ঢাকা ০৮:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় চায় বিএনপি, প্রশাসনে রদবদলের আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১২:৩৪:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
  • / 100

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি নেতাদের সাক্ষাৎ

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা নিতে হবে বলে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এ কথা জানান।

তিনি বলেন, “সরকারকে এমন ধারণা তৈরি করতে হবে যে প্রশাসন এখন নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। সচিবালয় ও জেলা প্রশাসনে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের সরিয়ে সেখানে নিরপেক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও সরকারকে নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে হবে।”

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “বৈঠকে আমরা বিচার বিভাগ থেকেও ফ্যাসিস্টদের দোসরদের অপসারণ করে নিরপেক্ষ বিচারক নিয়োগের দাবি জানিয়েছি।”

তিনি জানান, “সরকারে যদি কোনও দলীয় ব্যক্তি থাকেন, তাকেও অপসারণ করতে হবে—এ দাবি জানিয়েছি আমরা।”

এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বৈঠকে আরও ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহ উদ্দিন আহমদ।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমরা আজ প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছে এসেছিলাম কিছু রাজনৈতিক উদ্বেগ নিয়ে কথা বলার জন্য। বিশেষ করে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে, সেটিকে অর্থবহ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে এখনই অন্তর্বর্তী সরকারকে কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের আদলে যেতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট বলতে যা বুঝি, সেটিই হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা। অন্তর্বর্তী সরকারকে সেই ভূমিকায় যেতে হবে। এজন্য প্রথমেই প্রশাসনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে গড়ে তুলতে হবে।”

“বিশেষ করে সচিবালয়ে যারা এখনো আছেন এবং যাদের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তাদের সরিয়ে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিতে হবে,” বলেন ফখরুল।

তিনি আরও যোগ করেন, “জেলা প্রশাসনেও একইভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা মনে করি, সেখানে এখনও এমন কিছু কর্মকর্তা আছেন যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের স্বার্থ রক্ষা করছেন—তাদের অপসারণের কথাও আমরা বলেছি।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “পুলিশে নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে—এ বিষয়েও আমরা বলেছি।”

“একইভাবে বিচার বিভাগে, বিশেষ করে হাই কোর্ট বিভাগে যারা এখনও ফ্যাসিস্টদের দোসর হিসেবে কাজ করছেন, তাদের অপসারণ করে নিরপেক্ষ বিচারক নিয়োগ দিতে হবে। যদিও বিচার বিভাগ স্বাধীন, তবুও প্রধান উপদেষ্টা যেহেতু সার্বিক দায়িত্বে আছেন, তাই আমরা বিষয়টি তার কাছে উত্থাপন করেছি,” বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার কথাও আমরা জোর দিয়ে বলেছি। সরকারের মধ্যে যদি কোনো দলীয় ব্যক্তি থেকে থাকেন, তাকে অপসারণের দাবি জানিয়েছি—এটাই ছিল বৈঠকের মূল বার্তা।”

কোনও উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ‘না’ সূচক জবাব দেন।

নির্বাচনের আগে প্রশাসনে রদবদল হবে: প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসনের সকল রদবদল তার সরাসরি তত্ত্বাবধানে হবে। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতার ভিত্তিতেই কর্মকর্তাদের নির্বাচন করা হবে এবং নির্বাচনের আগে তাদের যথোপযুক্ত স্থানে নিয়োগ দেওয়া হবে।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

বৈঠকে বিএনপি নেতারা প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানান, যেন আওয়ামী লীগ শাসনামলে নির্বাচনি দায়িত্বে থাকা বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে বিরত রাখা হয় এবং প্রশাসনে রদবদলের সময় নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের দায়িত্ব নিরপেক্ষ থাকা। নির্বাচন একটি মহা আয়োজন। যিনি শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সক্ষম, আমরা তাকেই দায়িত্ব দেব। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে যা যা প্রয়োজন, তা আমরা করব।”

বৈঠকে পুলিশের নিয়োগ ও বদলিসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন বিএনপি নেতারা। এছাড়া সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এসব ঘটনার পেছনে অন্তর্ঘাতমূলক কারণ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান তারা।

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সম্পৃক্ততা ও ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সরকারকে অভিনন্দনও জানায় বিএনপি।

