ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা : ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমানে উত্তপ্ত পরিস্থিতি
- আপডেট সময় : ১০:০১:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫
- / 281

ইসরায়েলের দ্বিতীয় দফা হামলার জবাবে দেশটির সামরিক ও বিমান ঘাঁটিগুলোতে একযোগে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান।
দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলার কোনো বিরতি আপাতত দেখা যাচ্ছে না। শুক্রবার মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রে সংঘাতে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে; যাদের বেশির ভাগই ইরানি নাগরিক। উভয় পক্ষই নিজেদের অভিযানে অনড় থাকার কথা জানিয়েছে।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) শুক্রবার রাতে জানায়, ‘ট্রু প্রমিস ৩’ নামে এই হামলা শুরু হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ইরান ১০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, যার অধিকাংশই প্রতিহত করা হয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী এ ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে ইসরায়েলকে সহায়তা করেছে। ভূমিভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমেই এসব রোধ করা হয়েছে; এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিমান বা জাহাজ ব্যবহার করা হয়নি।
তেল আবিবের উপকণ্ঠ রামাত জানে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের আশপাশ থেকে আহতদের সরিয়ে নেওয়ার ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।
ইসরায়েলের তেল আবিব অঞ্চলে রকেট হামলায় পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির জাতীয় অ্যাম্বুলেন্স সেবা মাগেন ডেভিড অ্যাডম। আহতদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সংস্থাটির একজন মুখপাত্র জানান, “এ পর্যন্ত তেল আবিব এলাকায় সাতটি স্থানে হামলার তথ্য পেয়েছি, আমাদের দল উদ্ধারকাজে নিয়োজিত রয়েছে।”
অন্যদিকে, ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলছে, ইসরায়েলের অন্তত দুটি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। তবে স্বাধীনভাবে এ তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
জাতিসংঘে ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাসহ মোট ৭৮ জন নিহত এবং ৩২০ জন আহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক মানুষ।
বিবিসি জানিয়েছে, পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হচ্ছে। তেল আবিবের আকাশে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলি দেখা গেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সতর্ক করেছে, ইরান সত্যিই ইসরায়েলকে ক্ষতি করার সক্ষমতা রাখে এবং এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা তার প্রমাণ।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ইরানে তাদের অভিযান কয়েকদিন ধরে চলবে।
শুক্রবার ভোরে ইরানের বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের দফায় দফায় হামলার পর পরদিন দুপুরে আবারও একাধিক হামলা চালানো হয়েছে।
প্রথম দফার হামলার পরই ইরান পাল্টা জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল, এবং তারপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ বেড়েই চলেছে।
ইসরায়েল যেন প্রস্তুতি নিয়ে এবং পরিকল্পিতভাবে ইরানে হামলা চালাচ্ছে, সেটি স্পষ্ট। মূলত ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সক্ষমতাকে ঠেকাতেই ইসরায়েলের এই অভিযান।
তবে ইরানও পাল্টা আঘাতের সক্ষমতা দেখিয়েছে এই হামলার মাধ্যমে।
ইরানে ফের ইসরায়েলের হামলা, তেহরানে বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্ক
শুক্রবার ভোররাতের পর দিনের বেলাতেও ইরানে একাধিক স্থানে নতুন করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের বিমানবাহিনী এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে জানিয়েছে, তারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণস্থল ও অবকাঠামোর ওপর আঘাত অব্যাহত রেখেছে।
তেহরানে স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, রাজধানীর আবাসিক এলাকায় হামলা হয়েছে। তেহরানের উত্তর-পূর্ব অংশেও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ অভিযানের অংশ হিসেবে এসব হামলা চালানো হয়েছে বলে জানানো হয়।
ইরানের তাবরিজ শহরে একটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে হামলার কথা জানায় রেভল্যুশনারি গার্ডস সংশ্লিষ্ট একটি সংবাদ সংস্থা। স্থানীয় প্রশাসনের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এতে তিনজন নিহত হয়েছেন এবং পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে অন্তত ১০টি স্থানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন কোনো হামলার তথ্য নিশ্চিত করেনি।
বিবিসির যাচাইকৃত ভিডিও অনুসারে, তেহরান, নাতাঞ্জ, তাবরিজ, কেরমানশাহ এবং পিরানশাহর শহরে বিস্ফোরণের চিত্র পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নাতাঞ্জে রয়েছে ইরানের অন্যতম প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, যেখানে দ্বিতীয় দফার হামলার খবরও পাওয়া গেছে।
তেহরানের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ভবন ধসে পড়া ও ধোঁয়ার ছবি ভিডিওতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা সূত্রের দাবি, ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এ অংশ নিয়েছে অন্তত ২০০টি যুদ্ধবিমান।
নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, হামলার আগে ইসরায়েল গোপনে ইরানের অভ্যন্তরে বিস্ফোরক ড্রোন সরবরাহ করেছিল, যার লক্ষ্য ছিল ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা।
ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়াগুলো আপাতত প্রতীকী পর্যায়ে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, গত অক্টোবরের মতো বড় ধরনের হামলা চালানোর সক্ষমতা ইরানের এখন নেই।
অক্টোবরে ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল, যার পাল্টায় ইসরায়েল তেহরানের ড্রোন অবকাঠামো ধ্বংস করে দেয়। এবারও ইসরায়েল শক্তিশালী হামলার অবস্থানে রয়েছে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, এই অভিযান একদিনের নয়। তারা শুধু পারমাণবিক স্থাপনাই নয়, বরং ইরানের সামগ্রিক প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ভেঙে দিতেই এ পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ইরান-ইসরায়েলকে থামার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস দুই পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া এক বার্তায় গুতেরেস লিখেছেন, ‘ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ, আর তেল আবিবে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা—যথেষ্ট হয়েছে। এবার থামার সময়। শান্তি ও কূটনীতি জয়ী হোক।’
গুতেরেসের এই মন্তব্য এমন সময়ে এলো, যখন ইসরায়েল ও ইরান একে অপরের ওপর পাল্টা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, আর অঞ্চলজুড়ে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছে।
এদিকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েনও এই সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজকের সঙ্গে কথা বলে তিনি ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করেছেন, তবে পাশাপাশি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার গুরুত্বও তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছি। উত্তেজনা হ্রাসে সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা রাখা জরুরি।’























