ঢাকা ০৫:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

অন্তর্বর্তী সরকারের চোখেও জামায়াত ৭১-এর ‘সশস্ত্র শত্রু’

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০১:১৩:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫
  • / 486
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন অধ্যাদেশে ৫২ বছর পর আবারও একাত্তরের জামায়াত উঠে এসেছে ‘শত্রু’ হিসেবে। ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন’ সংশোধনী অধ্যাদেশের দুই জায়গায় জামায়াতকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী বলা হয়েছে। সেই সহযোগিতা যে সশস্ত্র ছিল, সেটারও আভাস মিলেছে।

যাদের বিরুদ্ধে করা যুদ্ধকে মুক্তিযুদ্ধ এবং যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হবেন—দুটি সংজ্ঞাতেই জামায়াতের নাম এসেছে। যদিও জামায়াত নেতারা ইদানীং দাবি করে আসছেন, তাদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অবস্থান নিছকই রাজনৈতিক ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এম এ কাউসার মনে করেন, সরকারের বয়ান থেকেই স্পষ্ট—জামায়াত সশস্ত্রভাবে সহযোগিতা করেছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, “আমরা যেটা ইতিহাসে সত্য সেটাই উল্লেখ করেছি।”

বিষয়টি জানতে চাইলে জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয়টি নিয়ে ব্যক্তিগত মন্তব্যের সুযোগ নেই। এটা সাংগঠনিক বিষয়। দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে। এরপর আমরা এ বিষয়ে জানাতে পারব।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মামুন আল মোস্তফা বলেন, “জামায়াত যে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল, সেটা কি আর সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির অপেক্ষা রাখে?”

তবে তিনি যোগ করেন, জামায়াতকে ঘিরে এখনকার সরকারের অবস্থান এ বিষয়টির গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলছে কি না, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

গণঅভ্যুত্থানের পর উত্থান

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে আড়ালে চলে গেছে বলে ধারণা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি জামায়াতের উত্থান নিয়েও তুমুল আলোচনা চলছে। অনেকে বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের একটি শক্তির জায়গা জামায়াত।

গত ২২ মে মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের আলোচনা চলার সময় জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান তাকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহেরও সরাসরি বলেছিলেন, এই সরকারকে টিকিয়ে রাখতে হবে। সেদিনের সেই নড়বড়ে অবস্থান এখন আর নেই।

গত ১০ মাসে জামায়াতের আগের চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী অবস্থানও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দুই যুগের সঙ্গী বিএনপির সঙ্গে তারা টানাপড়েনে জড়াচ্ছে, ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নও দেখছে। তবে বিএনপি আবার জামায়াতের একাত্তরের ভূমিকার প্রসঙ্গ তুলে তাদের আক্রমণ করছে। যদিও ২০০১ সালে বিএনপিই জামায়াতকে ক্ষমতার অংশীদার করেছিল। আলবদর বাহিনীর দুই নেতা নিজামী ও মুজাহিদকে মন্ত্রী করার পর তুমুল সমালোচনা হয়েছিল।

অন্তর্বর্তী সরকারের জারি করা এই অধ্যাদেশ যে বিএনপি সমর্থকদের ‘হাতিয়ার’ হয়ে উঠেছে, সেটিও স্পষ্ট। জামায়াতের একাত্তরের ভূমিকার যে অংশটি লেখা আছে, সেই দুটি পৃষ্ঠা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সামাজিক মাধ্যমে দেদার শেয়ার করছেন।

অধ্যাদেশে কী বলা হয়েছে?

‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ২০২২’ সংশোধনের জন্য প্রণীত অধ্যাদেশে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’র সংজ্ঞায় বলা হয়েছে:
“যাহারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে গ্রামেগঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করিয়াছেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করিয়া ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করিয়াছেন এবং স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিপক্ষে যুদ্ধে লিপ্ত হইয়া হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী ও তাহাদের দেশীয় সহযোগী রাজাকার, আল বদর, আল শামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করিয়াছেন।”

মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে: “১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষায় হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাহাদের সহযোগী রাজাকার, আল বদর, আল শামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধ।”

এই সংজ্ঞাগুলো স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারও মনে করছে, ১৯৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকা নিছক রাজনৈতিক ছিল না—তারা অস্ত্রও তুলেছিল।

সংজ্ঞায় যে আলবদর বাহিনীর কথা বলা হয়েছে, সেটি সে সময় জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতাকর্মীরাই গড়ে তুলেছিলেন। জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ এই বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় মে মাসে খুলনার খানজাহান আলী সড়কে জামায়াত নেতা আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনীর প্রথম ইউনিট শপথ গ্রহণ করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এম এ কাউসার বলেন, “জামায়াত কী বলবে, সেটা তো আমি বলতে পারব না। তবে মুক্তিযুদ্ধ ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে। যারা তাদের সহযোগিতা করেছে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে তারাও শত্রুপক্ষের সহযোগী।”

তিনি আরও বলেন, “শত্রুপক্ষ মানে শুধু জামায়াত নয়—যে কোনো দল বা ব্যক্তিই সহযোগিতা করলে, তাদেরও শত্রুপক্ষের অংশ হিসেবেই বিবেচনা করা হবে।”

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম বলেন, “জামায়াতকে আমরা পাকিস্তানের সহযোগী বলছি। আর তারা আলবদর নামে একটা দল বানিয়েছিল, না?”

জামায়াতের প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মামুন আল মোস্তফা মনে করেন, এই অধ্যাদেশে জামায়াতের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকা উঠে এলেও দলটি খুব বেশি অখুশি হবে না।

তার ব্যাখ্যা, “এখানে ‘তৎকালীন জামায়াতের’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ, বোঝানো হচ্ছে বর্তমান জামায়াত আর সেই জামায়াত এক নয়—এক ধরনের ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব।”

তিনি বলেন, “সরকার আসলে বলছে, এখনকার জামায়াত একাত্তরের জামায়াতের মতো নয়। এ জন্য জামায়াত খুব অখুশি হবে বলে মনে হয় না।”

তবে জামায়াত একাত্তরের ভূমিকার জন্য কখনও দুঃখ প্রকাশ করেনি। সে ক্ষেত্রে ‘একাত্তরের জামায়াত’ আর ‘বর্তমান জামায়াত’ আলাদা করা সম্ভব কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “জামায়াতের ভোটারদের কাছে একাত্তর তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।”

“আর একাত্তরের পরে নিষিদ্ধ জামায়াত তো ১৯৭৬/৭৭ সালে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ এবং সংবিধান মানার শর্তে নিবন্ধিত হয়। এখনকার জামায়াত তো বলতে পারে, তারা বাংলাদেশের সংবিধান মেনেই কাজ করছে।”

“জামায়াত কেন একাত্তরের অবস্থান স্বীকার করে না, সেটাও তাদের বিষয়,” বলেন মামুন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা আজমকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, মুসলিম লীগ-জামায়াতের নামের আগে ‘তৎকালীন’ শব্দটি কেন ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, “যুদ্ধটা তো সেই সময়ের। আর সেই সময়ে জামায়াত পাকিস্তানের পক্ষে ছিল।”

আপনি কি মনে করেন, বর্তমান জামায়াত তাদের সেই অবস্থান অস্বীকার করছে? উপদেষ্টা বলেন, “আমি সেটা মনে করি না। ওরা এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেবে। ওদের কাছেই জিজ্ঞেস করতে পারেন।”

পাকিস্তানকে সমর্থন ‘অপরাধ না’: জামায়াত
জামায়াতের প্রচার সম্পাদক বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে না চাইলেও দলটির আমির শফিকুর রহমানের গত নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের একটি বক্তব্য প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে।

