আমাদের চিঠিময় দিনগুলো…
- আপডেট সময় : ০৫:১৩:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
- / 425

লন্ডন আসার আগে বাবা-মাকে ছেড়ে মাত্র চৌত্রিশ তিন একা থেকে ছিলাম। বিলাতে আসার পর বাবার গায়ের গন্ধ খুজতাম অজান্তে। খুব ছোট বেলায় আমার অদ্ভুত এক পেটে ব্যাথা ধরতো সন্ধ্যা নামলেই। আব্বা আমাকে বুকে জড়িয়ে উঠোনে হাটতেন, স্পষ্ট মনে আছে, আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা… কতবার তার মুখে শুনেছি। বাবা আমাদেরকে পুকুরে সাঁতার কাটা শিখিয়েছেন। ফুল-ফলের চারা লাগাতেন আমাদের হাত দিয়ে। বলতে গেলে বাবার গায়ের এক অদ্ভুত গন্ধ আমার মনে বিধে আছে-ইটারনিটি সুভাসের চেয়েও বেশী মুগ্ধতা নিয়ে।
বড়বোনরা আব্বার ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি ধুয়ে নীল লাগিয়ে সকালে উঠানে শুকাতে দিতেন। কতদিন শুকনো কাপড় বিকালে তুলে এনেছি আর গন্ধ শুঁকেছি; এটাও ছিল আরেক অদ্ভুত রকমের মায়া ছড়ানো গন্ধ।
আম্মা আছর নামাজের পরে চুলে কদুর তেল দিয়ে যত্নে চুল আঁচড়াতেন। প্রায় দিন আমি মা ও কদুর তেলের গন্ধ নিতে পাশে বসতাম। বিলেতে চরমভাবে এসব মিস করলেও চিঠি সেইসব অনুভূতিগুলো ধরে রেখেছিল।
এই চিঠি আমাকে কবিতা লেখায় বাবা-মাকে নিয়ে-
‘‘সুখগুলো একলা দুখসুখ খেলে-
কখনও রান্নাঘর,উঠোন,হীম ঠান্ডার ভোরে গোসল
মায়ের কদুরতেল মাখা চোলের গন্ধ,
অনেক সময় নিয়ে সফেদ পাঞ্জাবিতে বাবার লাগানো নীল –
টেবিলে বসে নিরব লেখালেখি,
শরতের শিউলিফুল সন্ধ্যামালতি সজনে ফুলের গন্ধে মেঘময় অলসদুপুর।
(এইসব কথা কাউকে বলতে নেই (প্রিয় বাবা-মা ) কাব্যগ্রন্থ : ঝাউবন কান্দে ঘরকণ্যার লাগি )
[ … ] বিলেতের চিঠি…
বিলেতে সাধারণত ঘরের লেটার বক্সে পোষ্টম্যান চিঠি ফেলে যায়। যেদিন বাংলাদেশের চিঠি আসতো-আহ! কী বলবো। কিছু কিছু অনুভূতি শব্দে বা কথায় বুঝানো যায় না, এটিও আমার জন্য সেরকম সুখানুভূতি। কতবার যে চিঠি পড়তাম! তৃষ্ণা মিটে না। চিঠিগুলো ড্রয়ারের একটি বিশেষ জায়গায় জমিয়ে রাখতাম,যেন যত্নে অমলিন থাকে!
প্রবাস জীবনের বয়স যখন ১৪ মাস, তখন প্রথম বিলেত থেকে বাংলাদেশে ফিরি। বাবা-মার আবারও স্পর্শ পাই। আম্মা একদিন বলেন, যখন তোমার কথা বেশী মনে পড়ে, তোমার লেখা চিঠিগুলো পড়ি। অক্ষরগুলোতে হাত বুলাই, তোমার স্পর্শ পাই। মনে হয়- আমি তোমাকে ছুই বার বার!
[… ] বন্ধন, সম্পর্ক, সৃজন-এ চিঠি
ছোটবেলা থেকে দেখতাম আমার শিক্ষক বাবা নিয়মিত চিঠি লিখতেন। দেশে –বিদেশে আত্নীয়- স্বজন , বন্ধুদের সাথে তার সৃজন ও হার্দিক সম্পর্ক অটুটে চিঠিই ছিল প্রধান মাধ্যম।
আমাদের ছোট চাচা প্রয়াত অধ্যক্ষ ফয়জুল ইসলাম সিলেটে হাউজিং স্টেইট থাকতেন।তবে প্রায় প্রতি মাসেই বাড়ি আসতেন। তারপরও দুই ভাইয়ের প্রতি মাসে কম হলেও দুবার চিঠি বিনিময় হতো। কখনও হলুদ রঙের পোস্টকার্ডে, কখনও খামের ভেতরে ধবধবে সাদা কাগজে চিঠি!
