অধ্যাপক কলিমুল্লাহর পক্ষে ছিল না কোনো আইনজীবী, নির্দোষ দাবি করে নিজেই দিলেন বক্তব্য
- আপডেট সময় : ১০:১৫:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫
- / 255
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে আজ দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে আনা হয়। প্রথমে তাঁকে রাখা হয় আদালতের হাজতখানায়। বেলা দুইটার দিকে মাথায় হেলমেট পরিয়ে তাঁকে আদালতের এজলাস কক্ষে নেওয়া হয়।
তখন আদালতে অন্য মামলার শুনানি চলছিল। একটি বেঞ্চে চুপচাপ বসেছিলেন অধ্যাপক কলিমুল্লাহ। প্রায় ৫০ মিনিট সেখানেই তিনি অপেক্ষা করেন।
বেলা ২টা ৫২ মিনিটে তাঁর মামলার শুনানি শুরু হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম আদালতে যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “মাননীয় আদালত, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হল নির্মাণসংক্রান্ত দুর্নীতির ঘটনায় সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক কলিমুল্লাহ জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ–বাণিজ্যের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ দুদক অনুসন্ধান করছে।”
দুদকের পিপি আদালতে আরও বলেন, “অধ্যাপক কলিমুল্লাহ নজিরবিহীন দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। হলের নকশা পরিবর্তন করা হয়েছিল। ঠিকাদারকে আইনবহির্ভূতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ঋণ দেওয়া হয়। তিনি ঢাকায় লিয়াজোঁ অফিসে বসে দায়িত্ব পালন করতেন, রংপুর ক্যাম্পাসে অফিস করতেন না। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং সরকারি ক্রয়চুক্তি মানেননি।”
এ সময় মাথা নিচু করে শুনছিলেন অধ্যাপক কলিমুল্লাহ।
আত্মপক্ষ সমর্থন
আদালতে তাঁর পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। দুদকের বক্তব্য শেষ হলে তিনি নিজেই বক্তব্য রাখার সুযোগ পান। তিনি বলেন, “দুদকের পক্ষ থেকে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে, তার সূত্রপাত করেছিলেন আগের উপাচার্য। আমি কেবল সেটি অব্যাহত রেখেছি, আমার করার কিছু ছিল না।”
তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনার সরকারের আমলে আমার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছিল। আমি সেই সময়কার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছিলাম। শিক্ষাব্যবস্থায় তখন অরাজকতা ছিল। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার পর আমিও প্রতিবাদ করেছিলাম।”
অধ্যাপক কলিমুল্লাহ আদালতের উদ্দেশে অভিযোগ করেন, “আগের উপাচার্যের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক নিয়োগ–বাণিজ্য হয়েছিল। আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়কে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য। আমি দায়িত্ব পালনের সময় আমার বিরুদ্ধে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ করা হয়েছিল। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নই, ছাত্রজীবনেও রাজনীতি করিনি।”
তাঁর বক্তব্যের সময় আদালত মন্তব্য করে বলেন, “আপনি দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। আপনার উচিত ছিল দায়িত্ব থেকে সরে আসা। আমি শিক্ষকদের সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি।”
আদালতের সিদ্ধান্ত
প্রায় ৩৫ মিনিট উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালত অধ্যাপক কলিমুল্লাহকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন। সিদ্ধান্ত শুনে বিমর্ষ হয়ে পড়েন তিনি। তবুও নিজের পক্ষে কথা বলতে থাকেন। আদালত দুদককে সতর্কতার সঙ্গে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দেন।
রিমান্ডের আদেশ দেওয়ার পর তাঁকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ১০ মিনিট পর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে তাঁকে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। এ সময় তিনি বলেন, “আমি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চাই। দুদক যেন নখ-দন্তবিহীন ব্যাঘ্র হিসেবে কাজ না করে।”
বিকেল পৌনে চারটার দিকে প্রিজন ভ্যানটি তাঁকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যায়। এ সময় তাঁকে ভ্যানে চুপচাপ বসে থাকতে দেখা যায়।
গ্রেপ্তার ও মামলার প্রেক্ষাপট
৬ আগস্ট রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
গত জুন মাসে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদক মামলা করে অধ্যাপক কলিমুল্লাহসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে। মামলায় উন্নয়ন প্রকল্পের নামে প্রায় ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

