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে সেদিন বলেন, “ইয়েস, জামায়াতে ইসলামী ওয়ান পাকিস্তানের পক্ষে সাপোর্ট দিয়েছিল। এটা রাজনীতিতে অপরাধ না। তখন পাকিস্তানের অংশ ছিল পূর্ব পাকিস্তান।”

এক কোটি মানুষ ভারতে গেলেও তাদের যাওয়ার জায়গা ছিল না বলে দাবি করে তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামী বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য সে সময় দেশের ভেতরে থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ও তাদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া ছাড়া আর কিছু করার ‘সুযোগ ছিল না। শুধু জামায়াত না, যারা ইন্ডিয়ায় যেতে পারেনি তারা সকলেই পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।”

বাকিদের প্রসঙ্গ না এলেও জামায়াতের প্রসঙ্গটা আসে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কারণ, বাকি দলগুলো নিজেদের কার্যক্রমের মাধ্যমে জাতির সামনে নিজেদের অবস্থানটা তুলে ধরতে পারেনি, রাজনীতিতে তাদের অবস্থানটা উল্লেখযোগ্য না। তাদেরকে কেউ মাথাব্যথা হিসেবে নিচ্ছে না। সাবজেক্ট হিসেবে থেকে গেল জামায়াতে ইসলামী।”

কার কাছে ক্ষমা চাইলেন জামায়াত আমির?
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নে জামায়াতে বহু বছর ধরেই দুটি পক্ষ আছে বলে নানা সময় সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। একটি পক্ষ স্বাধীনতার বিরোধিতা করে ক্ষমা চাওয়ার পক্ষে।

সদ্য প্রয়াত ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বছরের পর বছর জামায়াতকে ক্ষমা চাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে ২০১৯ সালে দল ত্যাগ করেন।

গত ৪ মে তিনি মারা যাওয়ার পর দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে লেখা চিঠিটি আবার সামনে আসে। সেই চিঠিতে তিনি লেখেন, “আমি সবসময় বিশ্বাস করেছি এবং এখনও করি যে, ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে নেতিবাচক ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়া শুধু নৈতিক দায়িত্বই নয় বরং তৎপরবর্তী প্রজন্মকে দায়মুক্ত করার জন্য অত্যন্ত জরুরি কর্তব্য।”

এর মধ্যে গত ২৭ মে এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত আমির শফিকুর রহমান বলেন, “দল হিসেবে আমরা দাবি করি না, যে আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে। এ সংগঠনের প্রতিটি কর্মী, সহকর্মী, কিংবা দলের দ্বারা যে যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, কষ্ট পেয়েছেন সবার কাছে, কোনো শর্ত নেই, বিনা শর্তে মাফ চাই। আপনারা আপাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।”

সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমা চান জামায়াত আমির
তবে কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই ক্ষমা চেয়েছেন সেটি তিনি খোলাসা করেননি। আর লিখিত বক্তব্য দেওয়ার পর প্রশ্ন না করারও অনুরোধ করেন। ফলে বিষয়টি জানার সুযোগ ছিল না।
কেন ক্ষমা চাইলেন- এই প্রশ্নে জামায়াতের মুখপাত্র হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “আপনি কি সেখানে ছিলেন?”

‘জ্বি, ছিলাম’, বলার পর তিনি বলেন, “আপনিও যেটা শুনেছেন, আমিও সেটা শুনেছি।”

একাত্তর নিয়েই কি তাহলে এই ক্ষমা চাওয়া হলো?- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আর কোনো বক্তব্য নাই।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মামুন আল মোস্তফা বলেন, “আমার মনে হয় না মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে ক্ষমা চেয়েছেন জামায়াত আমির। ৭১ সালের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাইলে সেটা স্পষ্টভাবেই চাইতেন।

“আমার মনে হয় ইদানীং বিভিন্ন কাজে জড়িত হয়ে গেছে জামায়াত ও তার ছাত্র সংগঠন। সেসব নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। সেগুলোর কারণেই হয়ত ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।”