উল্লেখ্য, চলমান রাজনৈতিক সংলাপের অংশ হিসেবে বুধবার (২২ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় চায় বিএনপি, প্রশাসনে রদবদলের আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার

আপডেট সময় : ১২:৩৪:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা নিতে হবে বলে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এ কথা জানান।

তিনি বলেন, “সরকারকে এমন ধারণা তৈরি করতে হবে যে প্রশাসন এখন নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। সচিবালয় ও জেলা প্রশাসনে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের সরিয়ে সেখানে নিরপেক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও সরকারকে নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে হবে।”

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “বৈঠকে আমরা বিচার বিভাগ থেকেও ফ্যাসিস্টদের দোসরদের অপসারণ করে নিরপেক্ষ বিচারক নিয়োগের দাবি জানিয়েছি।”

তিনি জানান, “সরকারে যদি কোনও দলীয় ব্যক্তি থাকেন, তাকেও অপসারণ করতে হবে—এ দাবি জানিয়েছি আমরা।”

এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বৈঠকে আরও ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহ উদ্দিন আহমদ।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমরা আজ প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছে এসেছিলাম কিছু রাজনৈতিক উদ্বেগ নিয়ে কথা বলার জন্য। বিশেষ করে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে, সেটিকে অর্থবহ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে এখনই অন্তর্বর্তী সরকারকে কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের আদলে যেতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট বলতে যা বুঝি, সেটিই হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা। অন্তর্বর্তী সরকারকে সেই ভূমিকায় যেতে হবে। এজন্য প্রথমেই প্রশাসনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে গড়ে তুলতে হবে।”

“বিশেষ করে সচিবালয়ে যারা এখনো আছেন এবং যাদের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তাদের সরিয়ে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিতে হবে,” বলেন ফখরুল।

তিনি আরও যোগ করেন, “জেলা প্রশাসনেও একইভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা মনে করি, সেখানে এখনও এমন কিছু কর্মকর্তা আছেন যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের স্বার্থ রক্ষা করছেন—তাদের অপসারণের কথাও আমরা বলেছি।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “পুলিশে নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে—এ বিষয়েও আমরা বলেছি।”

“একইভাবে বিচার বিভাগে, বিশেষ করে হাই কোর্ট বিভাগে যারা এখনও ফ্যাসিস্টদের দোসর হিসেবে কাজ করছেন, তাদের অপসারণ করে নিরপেক্ষ বিচারক নিয়োগ দিতে হবে। যদিও বিচার বিভাগ স্বাধীন, তবুও প্রধান উপদেষ্টা যেহেতু সার্বিক দায়িত্বে আছেন, তাই আমরা বিষয়টি তার কাছে উত্থাপন করেছি,” বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার কথাও আমরা জোর দিয়ে বলেছি। সরকারের মধ্যে যদি কোনো দলীয় ব্যক্তি থেকে থাকেন, তাকে অপসারণের দাবি জানিয়েছি—এটাই ছিল বৈঠকের মূল বার্তা।”

কোনও উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ‘না’ সূচক জবাব দেন।

নির্বাচনের আগে প্রশাসনে রদবদল হবে: প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসনের সকল রদবদল তার সরাসরি তত্ত্বাবধানে হবে। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতার ভিত্তিতেই কর্মকর্তাদের নির্বাচন করা হবে এবং নির্বাচনের আগে তাদের যথোপযুক্ত স্থানে নিয়োগ দেওয়া হবে।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

বৈঠকে বিএনপি নেতারা প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানান, যেন আওয়ামী লীগ শাসনামলে নির্বাচনি দায়িত্বে থাকা বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে বিরত রাখা হয় এবং প্রশাসনে রদবদলের সময় নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের দায়িত্ব নিরপেক্ষ থাকা। নির্বাচন একটি মহা আয়োজন। যিনি শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সক্ষম, আমরা তাকেই দায়িত্ব দেব। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে যা যা প্রয়োজন, তা আমরা করব।”

বৈঠকে পুলিশের নিয়োগ ও বদলিসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন বিএনপি নেতারা। এছাড়া সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এসব ঘটনার পেছনে অন্তর্ঘাতমূলক কারণ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান তারা।

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সম্পৃক্ততা ও ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সরকারকে অভিনন্দনও জানায় বিএনপি।

উল্লেখ্য, চলমান রাজনৈতিক সংলাপের অংশ হিসেবে বুধবার (২২ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।