‘আপনি বেশি কথা বলেন, আদালত বিব্রত হয়’: আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীকে ট্রাইব্যুনাল
- আপডেট সময় : ০৫:৪৫:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫
- / 121
“আপনি বেশি কথা বলেন। এমন অনেক কথা বলেন যা আদালতের জন্য বিব্রতকর হয়ে ওঠে।” — পলাতক চার আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেনকে উদ্দেশ করে এমন মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পলাতক চার আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সোমবার (৩ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১-এ তৃতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বেঞ্চে শুনানি হয়। অন্য সদস্য ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজধানীর রামপুরায় ছাদের কার্নিশে ঝুলে থাকা আমির হোসেনকে গুলি করে হত্যাচেষ্টাসহ দুজনকে হত্যার অভিযোগে এ মামলা চলছে।
তৃতীয় সাক্ষী হিসেবে ওইদিন জবানবন্দি দেন শহীদ মো. নাদিম মিজানের স্ত্রী তাবাসসুম আক্তার নিহা। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামি এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারের আইনজীবী সারওয়ার জাহানের পর তাকে জেরা শুরু করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। একপর্যায়ে তিনি সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন, “আপনার স্বামীকে কে গুলি করেছিল, আপনি কি দেখেছেন?”
প্রসিকিউশন তাৎক্ষণিক আপত্তি জানায়। তারা বলে, “একই প্রশ্ন আগের আইনজীবীও করেছেন। তখন সাক্ষী ভেটো দিয়েছেন।”
এ সময় ট্রাইব্যুনাল আমির হোসেনকে উদ্দেশ করে বলে, “এতে আপনার লাভ কী হবে? তার স্বামী মারা গেছেন, এটাই প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট। আপনার আসামিদের নামও বলা হয়নি।”
এর জবাবে আমির হোসেন বলেন, “মাই লর্ড, লাভের হিসাব অনেক দীর্ঘ। এ প্রশ্নে আমার আসামিদের লাভও হতে পারে।” এরপর তিনি নানা যুক্তি উপস্থাপন করতে থাকেন।
তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, “আপনি বেশি কথা বলেন। এমন অনেক কথা বলেন যা আদালতের জন্য বিব্রতকর হয়ে দাঁড়ায়। এর আগেও একটি বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ১০টি কথা বলেছেন। আপনার এসব প্রশ্নে লাভ কী? সাক্ষী নিহা একজন ভুক্তভোগী। তার সাক্ষ্যে আপনার আসামিরা তো মুক্তি পেয়ে যাবে না।”
ট্রাইব্যুনাল আরও বলেন, “আমরা যদি ভুল করি, তাহলে আপনাদের যাওয়ার সুযোগ আছে। আমরা তো একটি মতামত দিই মাত্র। এটি হিয়ারসে সাক্ষ্য, আর তার স্বামী মারা গেছেন— এজন্যই এই সাক্ষ্য নেওয়া হচ্ছে।”
ট্রাইব্যুনালের এই মন্তব্যে সম্মতি জানিয়ে আমির হোসেন বলেন, “জি মাই লর্ড।” এরপর তিনি বাকি প্রশ্ন শেষ করে জেরা শেষ করেন।
বেলা ১১টা ২৭ মিনিটে নাদিমের স্ত্রী নিহা সাক্ষীর ডায়াসে ওঠেন। সঙ্গে ছিলেন তার তিন বছরের ছেলে আনাস বিন নাদিম। শপথ পাঠ করে তিনি ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই স্বামী হত্যার পুরো ঘটনার বিবরণ দেন এবং বিচার দাবি করেন। পরে তাকে জেরা করেন পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন ও গ্রেপ্তার চঞ্চল চন্দ্র সরকারের পক্ষে আইনজীবী সারওয়ার জাহান।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ান, সাইমুম রেজা তালুকদারসহ অন্যরা।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় গ্রেপ্তার আছেন রামপুরা ফাঁড়ির সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার। পলাতক চার আসামি হলেন— ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, খিলগাঁও জোনের সাবেক এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমান এবং সাবেক এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া। গত ১০ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় রামপুরার বনশ্রী-মেরাদিয়া এলাকায় পুলিশ-বিজিবির উপস্থিতি দেখে আতঙ্কে পাশের একটি নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে ওঠেন ফুফুর বাসায় ফেরা পথে থাকা তরুণ আমির হোসেন। তখন পুলিশও পিছু নেয়। জীবন বাঁচাতে তিনি ছাদের কার্নিশের রড ধরে ঝুলে থাকেন। পরে পুলিশ সদস্যরা ছয়টি গুলি চালালে তিনি তিনতলায় পড়ে যান। স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে বনশ্রীর একটি হাসপাতালে, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে তিনি বাড়ি ফেরেন।
সেদিন একই এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন নাদিম ও মায়া ইসলাম। গুলিবিদ্ধ হয় মায়া ইসলামের ছয় বছর বয়সী নাতি বাসিত খান মুসা। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিয়েও শিশুটি এখনো কথা বলতে পারছে না।


