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

অন্তর্বর্তী সরকারের চোখেও জামায়াত ৭১-এর ‘সশস্ত্র শত্রু’

আপডেট সময় : ০১:১৩:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন অধ্যাদেশে ৫২ বছর পর আবারও একাত্তরের জামায়াত উঠে এসেছে ‘শত্রু’ হিসেবে। ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন’ সংশোধনী অধ্যাদেশের দুই জায়গায় জামায়াতকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী বলা হয়েছে। সেই সহযোগিতা যে সশস্ত্র ছিল, সেটারও আভাস মিলেছে।

যাদের বিরুদ্ধে করা যুদ্ধকে মুক্তিযুদ্ধ এবং যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হবেন—দুটি সংজ্ঞাতেই জামায়াতের নাম এসেছে। যদিও জামায়াত নেতারা ইদানীং দাবি করে আসছেন, তাদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অবস্থান নিছকই রাজনৈতিক ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এম এ কাউসার মনে করেন, সরকারের বয়ান থেকেই স্পষ্ট—জামায়াত সশস্ত্রভাবে সহযোগিতা করেছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, “আমরা যেটা ইতিহাসে সত্য সেটাই উল্লেখ করেছি।”

বিষয়টি জানতে চাইলে জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয়টি নিয়ে ব্যক্তিগত মন্তব্যের সুযোগ নেই। এটা সাংগঠনিক বিষয়। দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে। এরপর আমরা এ বিষয়ে জানাতে পারব।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মামুন আল মোস্তফা বলেন, “জামায়াত যে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল, সেটা কি আর সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির অপেক্ষা রাখে?”

তবে তিনি যোগ করেন, জামায়াতকে ঘিরে এখনকার সরকারের অবস্থান এ বিষয়টির গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলছে কি না, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

গণঅভ্যুত্থানের পর উত্থান

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে আড়ালে চলে গেছে বলে ধারণা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি জামায়াতের উত্থান নিয়েও তুমুল আলোচনা চলছে। অনেকে বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের একটি শক্তির জায়গা জামায়াত।

গত ২২ মে মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের আলোচনা চলার সময় জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান তাকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহেরও সরাসরি বলেছিলেন, এই সরকারকে টিকিয়ে রাখতে হবে। সেদিনের সেই নড়বড়ে অবস্থান এখন আর নেই।

গত ১০ মাসে জামায়াতের আগের চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী অবস্থানও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দুই যুগের সঙ্গী বিএনপির সঙ্গে তারা টানাপড়েনে জড়াচ্ছে, ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নও দেখছে। তবে বিএনপি আবার জামায়াতের একাত্তরের ভূমিকার প্রসঙ্গ তুলে তাদের আক্রমণ করছে। যদিও ২০০১ সালে বিএনপিই জামায়াতকে ক্ষমতার অংশীদার করেছিল। আলবদর বাহিনীর দুই নেতা নিজামী ও মুজাহিদকে মন্ত্রী করার পর তুমুল সমালোচনা হয়েছিল।

অন্তর্বর্তী সরকারের জারি করা এই অধ্যাদেশ যে বিএনপি সমর্থকদের ‘হাতিয়ার’ হয়ে উঠেছে, সেটিও স্পষ্ট। জামায়াতের একাত্তরের ভূমিকার যে অংশটি লেখা আছে, সেই দুটি পৃষ্ঠা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সামাজিক মাধ্যমে দেদার শেয়ার করছেন।

অধ্যাদেশে কী বলা হয়েছে?

‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ২০২২’ সংশোধনের জন্য প্রণীত অধ্যাদেশে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’র সংজ্ঞায় বলা হয়েছে:
“যাহারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে গ্রামেগঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করিয়াছেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করিয়া ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করিয়াছেন এবং স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিপক্ষে যুদ্ধে লিপ্ত হইয়া হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী ও তাহাদের দেশীয় সহযোগী রাজাকার, আল বদর, আল শামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করিয়াছেন।”

মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে: “১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষায় হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাহাদের সহযোগী রাজাকার, আল বদর, আল শামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধ।”

এই সংজ্ঞাগুলো স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারও মনে করছে, ১৯৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকা নিছক রাজনৈতিক ছিল না—তারা অস্ত্রও তুলেছিল।

সংজ্ঞায় যে আলবদর বাহিনীর কথা বলা হয়েছে, সেটি সে সময় জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতাকর্মীরাই গড়ে তুলেছিলেন। জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ এই বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় মে মাসে খুলনার খানজাহান আলী সড়কে জামায়াত নেতা আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনীর প্রথম ইউনিট শপথ গ্রহণ করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এম এ কাউসার বলেন, “জামায়াত কী বলবে, সেটা তো আমি বলতে পারব না। তবে মুক্তিযুদ্ধ ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে। যারা তাদের সহযোগিতা করেছে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে তারাও শত্রুপক্ষের সহযোগী।”

তিনি আরও বলেন, “শত্রুপক্ষ মানে শুধু জামায়াত নয়—যে কোনো দল বা ব্যক্তিই সহযোগিতা করলে, তাদেরও শত্রুপক্ষের অংশ হিসেবেই বিবেচনা করা হবে।”

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম বলেন, “জামায়াতকে আমরা পাকিস্তানের সহযোগী বলছি। আর তারা আলবদর নামে একটা দল বানিয়েছিল, না?”

জামায়াতের প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মামুন আল মোস্তফা মনে করেন, এই অধ্যাদেশে জামায়াতের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকা উঠে এলেও দলটি খুব বেশি অখুশি হবে না।

তার ব্যাখ্যা, “এখানে ‘তৎকালীন জামায়াতের’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ, বোঝানো হচ্ছে বর্তমান জামায়াত আর সেই জামায়াত এক নয়—এক ধরনের ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব।”

তিনি বলেন, “সরকার আসলে বলছে, এখনকার জামায়াত একাত্তরের জামায়াতের মতো নয়। এ জন্য জামায়াত খুব অখুশি হবে বলে মনে হয় না।”

তবে জামায়াত একাত্তরের ভূমিকার জন্য কখনও দুঃখ প্রকাশ করেনি। সে ক্ষেত্রে ‘একাত্তরের জামায়াত’ আর ‘বর্তমান জামায়াত’ আলাদা করা সম্ভব কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “জামায়াতের ভোটারদের কাছে একাত্তর তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।”

“আর একাত্তরের পরে নিষিদ্ধ জামায়াত তো ১৯৭৬/৭৭ সালে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ এবং সংবিধান মানার শর্তে নিবন্ধিত হয়। এখনকার জামায়াত তো বলতে পারে, তারা বাংলাদেশের সংবিধান মেনেই কাজ করছে।”

“জামায়াত কেন একাত্তরের অবস্থান স্বীকার করে না, সেটাও তাদের বিষয়,” বলেন মামুন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা আজমকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, মুসলিম লীগ-জামায়াতের নামের আগে ‘তৎকালীন’ শব্দটি কেন ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, “যুদ্ধটা তো সেই সময়ের। আর সেই সময়ে জামায়াত পাকিস্তানের পক্ষে ছিল।”

আপনি কি মনে করেন, বর্তমান জামায়াত তাদের সেই অবস্থান অস্বীকার করছে? উপদেষ্টা বলেন, “আমি সেটা মনে করি না। ওরা এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেবে। ওদের কাছেই জিজ্ঞেস করতে পারেন।”

পাকিস্তানকে সমর্থন ‘অপরাধ না’: জামায়াত
জামায়াতের প্রচার সম্পাদক বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে না চাইলেও দলটির আমির শফিকুর রহমানের গত নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের একটি বক্তব্য প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে।