আপারা আত্নীয়দের ছাড়াও সহপাঠি বন্ধুদের চিঠি লিখতেন। বলতে গেলে তাদের পেনফ্রেন্ড ছিল । আমারও এক কলম বন্ধু আছে। তবে এখন দুজন বন্ধুত্বেই শুধু আছি। নির্মম সত্য হলো- এনড্রয়েড ফোন পিরানহা মাছের মতো খেয়েছে আমাদের কলমবন্ধুতা! বন্ধুটি এখন ইতালীতে স্থায়ীভাবে বাস করছে। আমাদের দেখা কিংবা ছবি বিনিময় হয়নি শুরুর দুবছর। তারপর ছবিতে দেখা। স্বশরীরে দেখা হয় এক যুগেরও বেশী পরে।২০০৩ সালে আমার বিয়ের প্রায় দুই সপ্তাহ পরে।
সহজ কথা –আমাদের গোটা পরিবারের আত্নীয় -স্বজনদের সাথে সুমধুর সম্পর্কে ‘চিঠি‘ ছিল অবিচ্ছেদ্য অংশ। আনন্দ,স্নেহ,মমতা ভাগাভাগি ও ম্মৃতিময়তায় মজে থাকতে আমাদের পরিবারকে সৃজনাবহে রেখেছে ‘চিঠি‘- হলফ করে বলতে পারি ।
[… ] চিঠি কি নিছক বার্তা বহণ করে!
চিঠি কী শুধু ‘কেমন আছেন, ছালাম জানাইও, কদমবুছি দিও বা বিশেষ জরুরী কোন বার্তা‘ বহন করতো?
আমার অভিজ্ঞতা-ভিন্ন। চিঠি ছিল যাপিত জীবনের একটি সৃজনশীল আখ্যান। আনন্দ, দূ:খ, সুখ, বিরহ, বেদনা, শোকের বার্তার পাশাপাশি চিঠিতে ছিল পাড়া প্রতিবেশীর খবরা -খবর। এবং অনুভূতি ভাগাভাগির অনন্য মাধ্যম। এই যেমন- ‘তোমার পুবরবাড়ীর চাচার শরীর খুব খারপ, দোয়া করিও‘। ‘উত্তরবাড়ির ভাতিজা করিম দুবাই থেকে আসিয়া বিয়ে করেছেন।আমরা গিয়েছিলাম।সম্মানজনক উপহারও দিয়েছি‘। ‘ আমাদের কালা গাভী এবার ফুটফুটে লাল ডেখা বাছুর জন্ম দিয়েছে‘। ‘ গ্রামের জামে মসজিদের কাজ আগামী মাসে শুরু হবে, সম্ভব হলে আল্লাহর ওয়াস্তে কিছু দান করিও‘। ’গোষ্ঠির তোমার বড়চাচী গত সপ্তাহে ইন্তেকাল ফরমাইছেন, ছোট থাকতে তোমাদের কত আদর স্নেহ করেছেন, নামাজ পড়ে চাচীর জন্য দোয়া করিও।‘ ‘গাছে এবার প্রচুর আম –কাঠাল ধরেছে। ফল খেতে গেলেই তোমাদের কথা মনে পড়ে’। ‘ পুরান বাড়ির রহিমর আম্মা এসেছিলেন, তোমাকে অনুরোধ করেছেন তার চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা দিতে, সম্ভব হলে সাহায্য করিও। ‘বৈশাখী ঝড়ে সামনের শিরিশ গাছটি একেবারে ভেঙ্গে গেছে। কত ফুল ফুটতো…‘- ইত্যাদি কত মানবিক ও অনুভূতি বার্তা!
[ …] আছে দু:খবোধ…
বিলেতের প্রবাস জীবনে চিঠি নিয়ে মিশ্র স্মৃতিও আছে। লন্ডনে আমার প্রথম জব ছিল রেস্টুরেন্টে। সেসময় হাতে লিখে বাই পোস্টে ভোরের কাগজ, যায়যায় দিন, বাংলাবাজারে নিয়মিত ফিচার বিভাগে লেখা পাঠাতাম। রাতের বেলা কাজ শেষে ছোট রুমে রেস্টুরেন্ট এর সহকর্মীরা কার্ড খেলায় একপাশে ব্যস্ত আর আমি ম্যাট্রিক্স বেডে বুক লাগিয়ে শুয়ে ফিচার ও কলাম লিখতাম।যেদিন তাদের খেলার সঙ্গী পূর্ণ হচ্ছে না ,আমাকেও পীড়াপীড়ি করে ব্যর্থ হয়েছেন, সেদিন আমাকে অনিবার্য হজম করতে হয়েছে ভৎসনা ও বিরুপ মন্তব্য!
