আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার : শেষ হতে কত সময় লাগবে?
- আপডেট সময় : ১০:৪৫:৩৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
- / 247

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আগামী সপ্তাহেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করতে যাচ্ছে প্রসিকিউশন টিম। ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে চলা আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে।
ক্ষমতা হারানোর পর এটাই প্রথম মামলা, যেখানে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। এই মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে আরও দুইজন অভিযুক্ত আছেন—সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা আশা করছি, ঈদুল আজহার ছুটি শুরুর আগেই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ জমা দিতে পারব।”
“ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট – ১৯৭৩ অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের মাধ্যমেই বিচার প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়,” বলেন মি. তামীম।
ফলে, ঈদের ছুটির আগেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত বছরের জুলাইয়ে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান প্রসিকিউটর।
গত ১২ই মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।
কিন্তু বিচার কবে শেষ হবে—এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি মি. তামীম।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল অবশ্য গত সোমবার ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, এই মামলার বিচার অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনকালেই শেষ হবে।
বিচার প্রক্রিয়ার ধাপ
জুলাই মাসের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ চূড়ান্ত করেছে প্রসিকিউশন। প্রসিকিউটর মি. তামীম জানান, প্রসিকিউশন আনুমানিক ৫০ জন সাক্ষী উপস্থাপন করবে।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে শেখ হাসিনাকে “মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাইয়ের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের ‘উস্কানিদাতা’ হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে প্ররোচনা, উস্কানি, ষড়যন্ত্র ও সম্পৃক্ততার অভিযোগও রয়েছে।
প্রসিকিউটর মি. তামীম জানান, অভিযোগ দাখিলের পর ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্তদের হাজির করতে বিজ্ঞপ্তি জারি করবে। যেহেতু শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক, তাই বাংলাদেশের দুটি জাতীয় দৈনিকে তাদের হাজির হওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। হাজির না হলে তাদের পলাতক ঘোষণা করে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করা হবে। এরপর অভিযোগ গঠনের শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ, জেরা, যুক্তিতর্ক ও রায় ঘোষণা হবে।
আইন অনুযায়ী এই মামলায় ডিজিটাল সাক্ষ্যপ্রমাণ গ্রহণযোগ্য। প্রসিকিউশন ভিডিও ফুটেজ ও অডিও রেকর্ড উপস্থাপন করবে। মি. তামীম বলেন, “প্রথম অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলা ভিডিও প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হবে।”
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আরও বলেন, শেখ হাসিনার এ বক্তব্যের মাধ্যমে বিভিন্ন বাহিনী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ‘লেলিয়ে দেওয়া’ হয়েছিল। দ্বিতীয় অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ‘সরাসরি নির্দেশ দেওয়ার’ অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে হত্যা, গুলি ও অঙ্গহানির নির্দেশও আছে। এসব নির্দেশের টেলিফোনাল কথোপকথনও প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হবে।
মি. তামীম জানান, “শেখ হাসিনার দুটি অডিও রেকর্ড এবং আন্দোলনের ভিডিও ফুটেজ প্রমাণ হিসেবে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হবে।”
১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অগ্রগতি
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখনও ৩০টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে ৫৫ জন আসামি মারা গেছেন। তবে সম্প্রতি এসব মামলার অগ্রগতি স্থবির হয়ে পড়েছে। মি. তামীম বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানের পর ট্রাইব্যুনালের নথিপত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আগের প্রসিকিউটররা পদত্যাগ করেছেন।”
প্রসঙ্গত, মি. তামীম এর আগে জামায়াতের আসামিদের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছিলেন। কিন্তু এখন নতুন প্রসিকিউশন টিমে কাজ করছেন। এ নিয়ে কোনো আইনি বা নৈতিক সমস্যা নেই বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনার বিচার কত দিনে শেষ হবে?
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর বিচার কবে শেষ হবে—এই প্রশ্নের নির্দিষ্ট উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন মি. তামীম। তিনি বলেন, “বিচার পরিচালনা ও সময়সীমা পুরোপুরি ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার। প্রসিকিউশন সেটা বলতে পারে না।”
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল অবশ্য ফেসবুকে পোস্টে উল্লেখ করেছেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রধান আসামি হিসেবে শেখ হাসিনার বিচার শিগগিরই শুরু হচ্ছে। ইনশাল্লাহ্, ড. ইউনূস স্যারের সরকারের শাসনামলেই এই বিচারের রায় আমরা পেয়ে যাব।”
তিনি আরও লেখেন, “গণহত্যার বিচার, আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার।” একইসাথে বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো মামলায় এত দ্রুত শুনানি শুরুর নজির নেই বলেও উল্লেখ করেছেন।
সূত্র: বিবিসি নিউজ বাংলা


