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে সেদিন বলেন, “ইয়েস, জামায়াতে ইসলামী ওয়ান পাকিস্তানের পক্ষে সাপোর্ট দিয়েছিল। এটা রাজনীতিতে অপরাধ না। তখন পাকিস্তানের অংশ ছিল পূর্ব পাকিস্তান।”

এক কোটি মানুষ ভারতে গেলেও তাদের যাওয়ার জায়গা ছিল না বলে দাবি করে তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামী বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য সে সময় দেশের ভেতরে থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ও তাদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া ছাড়া আর কিছু করার ‘সুযোগ ছিল না। শুধু জামায়াত না, যারা ইন্ডিয়ায় যেতে পারেনি তারা সকলেই পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।”

বাকিদের প্রসঙ্গ না এলেও জামায়াতের প্রসঙ্গটা আসে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কারণ, বাকি দলগুলো নিজেদের কার্যক্রমের মাধ্যমে জাতির সামনে নিজেদের অবস্থানটা তুলে ধরতে পারেনি, রাজনীতিতে তাদের অবস্থানটা উল্লেখযোগ্য না। তাদেরকে কেউ মাথাব্যথা হিসেবে নিচ্ছে না। সাবজেক্ট হিসেবে থেকে গেল জামায়াতে ইসলামী।”

কার কাছে ক্ষমা চাইলেন জামায়াত আমির?
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নে জামায়াতে বহু বছর ধরেই দুটি পক্ষ আছে বলে নানা সময় সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। একটি পক্ষ স্বাধীনতার বিরোধিতা করে ক্ষমা চাওয়ার পক্ষে।

সদ্য প্রয়াত ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বছরের পর বছর জামায়াতকে ক্ষমা চাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে ২০১৯ সালে দল ত্যাগ করেন।

গত ৪ মে তিনি মারা যাওয়ার পর দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে লেখা চিঠিটি আবার সামনে আসে। সেই চিঠিতে তিনি লেখেন, “আমি সবসময় বিশ্বাস করেছি এবং এখনও করি যে, ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে নেতিবাচক ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়া শুধু নৈতিক দায়িত্বই নয় বরং তৎপরবর্তী প্রজন্মকে দায়মুক্ত করার জন্য অত্যন্ত জরুরি কর্তব্য।”

এর মধ্যে গত ২৭ মে এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত আমির শফিকুর রহমান বলেন, “দল হিসেবে আমরা দাবি করি না, যে আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে। এ সংগঠনের প্রতিটি কর্মী, সহকর্মী, কিংবা দলের দ্বারা যে যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, কষ্ট পেয়েছেন সবার কাছে, কোনো শর্ত নেই, বিনা শর্তে মাফ চাই। আপনারা আপাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।”

সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমা চান জামায়াত আমির
তবে কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই ক্ষমা চেয়েছেন সেটি তিনি খোলাসা করেননি। আর লিখিত বক্তব্য দেওয়ার পর প্রশ্ন না করারও অনুরোধ করেন। ফলে বিষয়টি জানার সুযোগ ছিল না।
কেন ক্ষমা চাইলেন- এই প্রশ্নে জামায়াতের মুখপাত্র হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “আপনি কি সেখানে ছিলেন?”

‘জ্বি, ছিলাম’, বলার পর তিনি বলেন, “আপনিও যেটা শুনেছেন, আমিও সেটা শুনেছি।”

একাত্তর নিয়েই কি তাহলে এই ক্ষমা চাওয়া হলো?- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আর কোনো বক্তব্য নাই।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মামুন আল মোস্তফা বলেন, “আমার মনে হয় না মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে ক্ষমা চেয়েছেন জামায়াত আমির। ৭১ সালের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাইলে সেটা স্পষ্টভাবেই চাইতেন।

“আমার মনে হয় ইদানীং বিভিন্ন কাজে জড়িত হয়ে গেছে জামায়াত ও তার ছাত্র সংগঠন। সেসব নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। সেগুলোর কারণেই হয়ত ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।”