লণ্ডন আইয়া পাচফন (£5)বাঁচাইবার লাগি দেখো তাইন চিঠি লেখরা। কীবান প্রেম খরিয়া আইছন, এখন ছিঠি দিয়া শখ মিটাইরা! এরকম বহু মনখারাপের কথামালা স্মৃতির পুঠুলীতে জমা আছে।( ব্যক্তিগত সৃজনবোধের অমিলের কারণে সহকর্মীদের তখন বলা হয়ে ওঠেনি যে,- আমার শখের আরেকটি পেশা আছে- আমি বর্ণে- বর্ণে শব্দ বুনি, অনুভবের কথা বেঁচি, আমি একজন কথার ফেরিওয়ালা-ও!)। তবে তৃপ্তিবোধের জায়গা হলো- সবকিছু ছাপিয়ে তাদের কাছে ‘চিঠি‘ গুরুত্বপূর্ণ ছিল বটে!
[…] এআই(AI) কি কেড়ে নেবে চিঠির শৈশব!
ডিজিটাল যুগে পেশাগত প্রয়োজনে এআই (Artificial Intelligence) টুলস ব্যবহার শিখছি। পয়সা খরচ করে শেখার একটাই কারণ-বিকল্পহীনতা। ইন্টারনেট বান্ধব পেশায় বৃটেনে প্রতিযোগিতায় ঠিকে থাকতে হলে এআই(AI) ছাড়া প্রায় অসম্ভব হবে আগামী দশক।
প্রতিদিন এআই আমার সৃষ্টিশীলতা, সৃজনশীলতা উইপোকার মতো খুরে খুরে খাচ্ছে! আমার প্রমিত বিশ্বাস, তারপরও চিঠির গন্ধ আমাকে মুগ্ধ মায়ায় রাখবে আজীবন। বলতে গেলে, চিঠি লেখা থেকে আমি বেশী করে চিন্তার খোরাক পেয়েছি। শিখেছি- শব্দ চয়নের পরিমীতিবোধ, কাকে কী সন্মোধন করা সমীচীন, শিষ্টাচার ও কম শব্দে বিস্তৃর্ণ অনুভবের বর্ণনা ইত্যাদি।
ক্লাসের বই এর পাশাপাশি আউট বই পড়ার একটি পারিবারিক বিধিবদ্ধ নিয়ম ছিল আমাদের। অগ্রজদের চিঠি লেখার চর্চা দেখে বলতে গেলে আমি বই পড়ায় উৎসাহ পাই।কৈশরে মাসুদ রানা ও তিন গুয়েন্দা সিরিজ থেকে ধীরে ধীরে বুদ্ধদেব গুহর প্রকৃতি নির্ভর গল্পের বইগুলো আমাকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে। ফলত গোঁফ ওঠা বয়সের আগে, সিলেটের সাপ্তাহিক ও দৈনিকগুলোতে চিঠিপত্র বিভাগে লেখার সাহস জন্মে। এইসব স্মৃতি বলতে পারি আতর-গোলাপে অমলিন থাকবে আমৃত্যু।
[….] আমাকে কবিতা লেখায় প্রলুব্ধ করেছে চিঠি !
