আবারও গোপালগঞ্জ যাওয়ার ঘোষণা নাহিদের, সরকার ও এনসিপি’র সমালোচনায় বিএনপি
- আপডেট সময় : ০৩:৩৬:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫
- / 247

হামলার পরও ফের গোপালগঞ্জ যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির-এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই ২০২৫) নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন। এ দিকে, গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে হতাহতের ঘটনায় সরকারের সমালোচনা করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে এমন কর্মসূচি পালনের জন্য এনসিপি’রও প্রচ্ছন্ন সমালোচনা করা হয়েছে বিএনপির সভা থেকে। কর্মসূচি গ্রহণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
নাহিদ বলেন, “আমরা আবারও গোপালগঞ্জ যাব। আমরা জীবিত থাকলে গোপালগঞ্জের প্রত্যেকটা উপজেলায় প্রত্যেকটা গ্রামে কর্মসূচি করব। গোপালগঞ্জের প্রতিটা ঘরে ঘরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পতাকা উড়বে। গোপালগঞ্জ মুজিববাদীদের হবে না, বাংলাদেশপন্থীদের হবে।”
পোস্টে তিনি বলেন, গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ এবং পূর্বঘোষিত। সেখানে কোনো যুদ্ধের আহ্বান নিয়ে যাননি তারা।
নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, “গোপালগঞ্জ নিয়ে আমাদের অবস্থান গতকালের বক্তব্যেই পরিষ্কার বলা হয়েছে। পুরো বাংলাদেশের প্রতি আমাদের যে কমিটমেন্ট, গোপালগঞ্জের প্রতিও আমাদের সেই একই কমিটমেন্ট রয়েছে। গোপালগঞ্জের অধিবাসীদের প্রতি রাজনৈতিক বৈষম্য আমরা বিরোধিতা করি।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ যুগের পর যুগ ধরে গোপালগঞ্জের মানুষের জীবনকে বিপন্ন করেছে, মুক্তিযুদ্ধকে কলুষিত করেছে এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি অবিচার করেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে বেইনসাফি করেছে। আমরা বলেছি আমরা এ পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাব।”
আওয়ামী লীগ সবসময় গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় অভিযোগ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা যুদ্ধের আহ্বান নিয়ে যাই নাই। আমাদের পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছিল। মুজিববাদী সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্য সশস্ত্র হামলা চালায় আমাদের ওপরে। যেরকমটা জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও হয়েছিল। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের এত হত্যাযজ্ঞের পরেও ৫ আগস্টের পরে অনেকে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ আনতে চেয়েছিল। তাদের মনে রাখা উচিত আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয় আর, এটা একটা সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। ৫ আগস্টের পরে আমরা বহুবার বলছি আমরা আইনী ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় জুলাই গণহত্যার বিচার চাই। কিন্তু ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের লোকদের ব্যাপকভাবে গ্রেপ্তার করা হয় নাই। গ্রেপ্তার হলেও কোর্টে জামিন নিচ্ছে, থানা থেকে পালিয়ে যাচ্ছে।
পোস্টে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক অভিযোগ করেন, “প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ঘাপটি মেরে আছে ফ্যাসিবাদের দোসর এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, যাদের টাকা দিয়ে কিনে ফেলা যায়। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পুরো বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গার নেতাকর্মীরা গতকাল গোপালগঞ্জে ছিল। প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী যেভাবে ইনস্ট্রাকশন দিয়েছে, সকালের নাশকতার পরেও সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স পেয়েই আমরা গোপালগঞ্জে প্রবেশ করেছি। পদযাত্রা করি নাই, পথসভা করেছি শুধু। গোপালগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আমাদের লোকজনকে আসতে দেওয়া হয় নাই। বিভিন্ন জায়গায় বাস আটকে দেওয়া হয়েছে।
গোপালগঞ্জে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনায় বিএনপি
গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলা, নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণের জন্য সরকারের সমালোচনা করেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সভা এ প্রসঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে। স্থায়ী কমিটি আশা করে, রাজনৈতিক দলগুলো অত্যন্ত সর্তকতার সঙ্গে তাদের কর্মসূচি নির্ধারণ করবে। না হলে গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিকে সুযোগ করে দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির সভায় এ মতামত দেওয়া হয়।
বুধবার গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির সভায় আওয়ামী লীগের সমর্থক ও দুর্বৃত্তদের হামলায় চার জন নিহত হওয়ায় গভীর নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপি।
সভা মনে করে, পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সমর্থকেরা পরিকল্পিতভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নৎসাত করার জন্য ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনকারী জাতীয় নাগরিক পার্টির সমাবেশে আক্রমণের ঘটনা ঘটায়। ফলশ্রুতিতে সরকারকে ১৪৪ ধারা ও কারফিউ জারি করতে হয়; যা এই মুহূর্তে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যহত করার নীল নকশা বলে মনে করা হয়।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্যান্য সদস্যরা অংশ নেন। তারা হলেন– ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বীর বিক্রম ও অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।


















