তি করতে পারবে না
  • এরপর সাধারণ পরিষদে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন পেলে সদস্যপদ নিশ্চিত হয়

ফিলিস্তিনের আবেদন
১৯৮৮ সালে ইয়াসির আরাফাত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ঘোষণা দেন। সে বছরই ৭৮টি দেশ স্বীকৃতি দেয়।
২০১১ সালে জাতিসংঘ সদস্যপদে আবেদন করলেও নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মত অবস্থান না হওয়ায় ভোট হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছিল। ফলে ফিলিস্তিন এখনো পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবেই আছে।

যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্তের পেছনে কারণ
লেবার সরকারের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাজ্য বলছে, এখনই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার উপযুক্ত সময়। প্রধানমন্ত্রী স্টারমার জানান, এটি তাদের আট দফা পরিকল্পনার অংশ, যার বিষয়ে ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি মনে করেন, দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান আনতে পারে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি জাতিসংঘে ভাষণে বলেন, জিম্মিদের মুক্তি ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের সময় এসেছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানেই গুরুত্ব দিয়েছেন।

দ্বিরাষ্ট্র সমাধান কী?

  • ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র থাকবে
  • পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা হবে ফিলিস্তিনের অংশ
  • ইসরায়েলি বসতি ইসরায়েলের অধীনে থাকবে

কিন্তু সমস্যা হলো সীমানা। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের আগে যে সীমানা ছিল, ফিলিস্তিন সেটি দাবি করলেও ইসরায়েল পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানে সেখানে ও পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় ৬ লাখ ইসরায়েলি বসবাস করছে।

প্রতিক্রিয়া

  • ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া মানে “ইসরায়েল ধ্বংসের মঞ্চ তৈরি করা” এবং এটি হামাসকে পুরস্কৃত করবে।
  • ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস পশ্চিমা দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানান।
  • মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এতে হামাস পুরস্কৃত হবে।
  • ফ্রান্স ও কানাডার ঘোষণার পরও তিনি তীব্র প্রতিক্রিয়া দেন এবং কানাডাকে বাণিজ্যচুক্তি কঠিন হওয়ার হুমকি দেন।
  • জাপান যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অনুসরণ করে আপাতত স্বীকৃতি দিচ্ছে না।
  • জার্মানি বলছে, তারা দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে, তবে এখনই স্বীকৃতি দেবে না।