চিঠি লেখার অভ্যাস আমাকে কবিতা লেখায় বলতে গেলে বড় ভূমিকা রেখেছে। বিলেতের আরও দুটি অনুভূতি ভাগাভাগি করতে মন চাইছে-
এক. ইস্ট লণ্ডনের হোয়াটচ্যাপেলস্থ সেন্টাল পোস্ট অফিসে চিঠি পোষ্ট করতে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে আছি।একটু দূরে বাঙালী মানিকানাধীন মানি ট্রান্সফার দোকানের সামনেও দেখি প্রবাসী নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন। ঠিক কিছুদিন পরেই ছিল কোরবানীর ঈদ। আগে সিংহভাগ প্রবাসীকে মানি ট্রান্সফার শপে গিয়ে সরাসরি টাকা পাঠাতে হতো )। আমার হাতে বৃটেনের সাদা খামের ভিতরে বাবা-মাকে লেখা হাজারো অনুভূতি ছড়ানো চিঠি। অপর পাশে বুক পকেটে পাউন্ড নিয়ে দাড়িয়ে আছেন রেমিটেন্স যোদ্ধারা, প্রেরিত টাকায় সুখ,আনন্দ ছড়াবে তাদের বাবা-মা ও পরিবারে।
জানিনা কেমন করে, তখনই কবিতার মনোজগতে তৈরী হয় আমার একটি প্রিয় কবিতার লাইন – ‘‘ইস্ট লন্ডনের মানি ট্রান্টফার দোকানের লাইন দেখলে মনে পড়ে মায়ের মুখ।“
দুই. দুই হাজার সাত এ পরিবার নিয়ে বাংলাদেশে গেছি। সংগ্রহে রাখা পুরনো পেপার কাটিং গুলোর সাথে পেলাম অনেকগুলো চিঠি। আহা! কি অদ্ভূদ অনুভূতি। চিঠিগুলো লন্ডনে নিয়ে আসি।এক সকালে চিঠি পড়তে মন চাইল। ফেলে আসা সময়,স্নেহ, মায়া,ভালোবাসার বন্ধনের প্রতিচ্ছবিগুলো যতবার পড়ি ততোবার যেন গা শিউরে উঠলো। এযেন এক ভাষাহীন অনুভূতি।
এবং ঐ অনুভূতি আমার কবি মনের দুয়ার খোলে। লিখি আমার আরেকটি প্রিয় কবিতা-
একটা সিন্দুক আছে আমার মৌরসী
থাকে থাকে ভরা কষ্ট বিরহে
দুখের কর্পুলে খুশবুময় বছর-বছর।
ঋতুর মতো অদল-বদল হয় মন
নোনাজলে ভেজে আঁধার ভিতর
কপাট খুলে দেখি অবিকল আছে সব।
পরিপাটি বাহিরে ভেতর দেখেনি কেউ
ভূখামন বিষন্নতায় চৌকাটে ঘুমায়
আমার দুঃখ-কষ্ট বিরহ জন্মাবদি মৌরসী সম্পত্তি হয়ে রয়।
‘একটা সিন্দুক আছে আমার মৌরসী
থাকে থাকে ভরা কষ্ট বিরহে
দুখের কর্পুলে খুশবুময় বছর-বছর।
ঋতুর মতো অদল-বদল হয় মন
নোনাজলে ভেজে আঁধার ভিতর
কপাট খুলে দেখিÑঅবিকল আছে সব।
পরিপাটি বাহিরে ভেতর দেখেনি কেউ
ভূখামন বিষণœতায় চৌকাটে ঘুমায়
আমার দুঃখ-কষ্ট বিরহ জন্মাবদি মৌরসী সম্পত্তি হয়ে রয়।
(আমার একটি মৌরসী সিন্দুক আছে) কাব্যগ্রন্থ : ঝাউবন কান্দে ঘরকণ্যার লাগি )
[…] চিঠি আমার স্মৃতির শ্রাবণ-দুপুর…
চিঠি নিয়ে স্মৃতির শেষ নেই। সপ্তাহ দুইর মধ্যে বাড়িতে আব্বা-আম্মা অথবা বোনদের চিঠি পিয়নদা নিয়ে না আসলে মনে হতো কাকে যেন আমরা মিস করছি। আব্বা প্রায়শ: স্কুল থেকে এসে জিজ্ঞেস করতেন- কোন চিঠি এনেছে কী না।
মন ও মননে খুব সাধারণ ও প্রকৃতি বান্ধব মানুষ বলে নিজেকে ভাবনায় রাখি। কিন্তু ইদানিং ইন্টারনেট ও স্যোশাল মিডিয়া আমাদের সামাজিক সতেজ ও আনন্দময় সময় অক্টোপাসের মতো ঘিরে রেখেছে। একই ছাদের নিচে থেকেও যেন ওয়ান-টু ওয়ান কথা বলার , গল্প, গুজব, খুনসুটি বা সৃজনশীলতাকে আমরা অবলীলায় যোজন দূরে ঠেলে দিচ্ছি দিন দিন।
চা খাবে? অথবা ‘চা রেডি, নিচে আসো- ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে‘ এই বার্তাটিও কিচেন থেকে ড্রয়িং রুমে থাকা স্বামীকে স্ত্রী ফোনে বা টেক্স ম্যাসেজে জানাচ্ছেন। অথবা একসাথে নাস্তা বা বিকালের চা পান মুহুর্তে সামনা সামনি বসেও মোবাইলে ব্যস্ত আছি!
অথচ এই আমরাই একসময় ডুবে ছিলাম- আড্ডা,গল্পে,হাটি-ঠাট্টায়। এমনও তো আমাদের কিশোর বেলা ছিল- অগ্রজদের বার বার দমকও আমাদের অবিরাম হাসি, গল্প, আড্ডাকে থামাতে পারেনি!
[…] স্মার্টফোনের স্ক্রীন যেন অদৃশ্য এক কারাগার…
আমাদের জীবন এখন স্মার্ট ফোনের স্ক্রীনেই অদৃশ্য বন্দি। আমাদের সোনাঝরা দিন, আলো জ্বলমলে স্মৃতি আর কতদিন থাকবে! মনোবিদদের মতে, মানুষের স্মৃতিগুলো ঘরকণ্যার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ টাস্ক। মূলত সুন্দর মন- মানষিকতাকে বাঁচিয়ে রাখতে- স্মৃতিময় থাকার বিকল্প নেই। মনোবিদরা জোর দিয়ে বলছেন, যাপিত জীবনে এগুলোর নিয়মিত চর্চা অত্যন্ত জরুরী। আলাপে, আড্ডায় এগুলো ঘরকন্যার কাজের মতো লালন-পালন করতে হয়।
কর্মব্যস্ত দিনে পকেটে নিয়ে চলা আর রাতে ঘুমে ডুব দেবার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত মুঠোফোনে সময় পার করে বালিশের পাশে রেখে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস নিয়ে আমরা কীভাবে আশা করতে পারি- একটি স্নিগ্ধ ভোর অথবা সুন্দর আগামীর স্বপ্ন বীজের দিন।
আমরা একদিকে খুব সৌভাগ্যবান। অগ্রজ ও আমাদের ছেলেবেলা কেটেছে কাদামাটির স্পর্শে। উৎসব -পার্বণে খই, বাতাসা, আইসক্রিম খেয়ে। কাদামাটিতে লেটেপুঠে খেলাধুলার আনন্দে। একই বয়সের বর্তমান প্রজন্ম একই উৎসবে মজে থাকছে ফেইক ব্রান্ডের পোশাকে শুধু সেলফি তোলার ট্রেনডে। তারপর সামাজিক যোগাযোগে ছবি ছড়িয়ে ‘লাইক, রিএ্যাক্ট‘ গুনে নিজেকে প্রচারের ট্রেনডিং মানষিকতায়।
আগামী প্রজন্ম হয়তো জানবেইনা –চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো, খালাতো ভাই বোনদের রাত জেগে অমৃত আড্ডা কীভাবে হয়ে ওঠে। এই সম্পর্কের ভাই-বোনদের মধ্যে কী নিয়ে দুশ্টুমি, খুনসুটি, মারামারি, মান অভিমান হয়। এবং এইসবের সূত্র ধরে পরিবারের সবাইও কীভাবে আড্ডা, উৎসবে যোগ দেয়। তারা হয়তো সুযোগ পাবে না, বুঝবে না – মামার বাড়ি, ফুফুর বাড়ি বেড়াতে এসে- দিন শেষে হাতের আঙ্গুলে ‘আর কতদিন থাকতে পারবো‘- হিসাব করে মন খারাপের অনুভূতির স্বাদ আসলে কী রকম হয়। তারা হয়তো জানবে না- প্রিয়জনকে একটি চিঠি লিখতে- ‘অনুভূতির প্যারামিটার‘ কতবার উঠা- নামা করে!
আগামী প্রজন্ম এরকম গল্প করার কোন সৃজনশীল স্মৃতি কী পাবে। এই দায় তো আমাদের উপরই বর্তায়। আমরা কাজিনরা , দাদা, দাদী-নানা-নানীরাও কী একসাথে বসে গল্প করার চেষ্টা করি, আড্ডার উপলক্ষ,অনুসঙ্গ তৈরী করি বা করে দেই নতুন প্রজন্মকে? রাত ভুতুড়ে আমরা কী সৃজনশীল চিন্তা মনস্ক বা এ পথে হাটছি?
আচ্ছা, আপনি কি চিঠি লিখতেন নিয়মিত? এখনও লিখেন? আগে কীরকম লিখতেন? নিশ্চয় আনন্দস্মৃতি আছে অনেক। মন্তব্যে শেয়ার করতে পারেন- চিঠি নিয়ে আপনার অনুভূতি কথা। আমি প্রাণিত হবো, হলফ করে বলতে পারি।
আ নো য়া রু ল ই স লা ম অ ভি, কবি, সাংবাদিক
২৭ জুলাই,দুইহাজার পঁচিশ লন্ডন।
আরও পড়ুন-
https://52banglatv.com/2025/07/41864/



















